নিউজ ডেস্ক: ফেসবুক এখন শুধু বন্ধুত্ব করার প্লাটফর্মে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন ব্যবসা, সাংবাদিকতা, বিনোদন ও গণসংযোগের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেই প্রায় সাত কোটি মানুষ নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করে। ফলে পেজের মাধ্যমে মানুষ নিজের ব্র্যান্ড, ব্যবসা কিংবা মতামতকে আরও বড় পরিসরে পৌঁছে দিতে পারছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকেই লক্ষ্য করছেন- একসময় যেসব পোস্ট হাজার হাজার মানুষ দেখত, এখন সেখানে রিচ নামমাত্র। অ্যালগরিদম বদলের কারণে ‘মানবিক সংযোগ' ও 'ইন্টারঅ্যাকশন' নির্ভর কনটেন্টকে ফেসবুক এখন বেশি প্রাধান্য দেয়।
তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অর্গানিক রিচ বাড়ানোর নানা কার্যকর কৌশল আছে, যা নিয়মিতভাবে অনুসরণ করলে আবারও পেজকে প্রাণবন্ত করে তোলা সম্ভব। নিচে দেওয়া বাস্তবসম্মত কৌশল অনুসরণ করলে পেজের দর্শক সংখ্যা, অংশগ্রহণ ও প্রভাব বাড়বে।
মানসম্মত ও প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট তৈরি করুন ফেসবুকের অ্যালগরিদম এখন 'Meaningful Interaction'-কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। অর্থাৎ মানুষ যদি আপনার পোস্টে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে, তবেই সেটি অন্যদের নিউজফিডে বেশি দেখানো হবে। তাই এমন পোস্ট তৈরি করুন যা পাঠককে ভাবায়, আলোচনায় টানে কিংবা অংশগ্রহণে উৎসাহিত করে।
উদাহরণ হিসেবে ধরুন, 'আপনার মতে, এ প্রযুক্তি আমাদের জীবনে কী পরিবর্তন আনবে?' এই প্রশ্নমূলক ভঙ্গি মানুষকে কমেন্ট করতে প্রলুব্ধ করে। নিয়মিত পোস্ট দিন, তবে সঠিক সময়ে অনেকে মনে করেন দিনে যত বেশি পোস্ট দেওয়া যায়, রিচ তত বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে সময়টাই বড় ফ্যাক্টর। ফেসবুক ইনসাইটস থেকে আপনি জানতে পারবেন, আপনার ফলোয়াররা কোন সময় সবচেয়ে সক্রিয়। প্রথম কয়েক সেকেন্ডেই ব্যবহারকারী স্কুল করে চলে যান কি না, সেটিই নির্ধারণ করে ভিডিওর রিচ।
লাইভ সম্প্রচারে নিয়মিত থাকুন
ফেসবুক লাইভ এখনও সবচেয়ে কার্যকর রিচ টুল। আপনি যদি সপ্তাহে একবারও লাইভে এসে দর্শকের সঙ্গে কথা বলেন, তা পোস্টের তুলনায় অনেক বেশি পৌঁছায়। কারণ ফেসবুক লাইভকে ‘রিয়েল টাইম ইন্টারঅ্যাকশন' হিসেবে দেখে এবং অ্যালগরিদমে অগ্রাধিকার দেয়।
আপনি পণ্যের উদ্বোধন, আলোচনা, প্রশ্নোত্তর বা সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়েও লাইভে আসতে পারেন। লাইভ শেষে ভিডিওটি পেজে রাখলে সেটিও পরবর্তীতে রিচ ধরে রাখে।
মানবিক ও অনুভূতি কনটেন্ট
বাংলাদেশে সাধারণত দুপুর ১২টা থেকে ২টা এবং রাত ৮টা থেকে ১০টার সময় ফেসবুক ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। সপ্তাহে ৪-৫টি মানসম্মত পোস্টই যথেষ্ট। খুব বেশি পোস্ট দিলে অ্যালগরিদম পেজটিকে স্প্যাম- হিসেবে ধরে নিতে পারে। THE GREAT ভিডিও কনটেন্টে গুরুত্ব দিন | BANGLADESH মানুষ ভিডিও এখন ফেসবুকের সবচেয়ে SLOW US কনটেন্ট ফরম্যাট। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিডিও পোস্ট সাধারণ ছবির তুলনায় গড়ে ৬ গুণ বেশি রিচ পায়। The Great Bangladesh
