আর্কাইভ  সোমবার ● ১৬ জুন ২০২৫ ● ২ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ১৬ জুন ২০২৫
ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ৪০৬ জন নিহত, আহত ৬৫৪

ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ৪০৬ জন নিহত, আহত ৬৫৪

ইসরায়েলে আবারও মিসাইল ছুড়ল ইরান

ইসরায়েলে আবারও মিসাইল ছুড়ল ইরান

ইসরায়েলে হাইফায় সরাসরি আঘাত হানল মিসাইল

ইসরায়েলে হাইফায় সরাসরি আঘাত হানল মিসাইল

ইসরায়েলিদের ‘গুরুত্বপূর্ণ জায়গা’ থেকে সরে যেতে বলল ইরানের সশস্ত্র বাহিনী

ইসরায়েলিদের ‘গুরুত্বপূর্ণ জায়গা’ থেকে সরে যেতে বলল ইরানের সশস্ত্র বাহিনী

রংপুরের আলুচাষিদের মাথায় হাত

সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, রাত ০১:৩৮

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: 

রংপুর নগরীর ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান স্থানীয় একটি হিমাগারে ১২০০ বস্তা আলু রেখেছিলেন। কৃষকের জমি থেকে আলু ক্রয়, বস্তাবাঁধাই, লেবার, হিমাগার ভাড়াসহ তার মোট খরচ পড়েছিল ২২ লাখ টাকা। বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করলে তার ঘরে আসবে ৮ লাখ টাকা। পুঁজি থেকে চলে যাবে ১৪ লাখ টাকা। তিনি এখন কী করবেন, এ চিন্তায় দিশাহারা। তার মতো ব্যবসায়ী আবদুর নুর, ছোবাহান মিয়াসহ অনেকেই কৃষকের কাছ থেকে আলু ক্রয় করে বেশি লাভের আশায় হিমাগারে রেখেছিলেন। এখন লাভ তো দূরের কথা, পাঁচ হাজার কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে তারা দিশাহারা। অপরদিকে কৃষক যারা হিমাগারের পাশাপাশি বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করছিলেন তাদের অবস্থা আরও করুণ। হাজার হাজার টাকা লোকসান দিয়ে তারা আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে তপ্ত আবহাওয়ার কারণে আলু পচে যাওয়ার শঙ্কায় নামমাত্র মূল্যে আলু বিক্রি করছেন। রংপুর নগরীর চিলমন এলাকার আলুচাষি গৌরাঙ্গ রায় ১২ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। হিমাগারে রাখতে না পেরে বাসায় আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। তপ্ত আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি আড়াই লাখ টাকা লোকসান দিয়ে আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। লাভের আশায় ধারদেনা করে আবাদ করেছিলেন। লাভ তো দূরের কথা, এখন লোকসান দিয়ে আলু বিক্রি করায় পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। পীরগাছা ছেচাকান্দির মজিদ আলী জানান, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আলুর আবাদ করলেও এখন লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

কৃষকরা জানান, এক দোন (২২ শতক) জমিতে আলুর বীজ লাগে ২৪ হাজার টাকার। রোপণ, সার, উত্তোলন ইত্যাদির খরচ পরে ১৯ হাজার টাকা। এক দোন জমিতে মোট খরচ হয় ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ কেজি। সে হিসেবে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৯ থেকে ২০ টাকা। হিমাগারে আলু রাখলে কেজিপ্রতি আরও যোগ হবে ৮ টাকা। সব মিলিয়ে দেখা গেছে, এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ছে ২৬-২৮ টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রতি কেজি আলুতে কৃষকদের লোকসান হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে ১০-১২ টাকায় আলু বিক্রি হলেও পাইকারিতে দাম এর অর্ধেক।

ব্যবসায়ী ও কৃষি অফিসের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে এবার আলুর আবাদ হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ হেক্টর। এবার আলুর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ২৬ টনের বেশি। এ পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, প্রতি মেট্রিক টন আলুতে ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। সে হিসাবে ৩২ লাখ মেট্রিক টন আলুতে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৭১টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের ধারণক্ষমতা সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি হিসাবে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা। কৃষকরা বেশি ফলনের আশায় সার-কীটনাশকসহ বিভিন্ন খাতে বেশি খরচ করায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বর্তমান বাজারদর হিসেবে কৃষকরা মোটা অঙ্কের লোকসান গুণছেন। সার্বিকভাবে হিসাব করলে চলতি মৌসুমে কৃষকদের কয়েক হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।

মন্তব্য করুন


Link copied