শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর: প্রেম মানে না কোন বাঁধা জাতি-ধর্ম,বর্ণ,কুল-কিনারা। এমনই আরও একটি ইতিহাস সৃষ্টি করছে বাংলাদেশি প্রেমিকা এক তরুণীর প্রেমের টানে সুদূর চীন থেকে আসা প্রেমিক যুবক ইয়ং সং সং (২৬)। শুধু তাই নয়, সেই ভালোবাসার জন্য নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন তিনি। বাংলাদেশি তরুণী সুরভী আক্তারকে বিয়ে করেছেন।
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ১০ নম্বর রাণীপুকুর ইউপি’র কাজিপাড়া শিমুলতলা গ্রামে। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ায় প্রেমিক চীনা যুবককে এক নজর দেখার জন্য প্রেমিকার বাড়িতে দূর-দূরান্ত থেকে ভীড় করছে অসংখ্য উৎসুক মানুষ।
এক বছর আগে বাংলাদেশি তরুণী সুরভী আক্তারের সঙ্গে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল চীনা নাগরিক ইয়ং সাও সাওয়ের। মোবাইলের গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে চলতে থাকে কথা-বার্তা। আস্তে আস্তে সেটি রূপ নেয় ভালোবাসায়। আর সেই ভালোবাসার টানে বাংলাদেশের দিনাজপুরে এসেছেন চীনা নাগরিক ইয়ং সাও সাও (৩৬)।
দম্পতি এখন দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার কাজীপাড়া শিমুলতলী এলাকায় বসবাস করছেন। সুরভী আক্তার (১৯) ওই এলাকার নুর হোসেন বাবুর বড় মেয়ে। আর ইয়ং সাও সাও (৩৬) চীনের জিয়াংশু সিটির বাসিন্দা মৃত ইয়াং শি ও লিও ট্যাংহু দম্পতির ছেলে।
৪ আগস্ট (সোমবার) ইয়ং সাও সাও বাংলাদেশে আসেন। এরপর নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুরভীকে বিয়ে করেন। শনিবার (৯ আগস্ট) স্বামীকে নিয়ে নিজ বাসায় আসেন সুরভী।
স্থানীয়রা জানান, চীনা যুবক ইয়ং সং সং পেশায় একজন নির্মাণ কর্মী। তার বাড়ি চীনের তাইকো জিয়াংসু এলাকায়। তার বাবা মৃত ইউয়ান সিকি এবং মা লিউ ফেনহং। প্রায় ১ বছর আগে কাজিপাড়া শিমুলতলা গ্রামের অটোচালক নুর হোসেনের (বাবু) মেয়ে সুরভী আক্তারের (১৯) সাথে ভার্চুয়াল হ্যালো ট্যাক অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের দু’জনের পরিচয় হয়। এরপর ভার্চুয়াল যোগাযোগের মাধ্যমে দু’জনের মধ্যে শুরু হয় ফ্রেন্ডশিপ থেকে রিলেশনশিপ। একপর্যায় প্রেমিক যুবক ইয়ং সং সং গত ৪ আগস্ট সুদূর চীন থেকে প্রেমিকা সুরভী আক্তারের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসে। সুরভীরা দুই বোন। মা সাথী আক্তার একজন গৃহিণী।
সুরভীর বাবা-মা ও পরিবারের লোকজন জানান, চীন থেকে আসা যুবকের পরিচয় ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করা সব কিছু ঠিক ঠাক দেখে সুরভীর সাথে তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশপাশ সহ দূর-দূরান্তের নারী-পুরুষ ও শিশু-বয়স্ক সবাই এসেছেন চীনা জামাইকে দেখার জন্য। চীনা নাগরিককে নিজ গ্রামের জামাই হিসেবে দেখে খুশি গ্রামের সাধারণ মানুষ। সবার মধ্যে আগ্রহ, কেউ কেউ কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ইয়ং মোবাইলে ট্রান্সলেট করে তার উত্তর দিচ্ছেন। কেউ কেউ সেলফি ও ভিডিও করছেন। চীনা জামাই ও বাংলাদেশি মেয়ের মুখে হাসি আর খুশির ঝলক। আদর আর আপ্যায়ন যেন কমতি নেই কিছুতেই।
সুরভী আক্তার বলেন, হ্যালো ট্যাগ নামে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে আমাদের পরিচয় হয়। সেখানে আস্তে আস্তে আমাদের কথা চলে, পরিচয় রূপ নেয় ভালোবাসায়। আমাদের এই সম্পর্ক এক বছর ধরে। পরে সে বাংলাদেশে এসে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি তাকে জানাই, যদি আমার ধর্ম গ্রহণ করতে পারো তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছি। পরে সে বাংলাদেশে আসে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এখন আমি তাকে বিয়ে করেছি। আমার পরিবার ও এলাকাবাসী অত্যন্ত খুশি।
সুরভীর ছোট বোন রিয়া আক্তার বলেন, আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার দুলাভাই চীনের। এটা আমার কাছে গর্ব করার মতো। কারণ আমার বোনের ভালোবাসার টানে বাংলাদেশ এসে আমার বোনকে বিয়ে করেছেন। আমি দুলাভাইয়ের সঙ্গে মোবাইলে ট্রান্সলেট করে কথা আদান-প্রদান করি। আমার পরিবারের সবাই খুশি হয়েছি।
সুরভীর বাবা নুর হোসেন বাবু বলেন, আমার দুই মেয়ে। তারা মায়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকে। আমার বড় মেয়ের সঙ্গে চীনা নাগরিকের পরিচয় হয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে। তারা একে অপরকে পছন্দ করেছে। বাংলাদেশে এসে চীনা জামাই আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। ৯ আগস্ট আমি তাদেরকে ঢাকার গাজীপুর থেকে দিনাজপুরে নিয়ে এসেছি।
সুরভীর আত্মীয় নাসিমা খান বলেন, এর আগে আমরা টিভিতে দেখেছি বিদেশি ছেলে অথবা মেয়ে বাংলাদেশে প্রেমের টানে এসে বিয়ে করেছে। তখন অনেক ভালো লাগতো বিষয়গুলো। কিন্তু এটি যে আমার আত্মীয়ের সঙ্গে ঘটবে এটি কখনও ভাবিনি। সুরভী আমাদেরকে বিষয়টা জানিয়েছে, আমরা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছি।
স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বিদেশি জামাই আমাদের ভাষা বোঝে না, আমরাও তার ভাষা বুঝি না। সে মোবাইলে কথা বলাবলি (গুগল ট্রান্সলেট) করছে। তারা সুখে জীবনযাপন করুক এই দোয়া করি।
আতিউর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় বিদেশি জামাই। বিষয়টি অবশ্যই ভালো এবং গর্ব করার মতো। ইতিমধ্যে অনেকে আসছেন, দেখছেন, কথা বলছেন। ভালো লাগছে।