নিজস্ব প্রতিবেদক: রংপুরের শ্যামপুর ও দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল এলাকার আখ চাষিদের স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে। এই দুটি চিনিকলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আখ রোপণের অনুমতি দিয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়। ওই অনুমতিতে চিনিকল ঘিরে আশার আলো দেখা দিয়েছিল স্থানীয়দের মাঝে। অনুমতির প্রায় ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থাৎ অর্থ ছাড় দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন বলছে, অর্থ ছাড়ের জন্য একাধিকবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থ ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ফলে চিনিকল এলাকার চাষিদের আখ রোপণ স্বপ্নই থেকে যাবে। কারণ, সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় আখ রোপণের মৌসুম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার রংপুরের শ্যামপুর সুগারমিল, পাবনা সুগারমিল, পঞ্চগড় সুগারমিল, সেতাবগঞ্জ সুগারমিল, রংপুর সুগারমিল ও কুষ্টিয়া সুগারমিলে চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। সে সময় সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যেই কারখানাগুলো আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানালেও পাঁচ বছরে চিনিকলগুলো চালুর কোনো
উদ্যোগ নেয়নি বিগত সরকার। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধ চিনিকল চালু করতে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে। সেই অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার চিনিকল এলাকায় আখ চাষের অনুমতি দেন। প্রথমে শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল এলাকায় আখ চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্য চারটি চিনিকল পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে-এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ আখ চাষের অনুমতি পেলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি শ্যামপুর চিনিকলে একজন এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমডি নিয়োগের পরে চিনিকল এলাকার চাষিরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কারণ, আখ রোপণের উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে আখ রোপণ করতে না পারলে চাষিদের আবারও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
ছয় চিনিকল টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের পরে শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল এলাকায় আখ চাষের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু আখ চাষ করতে যেসব প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার তার কিছুই এখন পর্যন্ত হয়নি।
তিনি বলেন, বন্ধ চিনিকল চালু করতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দিলে চিনিকল এলাকায় আখ চাষ করা শুরু হবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও অর্থ ছাড়ের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে আখ চাষকে ঘিরে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ, আখ রোপণের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন উপমহাব্যবস্থাপক (অর্থ) ইশতিয়াক হোসেন রাজীব বলেন, প্রায় ৫-৬ মাস আগে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এর পরে নতুন চেয়ারম্যান যোগদানের পরে সম্প্রতি আবারও অর্থ ছাড় চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত অর্থ ছাড় দেয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দিলেই বন্ধ চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।