নিউজ ডেস্ক: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের জনপ্রিয় 'উৎমাছড়া' পর্যটন স্পটে গিয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনার সাথে জড়িতরা বলছেন, 'তারা শুধু ধর্মের দাওয়াত' দিতে গিয়েছিলেন। খবর বিবিসি বাংলার।
ভিডিওতে একজনকে পর্যটন স্পটটি বন্ধ করে দেয়ার কথা বলতে শোনা গেলেও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা এখন বলছেন, 'পর্যটক আসা নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই'।
গত রোববার (৮ জুন) পর্যটন স্পটে গিয়ে যারা পর্যটকদের চলে আসতে বলেছিলেন তাদের একজন ‘যুব জমিয়ত’ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুফতি রুহুল আমীন সিরাজী। তিনি বলেন, 'ঘটনাটির সমাধান হয়েছে। পর্যটক আসুক। তবে স্থানীয়দের জন্য বিরক্তিকর কিছু যেন না হয় সেটি তদারকির অনুরোধ করেছি প্রশাসনকে'।
মুফতি রুহুল আমীন সিরাজী আরও বলেন, ‘আমাদের একটি টিম গিয়েছিলাম সেখানে ধর্মের দাওয়াত দেয়ার জন্য। আমাদের এক ভাই ভুলে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধের কথা বলেছে। পর্যটক আসবে, আমাদের আপত্তি নেই।’
কিন্তু দাওয়াত দিতে গিয়ে কেন তারা নিজেরা পর্যটকদের চলে যেতে বলেছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় পর্যটকরা আসা যাওয়ার সময় উচ্চ শব্দে গানবাজনা করেন যেটি এলাকার মানুষের কাছে বিরক্তিকর। অনেক দিন ধরেই স্থানীয় লোকজন বলছিলো আমাদের কাছে। আমরা গিয়েছিলাম যাতে কোনো অসামাজিক কার্যক্রম না হয় বা অশালীন পোশাক কিংবা মাদক সেবন এগুলো না হয়--- সে জন্য দাওয়াত দেয়ার জন্য।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার জানান, যারা পর্যটন কেন্দ্র চলবে না বলেছিলো বা পর্যটকদের চলে যেতে বলেছিলো, তারা তাদের ভুল স্বীকার করেছেন। তারা প্রশাসনকে জানিয়েছে যে তারা 'ধর্মের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন'।
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছে যে তারা শালীনতার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে কিছু কথা বলেছেন। কিন্তু সেটি এমন হয়ে যাবে তা তারা ভাবেননি। আমরা তাদের বলেছি কেউ কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দিতে পারবে না। কোনো বিষয়ে সমস্যা হলে প্রশাসনকে জানাবে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।’
বিকেলে নিজেই ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে এসেছেন জানিয়ে ইউএনও আরও বলেন, ‘তারা এলাকার মুরব্বী থেকে শুরু করে কারও সঙ্গে আলাপ না করেই এসব করেছিলো। কিন্তু পরে আমাদের বলেছে যে পর্যটক আসায় কোন সমস্যা নেই। সবাই সহযোগিতা করবে। তবে তারা কিছু বিষয় তুলে ধরেছে। সেগুলো নিয়ে আমরা পর্যটকদের সচেতন করবো।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সব পক্ষের সঙ্গে আমরা বসেছি। যারা বন্ধ করার কথা বলেছেন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। পাশাপাশি সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরাও প্রশাসনের তরফ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেব।
তার মতে, ঘটনাটি একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এলাকার জনপ্রতি নিধিসহ মুরব্বীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই ওই ব্যক্তিরা এটি করেছেন, তবে তারা তাদের ভুল স্বীকার করেছেন।
কী হয়েছিলো উৎমাছড়ায়?
https://www.facebook.com/uttorbangla/videos/708837892088133
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের চরারবাজার এলাকার 'উৎমাছড়া' পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। মূলত পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে সাদা পাথরের মেলা -এমন দৃশ্যের কারণেই এটি পর্যটকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।
ওই এলাকার বাইরে থেকেও প্রতিদিন বহু নারী-পুরুষ সেখানে বেড়াতে যান এবং তাদের অনেকেই পাথরে স্বচ্ছ পানিতে নেমে আনন্দ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। অনেকে আবার দল বেঁধে পিকআপ ও মাইক্রোবাস নিয়ে আসা যাওয়ার সময় উচ্চ শব্দে গান বাজনা করেন এমন অভিযোগও আছে।
ঈদের সময়টাতে পর্যটকদের ভিড় অনেকে বেড়ে যায় বলে জানিয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা। কিন্তু এবার ঈদের পরদিন পর্যটকদের অনেকে সেখানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন। একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের একদল ব্যক্তি সেখানে গিয়ে পর্যটকদের এলাকা ছাড়ার অনুরোধ করছেন এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
ওই ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায় যে, 'এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উৎমাছড়াকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে চলতে দেয়া হবে না এখানে মদ্যপান ও অশ্লীল কার্যকলাপের কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই দয়া করে আপনারা এখান থেকে চলে যান'।
ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। কারণ ওই এলাকাটিতে অনেকে পর্যটনের ওপরেও নির্ভরশীল। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর আসার পর জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। উপজেলা প্রশাসন ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংগঠনটির নেতাদের ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে মঙ্গলবার একটি বৈঠকে বসে।