আর্কাইভ  বুধবার ● ২৩ জুলাই ২০২৫ ● ৮ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২৩ জুলাই ২০২৫
মাইলস্টোন স্কুলের সেই ভবনের ওপর দিয়ে আবারও উড়ছে বিমান

স্কুলটির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন
মাইলস্টোন স্কুলের সেই ভবনের ওপর দিয়ে আবারও উড়ছে বিমান

নাজিয়াকে দাফন করছেন বাবা, মা আইসিইউতে ছেলের অপেক্ষায়

নাজিয়াকে দাফন করছেন বাবা, মা আইসিইউতে ছেলের অপেক্ষায়

রাজশাহীতে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট তৌকির

রাজশাহীতে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট তৌকির

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১

২০ জন শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়ে চিরবিদায়, মাইলস্টোনের শিক্ষিকা মেহরিনের বাড়ি নীলফামারী

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, রাত ০১:৩২

Advertisement

স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্থ হওয়ার ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থীকে প্রাণে রক্ষা করে চিরবিদায় নেয়া সেই বীরগাঁথা শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরীর বাড়ি নীলফামারী জেলায়। তিনি এ জেলার জলঢাকা পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বগুলাগাড়ী চৌধুরীপাড়া গ্রামে।

এলাকাবাসী জানান, তার বাবা মরহুম মুহিত চৌধুরী।  তিনি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা ভার্সনের কো-অর্ডিনেটর (৩য় থেকে ৫ম শ্রেণী) শিক্ষিকা ছিলেন। নীলফামারীর তার গ্রামের বগুলাগাড়ি স্কুল এ্যান্ড কলেজটিকে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ন্যায় গড়ে তোলার ইচ্ছেয় এক মাস আগে তিনি এ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন নিহত এই শিক্ষিকার স্বামী মনসুর হেলাল। স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি শোকে পাথর। তিনি জানান, মঙ্গলবার(২২ জুলাই) বাদ জোহর দুপুর ২.৩০ টায় গ্রামের বাড়ি জলঢাকার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়ায় বাবা-মার কবরের পাশে দাফন করা হবে।  

বলা যায়, একজন শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর এবং জাতির পথপ্রদর্শক। শিক্ষকের স্থান সবার উপরে, কারণ তারাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। ধর্ম গ্রস্থতে বলা আছে পিতা-মাতা পরের স্থান গুরুজনের। কঠিন মুহুর্তেও তিনি তার শিক্ষিকার দায়িত্ব ভুলেননি। দগ্ধ শরীর নিয়ে ২০ শিক্ষার্থীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তারপর তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে নেয়া হয়। অবশেষে এই লড়াইয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। 

জানা যায়, শিশুদের হাত ধরে স্কুল গেট পার করানো তার নিত্যদিনের দায়িত্ব। প্রতিদিনের মতোও সোমবার(২১ জুলাই) দুপুরে সেই স্কুল শিশুদের হাত ধরে তাদের বাবা-মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী। কিন্তু কে জানতো এটি তার জীবনের শেষ শিশুদের হাত ধরা।  মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান। এতে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন, পুড়ে যায় মাহরিনের শরীর। সেই পোড়া শরীর নিয়েই চেষ্টা করেন শিশুদের বাঁচাতে।

বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে সাতটার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবর সামাজিক মাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। শোক ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকজুড়ে নীলফামারী জুড়ে। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা আর তাঁর সাহসিকতার গল্পে কালো হয়ে যায় ফেসবুকের দেয়াল।

তার মৃত্যুতে ফেসবুকে নিজস্ব আইডিতে বেদনাময় পোস্ট করেছেন নীলফামারী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ পারভেজ প্রিন্স। তিনি লিখেছেন- ‘আপনার সাথে পরিচয় হওয়ার ১ মাস হবে। আপনার কথা বলায় মনে হয়েছিল আপনি অনেক সাহসী। আপনি আসলেই একজন সাহসী নারী। ৮০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়েও নিজের সন্তানের মতো শিক্ষার্থীদের ছেড়ে যাননি তিনি। বরং ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ বাঁচানোর উছিলা হয়ে উঠেছিলেন, নিজেও লড়াই করেছেন লাইফ সাপোর্টে। আমাদের নীলফামারীর মেয়ে ও মাইলস্টোন স্কুলের সাহসী শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী… কিছুক্ষণ আগে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আপনার জন্য রইল গভীর শ্রদ্ধা,এবং দোয়া। মহান আল্লাহ্তায়ালা আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...

অর্পিতা বিনতে জামান নামে একজন শিক্ষার্থী তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন- আমাদের নীলফামারীর গর্ব মেহেরীন চৌধুরী। অন্তত ২০ শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়ে ম্যাডাম মেহেরীন নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৮০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়েও শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন তিনি। মহান সৃষ্টিকর্তা উনাকে জান্নাত নাসিব করুন- আমিন।

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয় তার আইডিতে লিখেছেন- শিক্ষকের মর্যাদা সমাজে অনেক উচ্চে। শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর এবং জাতির পথপ্রদর্শক। শিক্ষকের স্থান সবার উপরে, কারণ তারাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। ধর্ম গ্রস্থতে বলা আছে পিতা-মাতা পরের স্থান গুরুজনের।

কঠিন মুহুর্তেও তিনি তার শিক্ষিকার দায়িত্ব ভুলেননি। দগ্ধ শরীর নিয়ে ২০ শিক্ষার্থীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তারপর তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে নেয়া হয়। অবশেষে এই লড়াইয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বাংলা ভার্সনের কো-অর্ডিনেটর (৩য় থেকে ৫ম শ্রেণী) শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী (৪২)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পরপরই ক্লাসরুম থেকে শিক্ষার্থীদের দ্রুত সরিয়ে ফেলেন মেহরিন। তাদের নিরাপদে বের করে দিতে গিয়ে নিজে আর সময়মতো বের হতে পারেননি। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনা সদস্য বলেন, “ম্যাডাম ভিতরে ঢুকে গিয়ে বাচ্চাগুলারে বের করে দিছেন, তারপর উনিই বের হতে পারেন নাই।”

মেহরিনের উদ্ধার করা শিক্ষার্থীদের একজন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছোয়া। তার বাবা সুমন বলেন, “আমরা জানি, ম্যাডাম না থাকলে আমাদের ছোয়া বাঁচত না।” ছোয়ার মামা জানান, “আমি খালি চুলপড়ে থাকতে দেখেছি, অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে দুজন আর্মি টেনে বাইরে নিয়ে আসে। অনেক খুঁজে পরে জানতে পারি, এক ম্যাডাম নাকি ছোয়াকে বের করতে সাহায্য করেছিল।”উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বলেছে, “ম্যাডাম বারবার বলছিলেন, দৌড়াও, ভয় পেও না। আমি আছি।”বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষিকা মেহরিনের সাহসিকতায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ রক্ষা সম্ভব হয়েছে।মানবিকতা,সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে রইলেন মেহরিন চৌধুরী। শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচিয়ে নিজে হারিয়ে গেলেন, একজন শিক্ষিকার এমন আত্মত্যাগ কোনোভাবেই ভোলার নয়। 

মন্তব্য করুন


Link copied