আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ● ৪ পৌষ ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৩ বছর বয়সে বাবার সাথে নির্বাসিত জাইমা ফিরছেন দেশে

১৩ বছর বয়সে বাবার সাথে নির্বাসিত জাইমা ফিরছেন দেশে

৫ বছরে জীবিত না ফিরলে ‘গুম’ ঘোষণা করতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল

৫ বছরে জীবিত না ফিরলে ‘গুম’ ঘোষণা করতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল

দেড়যুগ পর সুখবর পেলেন ২৭তম বিসিএসের ৬৭৩ জন

দেড়যুগ পর সুখবর পেলেন ২৭তম বিসিএসের ৬৭৩ জন

ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

জন্মের পর শিশু কেন কাঁদে, হাসে কেন পরে?

বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, বিকাল ০৭:৪৪

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: শিশু জন্মের পরেই কেঁদে ওঠে। একরত্তির কান্নার আওয়াজ পেলেই নিশ্চিন্তে হাসি ফোটে চিকিৎসক ও পরিবারের সবার মুখে। পৃথিবীর আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে নবজাতক কেন কাঁদে, তার কি বৈজ্ঞানিক কোনো কারণ আছে? জন্মেই শিশু হাসছে— এমনটি কখনো হয় না কেন? 

মা-বাবারা অনেক সময়েই ভয় পান যে, শিশু এত কাঁদছে কেন। কোনো সমস্যা হলো কিনা। আসলে তা নয়; মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে প্রথম বাইরের আলো-বাতাসের সংস্পর্শে আসামাত্র শিশুর শরীর ও মস্তিষ্কে নানা বদল ঘটতে থাকে। তার বহির্প্রকাশ হয় একটিমাত্র অভিব্যক্তিতেই— সেটি হলো কান্না। সদ্যোজাত যদি জন্মানোর পর না কাঁদে, বরং তাহলেই মুশকিল। সে ক্ষেত্রে নানা রকম জটিল ও স্নায়বিক রোগের আশঙ্কাই করেন চিকিৎসকরা।

জন্মানোর পর প্রথম কান্নার অর্থ হলো— শিশুর শ্বাস নেওয়া। শুনলে অবাকই লাগবে। আসলে মাতৃগর্ভে শিশুর ফুসফুস যখন তৈরি হতে শুরু করে, তখন তার মধ্যে ‘অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড’ জমা হয়। এই তরলের কাজ হলো পেশি, ফুসফুসসহ শিশু নানা অঙ্গের বিকাশ ঘটানো, প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা। এই তরলের মাধ্যমেই শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস চলে। সে কারণে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

বাইরের আঘাত থেকে বাঁচাতেও সাহায্য করে এই তরল। জন্মের পর ফুসফুস পুনঃগঠনের পর্যায়ে এই তরলটি ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায়। শিশু যখন কাঁদে, তখন এই তরল ফুসফুস থেকে বার হয় এবং প্রথমবার বাইরের অক্সিজেনসমৃদ্ধ বাতাস শিশুর ফুসফুসে প্রবেশ করে। তা ছাড়া বাইরের বাতাস ঢুকে ফুসফুস প্রসারিত হয়। বায়ুথলিগুলো খুলতে থাকে। ফলে সামান্য অস্বস্তিও হয় শরীরে। সে কারণেও শিশু কাঁদতে থাকে।

দ্বিতীয় কারণ হলো— শিশুর শরীরে রক্ত সঞ্চালন ও হৃৎস্পন্দনের হার নিয়ন্ত্রিত হয় কান্নার মাধ্যমে। শিশু যখন জন্মেই কেঁদে ওঠে, তখনই তার সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। আর কান্না শিশুর পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করে, যা তাকে প্রথমবার মাতৃদুগ্ধ পানের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

শিশু জন্মের পরেই কেন কাঁদে, তার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মস্তিষ্কের গঠন। কান্না ও হাসির মতো আবেগ মস্তিষ্কের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যেহেতু নবজাতকের মস্তিষ্কের সার্বিক বিকাশ ধীরে ধীরে হয়, তাই আবেগগুলোর প্রকাশও একে একে হতে থাকে। আর কান্না নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের নিচের অংশ বা ব্রেনস্টেম এবং অ্যামিগডালা। জন্মের পরে এই দুটি অংশ বিকশিত থাকে। ফলে কান্নার অভিব্যক্তিরই প্রকাশ পায় প্রথমে।

এ ছাড়া হাসি কিংবা অন্যান্য সামাজিক প্রতিক্রিয়াগুলো তৈরি হয় মস্তিষ্কের ওপরের অংশ সেরিব্রাল কর্টেক্সে। ওই অংশটির সম্পূর্ণ বিকাশ ধীরে ধীরে হয়। শিশু যতই বাইরের পরিবেশকে চিনতে থাকে, তার চারপাশের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে, মুখচেনা শুরু হয়, ততই ওই অংশের গঠন সম্পূর্ণ হতে থাকে। 

শিশু জন্মের দেড় থেকে দুই মাস পর হাসতে শুরু করে। আবার হাসিরও ধরন আছে। এই যেমন— ‘রিফ্লেক্স স্মাইল’। জন্মের পর ঘুমের মধ্যে শিশুকে হাসতে দেখা যায়। সেটি আসলে পেশির সংকোচন ও প্রসারণের কারণে হয়। আর দ্বিতীয়টি হলো— ‘সোশ্যাল স্মাইল’। শিশু যখন মানুষকে চিনতে পারে এবং কোনো কথা বা আওয়াজ শুনে হেসে ওঠে। এই হাসির প্রকাশ ঘটে অনেক পরে। হাসির সময়ে মুখের পেশি কীভাবে নড়বে, হাসির আওয়াজ কেমন হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স অঞ্চল। সেই অংশটির বিকাশ অনেক পরে হয়।

আর শিশু যদি জন্মের পর পরই কেঁদে না ওঠে, তাহলেই গন্ডগোল। চিকিৎসকরা বলেন, সেটি ‘পেরিনাটাল অ্যাসফিক্সিয়া’র লক্ষণ হতে পারে। এতে শিশুর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছায় না। ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, খিঁচুনি হয় এবং জীবন বিপন্ন হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হয়ে ‘হাইপক্সিক-ইস্কেমিক এনসেফেলোপ্যাথি’ হতে পারে শিশুর। যে কারণে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে।

মন্তব্য করুন


Link copied