আর্কাইভ  রবিবার ● ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ● ৭ পৌষ ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
সুদানে নিহত ৬ শান্তিরক্ষীর জানাজা সম্পন্ন, দাফনের জন্য নেয়া হবে গ্রামের বাড়িতে

সুদানে নিহত ৬ শান্তিরক্ষীর জানাজা সম্পন্ন, দাফনের জন্য নেয়া হবে গ্রামের বাড়িতে

হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে পঞ্চগড়, বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ

হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে পঞ্চগড়, বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ

তারেক রহমানের ফ্লাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো দুই কেবিন ক্রু

তারেক রহমানের ফ্লাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো দুই কেবিন ক্রু

বিদ্রোহী নজরুলের পাশে সমাহিত বিপ্লবী হাদি

বিদ্রোহী নজরুলের পাশে সমাহিত বিপ্লবী হাদি

বেরোবির আবাসিক হলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা, ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন

রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, দুপুর ১২:২৩

Advertisement

বেরোবি প্রতিনিধি: জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাস থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা বিতাড়িত হলেও তাদের অনেক কর্মী এখনো আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসে সক্রিয়ভাবে অবস্থান করছেন। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে নিরাপত্তা শঙ্কা।
 
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সিট বাতিল করা হলেও সক্রিয় ও উগ্র কর্মীদের সিট এখনো বহাল রয়েছে। ফলে তারা হলে নির্বিঘ্নে অবস্থান করে প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
 
শহীদ মুখতার ইলাহী হল সূত্রে জানা গেছে, হলের ৪০৫ নম্বর কক্ষে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মী রায়হান কবির ও রনি আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে অন্যের সিট দখল করে অবস্থান করছিলেন। সম্প্রতি ওই কক্ষে বৈধভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা নতুন শিক্ষার্থীদের উঠতে বাধা দেন। এ সময় তারা অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের সাবেক এক শিক্ষার্থী আমিনুলকে কক্ষে রাখেন। পরে হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চার দিন পর বৈধ সিটপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা কক্ষে উঠতে সক্ষম হন।
 
এ ঘটনায় নতুন অ্যালটমেন্ট পাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। গভীর রাতে উচ্চস্বরে মোবাইল ব্যবহার, কথা বলা, ফ্রি ফায়ার গেম খেলা এবং ভিডিও কলে উচ্চ শব্দে প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলার মতো অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
 
ছাত্রলীগ আমলে বিভিন্ন মিছিল ও কর্মসূচিতে রায়হান কবিরকে প্রথম সারিতে দেখা গেছে বলে জানা যায়। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনের সময় ১১ জুলাই ছাত্রলীগের মিছিল এবং ১৬ জুলাই আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের দিনেও তাকে ছাত্রলীগের সঙ্গে দেখা গেছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে তার একাধিক ছবি সামাজিক মাধ্যমে রয়েছে। প্রথমদিকে জুলাই হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত তালিকায় তার নাম থাকলেও পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে তা বাদ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
 
অন্যদিকে, রনি আহমেদকেও ছাত্রলীগের একাধিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে ছাত্রলীগের মিছিলের প্রথম সারিতে তাকে দেখা যায়। রায়হান কবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এবং রনি আহমেদ মার্কেটিং বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
 
বিষয়গুলো জানাজানি হলেও তারা এখনো ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। পাশাপাশি জুলাই হামলার অভিযুক্ত অনেক শিক্ষার্থী শাস্তি শেষে পুনরায় ক্লাসে ফিরেছেন। অভিযোগ রয়েছে, কেউ কেউ নিজেদের আড়াল করতে ভিড়ছেন শিবির-ছাত্রদলে। 
 
শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীরা হলে অবস্থান করায় তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের দাবি, জুলাইয়ের ঘটনার পরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা হলে প্রভাব খাটাচ্ছে, অথচ প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বাড়ছে।
 
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, রাতে হলের পরিবেশ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। উচ্চ শব্দ, ভয়ভীতি ও দাপটের কারণে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা ও হলে অবস্থান করতে পারছেন না। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ভবিষ্যতে আরও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
 
রুমমেটদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে রায়হান কবির বলেন, রুমে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
 
রনি আহমেদ বলেন, এগুলো নিউজ করার মতো বিষয়। ফোনে কিছু বলতে পারব না।
 
 
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইয়ামিন বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। সেই আন্দোলনে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত কেউ যদি ক্যাম্পাসে অবস্থান করে, তার সম্পূর্ণ দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
 
তিনি আরও বলেন, শুরু থেকেই আমরা ছাত্রলীগের বিচার এবং তাদের হল থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এখনো পদধারীসহ ছাত্রলীগ কর্মীরা হলে অবস্থান করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
 
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বেরোবি শাখার সভাপতি সুমন সরকার বলেন, ৫ আগস্টের পর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শাস্তি দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু প্রশাসন সে দায়িত্ব পালন করেনি। এতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
 
তিনি আরও বলেন, আমাদের কর্মসূচি সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও পোস্টধারী ছাত্রলীগ বা জুলাই হামলার সঙ্গে জড়িত কেউ ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত নয়।
 
শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে এবং তা প্রমাণিত হলে তার সিট বাতিল করা কবে। এছাড়া প্রশাসনের নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, ৫ আগস্টের আগে কে কোন সংগঠন করত, তা প্রক্টরিয়াল টিম ও হল প্রশাসন দেখবে। বিষয়টি তাদের জানানো হবে। যারা শাস্তি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরেছে, তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমরা চাই না।

মন্তব্য করুন


Link copied