রংপুর ।। রংপুরের পীরগাছায় ভেঙে ফেলার এক মাস যেতে না যেতেই আবারও নির্মাণ করা হচ্ছে আলোচিত মেসার্স শিল্পী এন্টার প্রাইজের (এমএসবি) ইটভাটার চিমনী এবং ওয়াল। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চিমনী এবং ওয়ালের কাজ দ্রুতগতিতে চালাচ্ছেন ইটভাটা মালিক মমিনুল ইসলাম।
এর আগে (১৯ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, পীরগাছা উপজেলার বামন সর্দার গ্রামে এমএসবি ব্রিকস ইটভাটার ধোঁয়ায় ৭৮ জন কৃষকের ৪১ একর জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এ নিয়ে কৃষকদের আন্দোলনের ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশে প্রশাসন ইটভাটাটির সব কার্যক্রম বন্ধ করে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
বর্তমানে পুনরায় ভেঙে ফেলা ওয়াল ও চিমনী নির্মাণের ফলে ওই এলাকার কয়েক শতাধিক কৃষকের কপালে চিন্তার ছাপ দেখা গেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবারও অভিযোগ দায়ের করছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। তারা জরুরিভাবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জানা গেছে, পরিবশে অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন থেকে চলছিল মেসার্স শিল্পী এন্টার প্রাইজ এর (এমএসবি) ইটভাটা। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ২০২১ সালের ৩০ জন পর্যন্ত এই ভাটার অনুমোদন ছিল। তারপর আর নবায়ন করা হয়নি। হাইকোর্টে একটি মাত্র নিট করে চলছে অবৈধ ইটভাটাটির কার্যক্রম। আর এই ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে ৭৮ জন কৃষকের ৪১ একর জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
এ নিয়ে কৃষকরা আন্দোলন শুরু করে। পরে বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। সংবাদ প্রকাশের পর কৃষি অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সরেজমিন তদন্তে ৭৮ জন কৃষকের ৪১ একর জমির ফসলের ক্ষতি নিরূপণ করে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। প্রথমে ভাটা মালিক মমিনুল ইসলাম ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হলেও পরে একাধিকবার উপজেলা পরিষদে কৃষকদের ডেকে টাকা না দিয়ে টালবাহানা করেন। এ ঘটনায় গত ৪ মে কৃষকরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ করেন এবং ভাটা উচ্ছেদের দাবি জানান।
পরে (১৯ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর এক মাস না যেতেই গত কয়েকদিন থেকে ভেঙে ফেলা ইটভাটার চিমনী এবং ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করেন মালিকপক্ষ। কিন্তু নেয়া হয়নি কোন অনুমতি কিংবা পরিবেশ ছাড়পত্র। ক্ষমতার জোরেই প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাজ চালানোর অভিযোগ করছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক বাদশা মিয়া, মদন মোহন, সুশান্ত বর্মন, প্রদীপ চন্দ্র রায়, জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মালিক বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। তাই আইন-আদালত কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। তিনি প্রভাব দেখিয়ে আবারো ইটভাটা চালু করার জন্য ওয়াল (ক্লীং) ও চিমনী নির্মাণ করছেন। এই ভাটা চালু হলে কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কোনো ফসল ঘরে তোলা যাবে না।’
ইটভাটা ম্যানেজার মোনা চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। কীভাবে নির্মাণ হচ্ছে মালিক জানে। তার সাথে যোগাযোগ করেন।’ এ বিষয়ে জানতে ইটভাটা মালিক মমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে বেশকয়েকবার কলা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, পুনর্নির্মানের কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। তারপরও যদি করে তাহলে আবারো ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক নুর আলম বলেন, একটা ইটভাটা ভেঙে দেওয়ার পর তাঁরা আবার কীভাবে এই বৃষ্টির দিনে নির্মাণ করেন। আমরা আবারও অ্যাকশনে যাব।