আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ৭ আগস্ট ২০২৫ ● ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ৭ আগস্ট ২০২৫

শেখ হাসিনাকে কেন আটকানো গেল না?

মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫, দুপুর ০২:২৭

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন আটকানো গেল না, তিনি কীভাবে দেশ ছাড়লেন, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

এদিকে ওই দিন শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধা দেওয়া বা আটকানোর কোনো চেষ্টা করা হয়েছিল কি না, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে মূলত ওই সময় দেশে সরকার বলে কিছু ছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগ এবং সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারের অন্য কোনো বিভাগগুলোর কোনো কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সেই সময় কোনো দিক থেকে বা কোনো কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে চলে যেতে বাধা দেওয়া বা আটকানোর কোনো চেষ্টা বা উদ্যোগ নিয়েছিল কি না, সে সম্পর্কে গত এক বছরে কিছু জানা যায়নি।

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা অবস্থান করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে করা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে। সেখান থেকে তিনি কীভাবে বের হলেন, তারও স্পষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর সেনাবাহিনীর একটি পরিবহন বিমানে করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট রেকর্ড রাখা সংস্থা ফ্লাইট রাডার ২৪ ডট কমের বরাত দিয়ে ওই সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এ তথ্য জানিয়েছিল।

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরের পর এজেএএক্স-১৪৩১ ফ্লাইটটি সবচেয়ে বেশি নজরদারিতে ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, এই ফ্লাইটেই তিনি দেশ ছেড়েছেন। এজেএএক্স-১৪৩১ কল সাইনের বিমানটি মূলত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি সি-১৩০জে হারকিউলিস।

ফ্লাইট রাডারের তথ্যানুসারে, সি-১৩০জে হারকিউলিস ৫ আগস্ট বিকেলে বাংলাদেশ থেকে রওনা হয় এবং কলকাতার দিকে যেতে শুরু করে। পরে পথ পরিবর্তন করে নয়াদিল্লির দিকে রওনা হয়। বিকেল ৫টা নাগাদ বিমানটিতে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের রাজধানী লখনৌয়ের আকাশে ছিল। পরে সেটি স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৩৬ মিনিটে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে ভারতের বিমানঘাঁটি হিন্দনে অবতরণ করে।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরদিন ৬ আগস্ট দুপুরে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় দেওয়া দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক বিবৃতিতে বলেন, পদত্যাগ ও দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই হাসিনা স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভারতে আসার ‘ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স’ চাওয়া হয়। শেখ হাসিনা সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছান।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনার দেশত্যাগ করার আগেই ভারতের সরকার ও সামরিক কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতিও ছিল। শেখ হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম এবং ভারতের আকাশসীমায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজ শেখ হাসিনার বহনকারী উড়োজাহাজটিকে কর্ডন করে নিয়ে যায়।

এদিকে ওই দিন গণভবনে দায়িত্ব পালনরত এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রথমে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে বের হতে চাননি। তখন হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা গণভবনের দিকে ছুটে আসছিল। বিষয়টি শেখ হাসিনাকে জানানো হয়। সে সময় গণভবনে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বার বার শেখ রেহানাকে চলে যেতে বলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেখ হাসিনাকে রেখে শেখ রেহানা কোনোভাবেই যেতে রাজি হননি। তিনি শেখ হাসিনাকে নিয়েই যেতে চেয়েছিলেন। কোনোভাবেই ব্যবস্থা করতে না পেরে শেষ মুহূর্তে বিদেশে অবস্থানরত সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে দিয়ে ফোন করিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়ার জন্য চেষ্টা করা হয়।

অবশেষে ছেলে-মেয়ে ও ছোট বোনের জোড়াজুড়িতে শেখ হাসিনা ভারত সরকারের কাছে সহযোগিতা চান, যেন ভারতীয় বিমানে তাকে দেশটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ভারত সরকার জানায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তারা বাংলাদেশের আকাশসীমায় ভারতীয় বিমান নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই যেকোন উপায়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে ভারতের মাটিতে এলেই তারা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। তারপর শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর কাছে দুইদিন সময় চান, কিন্তু সেনাবাহিনী তাকে জানায় মাত্র ৪৫ মিনিট সময় পাওয়া যাবে। এর বেশি সময় অপেক্ষা করা যাবে না, পরিস্থিতি নেই।

গণভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা একটি ভাষণ রেকর্ড করে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এর জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রয়োজনীয় আয়োজন নিয়ে আসা হয়েছিল। তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) কাছে খবর ছিল উত্তরা এবং শনিরআখড়া থেকে লাখ লাখ মানুষ গণভবনের দিকে আসছে। এই অবস্থায় বেঁধে দেওয়া সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই শেখ হাসিনা গণভবন ত্যাগ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে থাকলে আওয়ামীপন্থিদের সঙ্গে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ দানা বাধতে পারত। দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা রোধে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট এড়াতে তাকে ভারতে চলে যেতে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।

এ ছাড়া ভারতীয় সরকারের কৌশলগত সহায়তাও শেখ হাসিনার দেশত্যাগে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ভারত সরকার নিজের কূটনৈতিক অবস্থান রক্ষায় তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে থাকতে পারে।

শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন না করে soft exit দেওয়ার ফলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সমঝোতার সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও সন্দেহ করেন অনেক রাজনীতিবিদ।

তবে এসব অনুমান ও ধারণার বাইরে গিয়ে বলা যায়, শেখ হাসিনাকে ভারতে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছিল মূলত রক্তপাত এড়াতে।

মন্তব্য করুন


Link copied