ছোট দৈর্ঘ্যের (৩০-৬০ সেকেন্ড) তথ্যবহুল, বিনোদনমূলক বা শিক্ষণীয় ভিডিও সবচেয়ে ভালো কাজ করে। তবে ইউটিউব লিংক শেয়ার না করে সরাসরি ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করা জরুরি। কারণ ফেসবুক নেটিভ ভিডিওকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আরেকটি কৌশল- ভিডিওর প্রথম ৫ সেকেন্ডে এমন কিছু রাখুন যা দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। কারণ তথ্যের চেয়ে গল্পে বেশি সংযুক্ত হয়। তাই নিজের বা ব্র্যান্ডের গল্প বলুন- যেভাবে শুরু করেছিলেন, কীভাবে পথ পাড়ি দিয়েছেন, কিংবা কোনো গ্রাহকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। যেমন- 'একজন কৃষক কীভাবে আমাদের পণ্য ব্যবহার করে নিজের উৎপাদন দ্বিগুণ করেছেন' এই ধরনের মানবিক কনটেন্ট অনেক বেশি এনগেজমেন্ট আনে। এতে পাঠক কনটেন্টের সঙ্গে আবেগগতভাবে জড়িয়ে পড়ে, যা অর্গানিক রিচ বাড়ায়।
আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করুন ছবি হলো অনলাইন কনটেন্টের প্রথম দৃষ্টি।
একটি পোস্টের সবচেয়ে বড় কাজ হলো ব্যবহারকারীর থামানো, মানে, স্কুল বন্ধ করানো। এ জন্যই পোস্টে দৃষ্টি আকর্ষণীয় রঙ, পরিষ্কার টাইপোগ্রাফি ও ভালো ফ্রেমিং জরুরি।
Canva, Adobe Express Fotor-4 মতো ফ্রি টুল ব্যবহার করে নিজের ডিজাইনে স্বকীয়তা আনা যায়। একই সঙ্গে পেজে একটি নির্দিষ্ট রঙের স্টাইল ও ফন্ট ব্যবহার করলে সেটি ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি গড়ে তোলে। ফলোয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন ফলোয়াররা শুধু সংখ্যা নয়, তারা আপনার পেজের প্রাণ। কেউ কমেন্ট করলে রিপ্লাই দিন, প্রশ্নের উত্তর দিন, কিংবা তাদের ধন্যবাদ জানান। এতে দর্শকরা বুঝতে পারে, পেজের পেছনে একজন বাস্তব মানুষ আছে।
ফেসবুকের অ্যালগরিদমও এসব ইন্টারঅ্যাকশনকে ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করে। একাধিকবার কথোপকথন চললে ভবিষ্যতে সেই ব্যবহারকারীর নিউজফিডে আপনার পোস্ট আরও বেশি দেখাবে। হ্যাশট্যাগ ও কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন সঠিক হ্যাশট্যাগ (#Digital Marketing, #TechNews #Innovation) ব্যবহার করলে নতুন পাঠক আপনার কনটেন্ট খুঁজে পেতে পারে। তবে বাড়াবাড়ি নয়, প্রতি পোস্টে ৩-৫টি প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ যথেষ্ট। এ ছাড়া পোস্টের মূল লেখা বা ভিডিওর বর্ণনায় নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড ব্যবহার করলে সার্চে আপনার কনটেন্ট সহজে ভেসে ওঠে।
ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্টকে গুরুত্ব দিন ফলোয়াররা যদি নিজেরা কোনো অভিজ্ঞতা, ছবি বা মতামত শেয়ার করে, তা আপনার পেজে পোস্ট করুন। এতে তারা নিজেদের অংশীদার মনে করে, যা বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। এই কৌশলটি বিশেষ করে ছোট ব্যবসা, সংগঠন ও কমিউনিটি পেজের জন্য দারুণ কাজ করে। ইনসাইট বিশ্লেষণ করুন, বিজ্ঞাপন নয়, তথ্য ব্যবহার করুন অনেকেই রিচ বাড়াতে বিজ্ঞাপন বুস্ট করেন। কিন্তু প্রকৃত অর্গানিক গ্রোথ আসে ডেটা বিশ্লেষণ থেকে। প্রতি সপ্তাহে একবার ফেসবুক ইনসাইটস দেখে বুঝে নিন কোন পোস্টে বেশি এনগেজমেন্ট, কোন টাইমে বেশি ভিউ, কোন কনটেন্টে মানুষ বেশি সময় কাটায়। সফল কনটেন্টগুলো থেকে প্যাটার্ন বের করুন এবং ভবিষ্যতের পোস্টে তা প্রয়োগ করুন।
শেষের আগে
ফেসবুকের অ্যালগরিদম বদলেছে, কিন্তু মানুষের যোগাযোগের আকাঙ্ক্ষা বদলায়নি। বিজ্ঞাপনের যুগে অর্গানিক রিচ কমে গেলেও যারা মানুষের মতো আচরণ করে, গল্প বলে, প্রশ্ন তোলে- তাদের পোস্ট এখনও মানুষের ফিডে জায়গা পায়।
তাই অ্যালগরিদমকে নয়, দর্শককে বুঝুন। তাদের সঙ্গে কথা বলুন, শোনান গল্প, তৈরি করুন মূল্যবান অভিজ্ঞতা। তবেই ফেসবুক পেজ আবারও হয়ে উঠবে এক প্রাণবন্ত কমিউনিটি। রিচ নয়, সম্পর্কই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি।