নিজস্ব প্রতিবেদক: অবিরাম বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শুরু হয়েছে নদীর ভাটিতে তীব্র ভাঙন।
ফসলি জমিগুলো নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষকরা। উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজিব, হরিচরণ শর্মা, হয়বতখা, বিশ্বনাথ ও হাজীটারী গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের একশ একর ফসলি জমি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এসব গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার সকালে ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক দিন আগেই কৃষকরা জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছে। ধানের চারাগুলো সবেমাত্র সতেজ হয়ে সবুজ রং ধারণ করেছে। কৃষকরা আশা করছিলেন বাম্পার ফলনের। তা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। নদীগর্ভে প্রায় একশ একর এলাকা ফসলি জমিসহ বিলীন হয়ে গেছে তিস্তার গর্ভে। ক্রমাগত নদী ভাঙনে ফসলি জমি বিলীনের আশঙ্কায় কৃষকরা ধানের চারাগুলো কর্তন করে গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন।
নদীগর্ভে বিলীন হওয়া জমির মালিক আজমল হোসেন বলন, গত দুই বছর আগেও নদী ছিল অনেক দূরে। পরিকল্পিতভাবে নদী শাসন না করায় প্রতি বছর নদী ভাঙনে এলাকার ফসলি জমি, বাগান, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীর গর্ভে প্রতিবছর বিলীন হচ্ছে। ফলে কাউনিয়া উপজেলার খাদ্য শস্য উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। নদী ক্রমাগত ভাঙতে ভাঙতে এখন তার বাড়ির কাছাকাছি দূরত্বে এসেছে।
ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান নামের আরেক কৃষক বলেন, যেভাবে নদীর ভাঙন দেখা যাচ্ছে- দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই এলাকার যারা কৃষির ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে; যা দেশের ফসল উৎপাদনে ঘাটতির প্রভাব ফেলবে।
টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার ইউনিয়নের রাজিব, হরিচরণ শর্মা, হয়বতখা, বিশ্বনাথ গ্রামে তিস্তার ভাঙ্গন তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলে ৪-৫ হাজার জিওব্যাগ চেয়ে আবেদন করা হলেও বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ২৫০টি জিওব্যাগ; যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ভাঙন বন্ধ না করলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। এরই মধ্যে প্রায় শতাধিক একর জমি নদীগর্ভে গত ৬ মাসে বিলীন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিবের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘রিসিভ’ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিদুল হক বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ভাঙনরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।