আর্কাইভ  শনিবার ● ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ● ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজনীতি এখন ভোটের মাঠে

► ঘরে ঘরে ছুটছেন প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি
► গ্রাম থেকে শহরে চলছে সভাসমাবেশ মিছিল
রাজনীতি এখন ভোটের মাঠে

আসনভিত্তিক ছবিসহ ভোটার তালিকা ছাপাতে ইসির নির্দেশ

আসনভিত্তিক ছবিসহ ভোটার তালিকা ছাপাতে ইসির নির্দেশ

দেশের কল্যাণে ঐকবদ্ধ না হলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে: তারেক রহমান

দেশের কল্যাণে ঐকবদ্ধ না হলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে: তারেক রহমান

ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীর তথ্য চেয়ে ডিএমপির অনুরোধ

ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীর তথ্য চেয়ে ডিএমপির অনুরোধ

আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ‘হেনস্তা’

ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদকের আচরণ ছাত্রলীগের কথা মনে করিয়ে দেয়: শিক্ষক নেটওয়ার্ক

শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, রাত ০৯:১৩

Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী কয়েকজন শিক্ষককে ‘হেনস্তা’ করার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

প্লাটফর্মটি বলছে,‘হেনস্তায়’ নেতৃত্ব দেওয়া ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি জুবায়েরের ভাষা ও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ছাত্রলীগের কথা মনে করিয়ে দেয়।

একইসঙ্গে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে হয় সে দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। আইনগত ব্যবস্থা নিতে হলে সে দায়িত্ব বাংলাদেশ পুলিশের। শিক্ষার্থীদের বা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নয় বলেও জানিয়েছে প্লাটফর্মটি।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) নিজেদের ফেসবুকে প্রেস টিম থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক আওয়ামীপন্থী শিক্ষক আ ক ম জামাল উদ্দিনের একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে তারা অধ্যাপক জামাল উদ্দিনসহ যেসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের হুমকি, আদেশ-নির্দেশ দেবার বা প্রকাশ্যে সমর্থন দেবার অভিযোগ আছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, অভ্যুত্থানের দেড় বছর পরে ছাত্ররা দলবেঁধে শিক্ষককে আক্রমণ করছে, ধাওয়া করছে, গায়ের জামা ছিনিয়ে নিচ্ছে, এগুলো সম্পূর্ণ বেআইনি আচরণ। যখন দেখি এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডাকসুর এক নির্বাচিত প্রতিনিধি, এটা আরও দুর্ভাগ্যজনক। ডাকসুর পদবিকে ব্যবহার করে দাপট দেখানো চলবে না। কারণ তা দীর্ঘমেয়াদে অনেক গভীর কর্তৃত্বপরায়ণতার সূচনা ঘটাতে সক্ষম।

এতে আরও বলা হয়, একই ডাকসু নেতাকে আমরা এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক আচরণ করতে দেখেছি, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষকের জন্য অসম্মানজনক ও মানহানিকর। প্রশাসনের নীরব সমর্থন ডাকসু প্রতিনিধি এ বি জুবায়েরকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ বি জুবায়েরের ভাষা ও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ছাত্রলীগের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা দেখেছি, হলগুলোতে প্রশাসন নয়, বরং ছাত্রলীগ একই কায়দায় কাউকে কাউকে 'অমুকে শিবির' বলে মেরে -ধরে ফোন চেক করে থানায় দিত, 'অমুক জায়গায় শিবির গোপনে মিটিং করছে' দাবি করে পিটিয়ে পুলিশে দিতো। ছাত্রলীগের ওই আচরণকে যেমন আমরা ফ্যাসিবাদ বলি, এ ডাকসু সম্পাদকের আচরণকে কেন ফ্যাসিবাদী বলব না?

তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এ বি জুবায়েরের এ গুন্ডামির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তবে তারা তাদের মেরুদণ্ডহীনতা ও জুবায়েরের অপরাধের রক্ষক বলে নিজেদের প্রমাণ করবে। এর আগেও সাধারণ হকারদের সঙ্গে গুন্ডামি করেছেন জুবায়ের। প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে  ছাত্রদের ব্যবহার করে 'বিচার' চালু করছেন, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

এ সমসয় তারা তিনটি দাবি করেন, দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. অধ্যাপক জামাল উদ্দিনসহ যেসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের হুমকি, আদেশ-নির্দেশ দেবার বা প্রকাশ্যে সমর্থন দেবার অভিযোগ আছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ২.  কালক্ষেপণ না করে, চব্বিশের ৫ আগস্টের পর থেকে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সব নিপীড়নের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে। ৩. এবি জুবায়েরসহ শিক্ষক হেনস্থায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক জামাল উদ্দিনের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,  জামাল উদ্দীন ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ গঠন করে তিনি ছাত্রদের দিয়ে গুন্ডামি করাতেন। শিক্ষক মহলেও তিনি গুন্ডামিই করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খানকে খুনের হুমকি দেওয়াসহ আরও অনেক কাণ্ড তিনি আওয়ামী আমলে করেছেন, যা নিয়ে তিনি সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রে থাকতেন।

‘২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেনের বক্তব্যকে খণ্ডিত করে প্রচার করে তার বিরুদ্ধে নানা হুমকি দেওয়াসহ অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জীবন তিনি নরকতুল্য করে তুলেছিলেন। সহকর্মীর নাক ভেঙে দেওয়া, পবিত্র কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে হাসিনাশাহীকে কেন টিকিয়ে রাখতে হবে বা নির্বাচন ছাড়াই হাসিনাশাহীকে ক্ষমতায় রেখে দেওয়ার মতো নানা মন্তব্য করে তিনি আলোচনার কেন্দ্রে থাকতেন।’

এতে আরও বলা হয়, জুলাই আন্দোলনেও তার ভূমিকা ছিল ভয়াবহ দমন ও নিপীড়নমূলক। জামাল উদ্দিন আন্দোলনকারীদের 'ব্রাশ ফায়ার' করার হুমকি দিয়েছেন, বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাবগুলো দখল করে রেখে সেখান থেকে আন্দোলনের পক্ষের ছাত্রদের বহিষ্কার করেছেন। পরবর্তীতে জুলাই মাসেই শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে পোস্ট করে প্রতিরোধ গড়া শুরু করলে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন বলেও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন। ধর্ষণের শিকার নারীর পরিচয় প্রকাশ দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও তিনি কেবল তার বিরুদ্ধে পোস্ট দেবার অপরাধে এরকম একজন শিক্ষার্থীর পরিচয় প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং সরাসরি তিনি হত্যাকাণ্ডের মতো ফৌজদারি অপরাধে উসকানি দিয়েছেন। এতসব প্রমাণসহ সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে সত্যানুসন্ধান কমিটির কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তবে এতসব প্রমাণ থাকার পরও ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত তার বিষয়ে অভিযোগ তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। আর অভিযোগ যেহেতু তদন্তাধীন, কাজেই বিচার হতে হবে আইনি প্রক্রিয়ায়। নানা অভিযোগেই জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে তার বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে হয় তবে সেই দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, আর যদি আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয় তবে সেই দায়িত্ব বাংলাদেশ পুলিশের। শিক্ষার্থীদের বা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৪ সালে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ওপর লীগের গুন্ডাদের হামলা দেখেছি আমরা, দেখেছি শ্রমিক আন্দোলনে সংহতি জানাতে যাওয়া শিক্ষক সামিনা লুৎফার ওপরে আক্রমণ, দেখেছি শহীদ মিনারে কোটা আন্দোলনে সংহতি জানাতে যাওয়া অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ও তানজিম উদ্দিন খানকে ছাত্রলীগের হেনস্থার নিকৃষ্ট উদাহরণ। আজ এত বড় ফ্যাসিস্ট হটিয়ে পাওয়া ক্যাম্পাসে একজন নির্বাচিত শিক্ষার্থী একই রকমভাবে ভিন্নমতের শিক্ষককে হামলা ও হেনস্থা করছেন, যা আমাদের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবেশের বিরুদ্ধে বিশাল আঘাত।

মন্তব্য করুন


Link copied