নিউজ ডেস্ক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনীতি এখন চলে গেছে ভোটের মাঠে। বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া ২৭৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বাকি ২৭ আসন থেকে কিছু আসন আন্দোলনের সঙ্গীদের ছাড় দেবে। এ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসবে বিএনপি। তবে সবার আগেই নির্বাচনি মাঠে নেমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত ৩০০ আসনের প্রার্থীরা। অবশ্য শরিক দলগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সমঝোতার ভিত্তিতে নিজেদের ঘোষিত কিছু আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করবে জামায়াত। এ ছাড়া আলোচিত নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার পরিষদের সঙ্গে নির্বাচনি জোট করে প্রচারণার মাঠে সরব। এদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের প্রতিনিধি উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এরমধ্যে ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় প্রতিদিন গঠিত হচ্ছে নির্বাচনি জোট। দলগুলোর প্রাথীরা গ্রাম থেকে শহরে সভা, সমাবেশ, মিছিলের পাশাপাশি ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে দোয়া ও ভোট চাইছেন, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষিত হয়েছে।
তাই রাজনীতি এখন ছড়িয়ে পড়েছে ভোটের মাঠে। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বল এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, মূলত প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা এবং পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তফসিল ঘোষণার পর সারা দেশে নির্বাচনি আমেজ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনি মাঠে ভোটের উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে। সময় যত গড়াবে এটি আরও বাড়বে। এবার সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণা পর ভোট নিয়ে যেটুকু সংশয় ছিল তা-ও এখন আর নেই। দলগুলো মনোযোগী হয়েছে ভোটের প্রচারে। মাঠের তৎপরতায় রাজনীতিতে চলে এসেছে ভোটের আমেজ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। তবে সমমনা দলগুলোর জন্য বিএনপি এখনো কোনো আসন ছাড় না দেওয়ায় দলগুলোতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির শরিকরা নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও করেছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় দলটির বিভিন্ন কার্যক্রমসহ দোয়া মাহফিলেও যোগ দিচ্ছেন শরিক দলের নেতারা। আশা করা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহেই এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছতে পারবে। আজ বিএনপির সঙ্গে আসন বণ্টন বিষয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আট দলের পক্ষেও একক প্রার্থী দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে সরব রয়েছে। ফলে পূর্বে ঘোষিত জামায়াতের ৩০০ আসনের মধ্যে বেশ কিছু আসনে পরিবর্তন আসতে পারে সহসাই। তবে এ প্রক্রিয়াকে জামায়াত জোট না বলে নির্বাচনি সমঝোতা বলছে। এই নির্বাচনি সমঝোতায় জামায়াতের সঙ্গে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলাম পার্টি। নির্বাচনি এই সমঝোতায় ভবিষ্যতে আরও বেশ কিছু দল তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। এই সমঝোতায় সব দলের পক্ষে একজন প্রার্থী থাকবেন। তবে একক প্রার্থী নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি দলের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। এ ছাড়া জুলাই গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শরিক তিন দলের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। বৃহত্তর স্বার্থে সংস্কারের পক্ষে এবং উদার গণতান্ত্রিক ধারায় যেসব দল বিশ্বাসী তাদেরই বেছে নিতে চাইছে তারা। এই জোট থেকে নির্বাচনি মাঠে বিএনপি ও জামায়াত দুই দলকেই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এমনকি বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের যোগ্য ও বিদ্রোহী প্রার্থীরাও তাদের টর্গেটে রয়েছেন।
জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও জাতীয় পার্টি-জাপার একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বেও নতুন নির্বাচনি জোট গঠিত হয়েছে। নাম জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট। দলটির নেতারা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার লক্ষ্যে মাঠে রয়েছেন।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে ৯টি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও বামপন্থি রাজনৈতিক দল একযোগে ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন বৃহত্তর জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এই জোট যুগপৎ আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সম্মিলিতভাবে অংশ নেবে। এই জোটে রয়েছে গণতান্ত্রিক জোটের ছয় শরিক দল-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও বাসদ (মার্কসবাদী)। শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ এবং প্রয়াত বামপন্থি নেতা পংকজ ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠিত ঐক্য ন্যাপ। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার শরিক চারটি দলের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মাহবুব) নতুন জোটে যুক্ত হতে সম্মতি দিয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালের নেতৃত্বে ১৫টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে পূর্বগঠিত প্রগতিশীল ইসলামী জোট পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্তভাবে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান। তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।