আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫ ● ৪ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫

আন্দোলন আর স্মারকলিপি: বাজেট বৈষম্য কি এভাবেই দূর হবে? 

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, রাত ১০:১৫

Advertisement Advertisement

জুবায়ের আহমেদ

উত্তরাঞ্চলবাসীর প্রতি বাজেট বৈষম্যের অভিযোগ নতুন নয়। রাজধানীকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার ছায়ায় থেকে বারবারই পিছিয়ে পড়ে রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চল। সর্বশেষ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ১২টি প্রকল্প অনুমোদিত হলেও সেখানে রংপুর মহানগর কিংবা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অনুপস্থিত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা মডার্ন মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ করে এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেয়।

এই প্রতিক্রিয়া শুধু আবেগ নয়—এটি উত্তরাঞ্চলের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই আন্দোলন আর স্মারকলিপিই কি যথেষ্ট বাজেট বৈষম্য দূর করার জন্য?

একটি দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (ADP) প্রণয়ন হয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত বিবেচনায়। সেখানে জনগণের চাহিদা, নির্বাচনী অঙ্গীকার, রাজনৈতিক প্রভাব—সবই ভূমিকা রাখে। অথচ রংপুর অঞ্চলের জনসংখ্যা ও শিক্ষাগত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও বারবার অবহেলিত হয়ে আসছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জীবনমানেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

স্মারকলিপি ও আন্দোলন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক প্রতিবাদের বৈধ উপায়। তবে বাস্তবতা হলো, একদিনের কর্মসূচি কিংবা কাগজে লেখা দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে একমাত্র মাধ্যম নয়। কারণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখতে হলে দরকার পরিসংখ্যানভিত্তিক দাবিপত্র, সুসংগঠিত জনমত এবং সাংবিধানিক দাবির পক্ষে প্রমাণ। শুধু স্লোগানে দাবি পূরণ হয় না—যা হয় তা হলো মিডিয়ায় কিছু শোরগোল, প্রশাসনের কয়েকটি প্রতিশ্রুতি—এর বাইরে কিছু নয়।

এখন প্রয়োজন, রংপুর অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ এবং শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠন করতে হবে উন্নয়ন প্রস্তাবনা দল, যারা বাজেট বরাদ্দের জন্য যুক্তিপূর্ণ প্রস্তাব পাঠাবে। একই সঙ্গে চাই জাতীয় বাজেট বিতরণে আঞ্চলিক ভারসাম্য বিষয়ক কমিশন, যেখানে উত্তরাঞ্চলের জন্য ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করা হবে।

একটি অঞ্চল বঞ্চিত থাকলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অসম্ভব। তাই আন্দোলনের আবেদন যেন হারিয়ে না যায়, তার জন্য দরকার কৌশলগত দাবির ভাষা, দৃঢ় পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক চাপ। স্মারকলিপি হোক সেতুবন্ধন, কিন্তু সমাধান যেন হয় সিস্টেমের ভেতরেই।


লেখক: জুবায়ের আহমেদ, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর 

 

মন্তব্য করুন


Link copied