স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ হঠাৎ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে টেলিফোনে খবর আসে- ঢাকা থেকে সৈয়দপুরগামী একটি ফ্লাইটে বোমা রাখা আছে। তারপর হুলুস্থুল পড়ে যায় নীলফামারী সৈয়দপুর বিমানবন্দরে। খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি, ফায়ার সার্ভিস, এপিবিএন, র্যাব, বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর, পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং মেডিকেল টিম সহ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর কাছে। এরপর বিভিন্ন সংস্থার প্রায় দুই শতাধিক সদস্যের অংশগ্রহণে প্রায় ৫০ মিনিটের চেষ্টায় ওই এয়ারক্রাফট থেকে বোমা সদৃশ বস্তুটি উদ্ধার করেন বোম ডিসপোজাল ইউনিট। পরে বোমা নিষ্ক্রিয় করেন তারা। এ সময় এয়ারক্রাফটটিকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখেন অন্যান্য সদস্যরা। এ সময় এক বিমান যাত্রী গুরুত্ব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বিমান থেকেও উদ্ধার করা হয়। বিমানবন্দরে মেডিকেল টিম অসুস্থ যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। এরপর লালমনিরহাট থেকে নিয়ে আসা হয় বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার। সেখানে অসুস্থ সেই যাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সিএমএস এ প্রেরণ করা হয়।
বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয় করার এ মিশন শুরু হয় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে। শেষ হয় বেলা দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে। এভাবেই বৃহস্পতিবার (২১ আগষ্ট) সৈয়দপুর বিমানবন্দরে মহড়া করা হয়েছে। মূলত বিমানবন্দর নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের অংশগ্রহণে বাৎসরিক নিরাপত্তা মহড়া ছিল এটি। এদিন সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ট্যাক্সি ক্যাব ও রানওয়ের টারমার্কের সম্মুখে এ মহড়ার আয়োজন করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি এক্সারসাইজ (বিমানবন্দর নিরাপত্তা অনুশীলন) ২০২৫ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল দপ্তরের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক। এই মহড়ার নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমোডোর মোঃ আশিক ইকবাল।
প্রধান অতিথি বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, বিভিন্ন সময়ে এভসেক সদস্যগণ আইকাওর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মহড়া বাস্তবায়ন করেছেন। প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কিছু সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই জন্য দরকার প্রশিক্ষণ ও মহড়া। সিভিল অ্যাভিয়েশনের নির্দেশনা হচ্ছে, প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে মহড়ার মাধ্যমে সক্ষমতা নিশ্চিত করা। আজ মাত্র ৫০ মিনিটের মধ্যে আমরা কার্যক্রম শেষ করতে পেরেছি, এটা খুবই ইতিবাচক বিষয়। সবাই সম্মিলিতভাবে দ্রুত কাজ করলে পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলা করা সম্ভব, সেটি প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালে বিমানবন্দরে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। জাপান এয়ারলাইন্সের একটা বিমান হাইজ্যাক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিল। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, আইকাওর কিছু গাইডলাইন রয়েছে। আমরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় যে ব্যবস্থা নেব সেটা আইকাও'র নির্দেশনা মতো হচ্ছে কিনা। মহড়ার প্রথমে যারা অংশীজন আছেন তারা এ বিষয়ে অবহিত থাকতে হবে। কার কি কর্তব্য, তা নির্ধারণ করা থাকতে হবে। যেকোনো জরুরী মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। জনবলকে প্রশিক্ষিত করতে হবে।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, এ ধরনের মহড়া শুধু দুর্বলতাগুলো শনাক্ত করে না। বরং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করে। সম্মানিত যাত্রীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হয়। মহড়ার সফলতা, সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দায়িত্বশীলতার এটি দৃষ্টান্ত। এমন অনুশীলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনভিপ্রেত ঘটনার দ্রুত ও কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব। অংশিজনদের প্রস্তুতি ও দক্ষতা প্রত্যক্ষ করে প্রধান অতিথি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে চাইছি। বিমানবন্দর যাত্রীদের সেবার মাধ্যমে আমাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগও এগিয়ে নিতে হবে। অনুষ্ঠানের অনসীন কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক একেএম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া। এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বেবিচকের সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর আবু সাঈদ মেহবুব খান।