নিউজ ডেস্ক: চীনের সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে সব রকম প্রস্তুতি সেরেছে বাংলাদেশ। এজন্য দেশটির কাছে ঋণও চেয়েছে ঢাকা। আর এ প্রকল্পটিতে বেইজিং এ যে তীব্র আগ্রহ রয়েছে তা স্পষ্ট জানান বাংলাদেশের চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এদিকে তিস্তা মহাপরিকল্পনায় চীনের উপস্থিতি মানতে নারাজ দিল্লি। তাই অতীতে বারবার তিস্তা পরিকল্পনা হোচট খেয়েছে। তবে এবার তিস্তা মহাপরিকল্পনায় চীন সরাসরি নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। গতকাল সোমবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পররাষ্ট্র
সচিবের সঙ্গে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করেন চীনের রাষ্ট্রদূত। সূত্র জানায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬৮০০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ঋণের বিষয়েও ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বেইজিং এর তরফে। এই তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্পটির বিষয়ে চীন অনেক আগে থেকেই আগ্রহী। জানা যায় বাংলাদেশ ২০১১ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে অভিন্ন তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি করতে চেয়ে আসছে। কিন্তু ভারতের টাল বাহানার কারণে ওই পানি চুক্তি আর বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে তিস্তাকে ঘিরে ২০১৯ সালে দৃশ্যপটে হাজির হয় চীন। তবে গত ছয়
বছরে চীনের আগ্রহ থাকার পরও ভূক-কৌশলগত কারণ দেখিয়ে ভারত এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার নামে প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ সংকুচিত করতে চেষ্টা করে আসছিল। ফলে আলোর মুখ দেখেনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা। তিস্তা মহাপরিকল্পনার আওতায় তিস্তা নদীর দুই পাড়ে ২২০ কিলোমিটার গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় স্যাটেলাইট সহ নির্মাণ, পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ, নদী খনন সহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। একই সাথে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তিস্তা প্রকল্প ভারতকে দেয়ার ব্যাপারে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ
সম্মতি ছিল। ২০২৪ সালের ১৪ই জুলাই তারিখে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, চিন্ত রেডি। তবে আমি চাচ্ছি যে এটা ভারত করে দিক। তবে তার ভারত পলায়নের সাথে সাথে তিস্তা প্রকল্প থেকে ভারতের নাম মুছে গেল। অবশেষে গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা চীনসফরের পর তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রাণ ফিরে পায়। চীনের প্রেসিডেন্ট সিজিনপিন সরাসরি আগ্রহ দেখান এই প্রকল্পে। গত এপ্রিল থেকে এই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে নিতে মাঠে নেমেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০২৯ সাল নাগাত শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। চিঠিতে কম্প্রিহেন্সিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রেস্টোরেশন অফ তিসরিভার প্রজেক্ট বাস্তবায়নে চীনের কাছ থেকে ৫৫ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ব্যাপারে চীনের সম্মতিও মিলেছে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, তিস্তার বিষয়ে চীন বেশ আগ্রহী। চলতি বছরের শেষের দিকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা অধিকতর যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে চীনের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল। এদিকে বিশ্লেষণে দেখা যায় তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ কৌশলে
এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের কয়েকটি নদীর মূল উৎপত্তিস্থল চীনে। চীন সেসব নদীতে বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করছে। ফলে তিস্তার মত কৌশলগত একটি প্রকল্পে চীনের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে চীনের সহায়তা মেলার ব্যাপারেও সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।