নিউজ ডেস্ক: দেশে করোনার সংক্রমণ আবারও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটি–পিসিআর ল্যাব রয়েছে, সেখানেই এই পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে করোনার নমুনা পরীক্ষা চালু হবে।
বুধবার (১১ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ এসব তথ্য জানান।
এদিকে করোনার নমুনা পরীক্ষার প্রাথমিক তালিকায় বিভাগীয় শহর রংপুরের নাম না থাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলসহ স্থানীয়রা বলছেন- করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রেও রংপুরের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষা শুরু হলে সব বিভাগীয় শহরে এক সাথে হওয়া উচিত।
করোনা পরীক্ষার কিট না থাকার কারণে কবে নাগাদ রংপুর বিভাগে নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে তা বলতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক প্রচারণার বিকল্প নেই বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর থেকে রংপুর বিভাগে করোনা সংক্রমণের হার শূনের কোঠায় নেমে আসতে থাকে। প্রায় তিন বছর ধরে এই অঞ্চলে করোনা শনাক্তের হার শূন্যের কোঠায় রয়েছে।
বিগত সময়ে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৪ হাজার ৮৯৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৬৩ হাজার ৪৯৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯১ জনের। রংপুর বিভাগে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুরে। এ জেলায় সর্বোচ্চ ৩৪১ জন মারা গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে রংপুর জেলায়।
সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রায় তিন বছর করোনার প্রকোপ না থাকায় নমুনা পরীক্ষার কিট অনেক আগেই মেয়াদোর্ত্তীণ হয়ে গেছে। নমুনা পরীক্ষা করাতে হলে নতুন করে কিট সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমানে রংপুরের স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে করোনা পরীক্ষার জন্য কোনো কিট নেই। কিট সংগ্রহ করার পরেই পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হবে। তবে রংপুরে কবে থেকে পরীক্ষা শুরু হবে তা স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ বলতে পারছেন না।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রোকেয়া খাতুন জানান, করোনার নমুনা পরীক্ষার কিট নেই। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে ঢাকা থেকে কোনো তথ্যও পায়নি তারা। আগামী রোববার অফিস খুললে বিস্তারিত জানা যাবে।
একই কথা জানান রংপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ বাড়লেও জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়া যাবে না। আমরা আগেও করোনা মোকাবিলা করেছি। এবারও পারব। শুধু সচেতন থাকতে হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, যেসব হাসপাতালে আরটি–পিসিআর ল্যাব রয়েছে, করোনা পরীক্ষা পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কোম্পানিগুলো থেকে পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কিট আমদানির জন্য সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোকে (সিএমএসডি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা আবার চালু করা যাবে- তবে তা সীমিত পরিসরে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দু-দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।