নিউজ ডেস্ক:
দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.আক্তার হোসেন ও একজন উপপরিচালকের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। পোস্টের সাথে তিনি তিনটি হোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ডও যুক্ত করেছেন। তবে তাৎক্ষণিক বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম।
যাচাই বাছাই ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলেও হাসনাত আব্দুল্লাহ বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি। কালবেলার পক্ষ থেকে যাচাই করে দেখা গেছে, সংযুক্ত কল রেকর্ডের নম্বর ও কণ্ঠ দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেনের নয়।
‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা’ শীর্ষক পোস্টে হাসনাত লিখেছেন, আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তার ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয় আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকা পয়সার অভাব থাকার কথা না, আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান। দুদকের সর্বনিম্ন রেট নাকি ১ লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে জানতে চায়, টাকা দিবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পরে। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে। অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের ওপর। এখানে বড় অংকের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে।
কিছু না করাদের কাছে থেকেই যদি ১ লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে? দুদকের এইসব কাজকারবার এই প্রথম না। হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য ১ লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুষ দেন নাই, কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন।
কাউকে ফোন করারও দরকার নেই দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দিন। তা না করে নিরীহ লোকজনের ওপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন? ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই। হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে সেজন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে, আমরাও হেরে যাবো। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদেরকে এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?
হাসনাত আব্দুল্লাহ পোস্টের কিছুক্ষণ পরেই এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। বিবৃতিতে দুদক বলেছে, আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন। এ বিষয়ে সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, একটি প্রতারক চক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। যার সাথে দুদকের কর্মকর্তাদের কোন সম্পর্ক নেই। দুদক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ইতোপূর্বে দুদক প্রতারণা রোধে সবাইকে সতর্ক করে আসছে। যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজীর আহমেদ বলেন, ‘এটি একটি মিথ্যা অভিযোগ। দুদক এই ধরনের কাজ করে না। আমরা এর আগে এসব বিষয়ে বেশ কয়েকবার বিবৃতি ও ব্রিফিং করে সবাইকে সতর্ক করেছি। একাধিক প্রতারককে গ্রেফতার করে মামলাও করা হয়েছে। ভষ্যিতে আমরা এসব প্রতারকদের ফাঁদে যারা পা দিবে তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান করব। কারণ কেউ অপরাধ না করলে অবৈধ আর্থিক লেনদেন করবেন কেন?