স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ চীন সরকারের উপহারের এক হাজার শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের নীলফামারীর প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শণ করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। শনিবার(২৩ আগষ্ট) বিকাল ৫টার দিকে তিনি জেলা সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন ২৫একর সরকারি জায়গা পরিদর্শণ করেন।
পরে তিনি নীলফামারী সদরের নটখানা নামক স্থানে নীলফামারী মেডিকেল কলেজের স্থান ও বর্তমান ক্যাম্পাস এবং ২০ শষ্যা বিশিষ্ট সরকারি কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এরপর মেডিক্যাল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি কৃঞ্চচুরা গাছের চারা রোপন করেন।
পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চীনের অথ্যায়নে দেশে তিনটি ‘চায়না বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ স্পেশালাইষ্ট জেনারেল হাসপাতাল’ নির্মান করা হবে, যার প্রথমটি হবে রংপুর বিভাগে। চীনের উপহারের এক হাজার শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের জন্য রংপুর বিভাগে তিনটা জায়গার কথা আমাদেরকে বলা হয়েছে। তিনটা জায়গা আমি পরিদর্শন করে গেলাম। এরমধ্যে নীলফামারী জেলার স্থানটি প্রথমে রয়েছে। ফিরে যাওয়ার পর আমাদের সিদ্ধান্ত চীনকে জানানো হবে। আমরা আমাদের মতামত দিব, আরও নতুন করে চায়নিজরা আসবেন, কারণ এটাতো ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল। তারা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করার জন্য আসবেন, তার পরে সিদ্ধান্ত হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বন্ধুত্বপূর্ণ ও কল্যাণকর উদ্যোগের জন্য চীনের জনগণ ও সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। চীন সবসময় বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে দুর্যোগ ও সংকটময় সময়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। উত্তরবঙ্গে এই হাসপাতাল নির্মাণের পর চীনের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আর দৃঢ় হবে।
দেশের স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। দেশের সকল সরকারি হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান ফেরাতে বিশেষ নজর রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের। একই সঙ্গে দেশের প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালে চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক নার্সসহ জনবল নিয়োগ ও জরুরী যন্ত্রাংশ স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতে চলমান সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট দীর্ঘদিনের সমস্যা। এই সমস্যা সরকারের একার পক্ষে দূর করা সম্ভব না। সিন্ডিকেট রুখতে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। অনিয়ম দূর করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি নিজের সংস্কারও অত্যন্ত জরুরি।
পদ সৃষ্টি করলে সরকারকে ভাবতে হবে, টাকা কোথা থেকে আসবে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, সরকার তো এমনি এমনি লোক নিয়োগ দিতে পারে না। তাকে পদ সৃষ্টি করতে হয়। পদ সৃষ্টি করলে তাকে ভাবতে হয়। এতজন ডাক্তার নিবে, এই টাকাটা কোথা থেকে আসবে? পরিবারে যেমন একটা আয়-ব্যায়ের হিসাব আছে, রাষ্ট্রেরও একটা আয়-ব্যয়ের হিসাব আছে। সেইভাবেই তখন তারা হিসাব করে। আপনাদের এখানে যে শিশু হাসপাতাল আছে এটা চালু করা যাচ্ছে না কেন? কারণ এখানে কোনো ইকুইপমেন্ট নাই। দক্ষ জনবল যেটা দিতে হবে সেটাও নাই।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা এখন চেষ্টা করছি আমাদের নতুন যারা আসবে তিন হাজার ডাক্তার আসবে, আমরা এদের একবারে এসাইন করব। এরপরে কনসালটেন্টের ব্যাপার আছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের ব্যাপার আছে। শুধু ডাক্তার দিলে তো হবে না, ডাক্তারের সাথে তার ইকুইমেন্ট টাও দিতে হবে। ওইটার সাথে তার টেকনোলজি দিতে হবে। ওটার সাথে তার নার্স দিতে হবে। আইসিইউ ভিন্ন একটা জিনিস। আইসিইউর নার্স থাকে, আইসিইউর সাথে আইসিইউর অ্যানেস্থেশিয়া থাকে। একেকটা সাবজেক্টে একটা আলাদা। যেমন আপনি অর্থপেডিকস, ওদের অ্যানেস্থেশিয়া এক রকম। হার্টের হলে সেটা আরেক রকম। প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা ডিসিপ্লিনের আলাদা আলাদা টিম থাকে।
তিনি আরও বলেন, কাজেই আমরা যদি ওই লোক তৈরি করতে না পারি, শুধু একজন ডাক্তার দিয়ে হবে না। কিছুক্ষণ আগেই বললাম, আমাকে পুরো টিম টাই তৈরি করতে হবে। পুরো ইকুইপমেন্টটাই দিতে হবে। ওই পুরা জিনিসটা দিতে পারলে তখনই সম্ভব। আমাদের পক্ষে অর্থাৎ এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে কেমনে এগুলো করা কেমনে সম্ভব বলেন।
উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, প্রত্যেকের জন্যই চেষ্টা করতে হবে। বরিশালেও দেখলাম ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে, আপনাদের এই হাসপাতালেও কিন্তু ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়তেছে। যে টয়লেট দেখলাম এটা কোন টয়লেট না। এটা মানুষের জন্য হতে পারে না। কিন্তু আমরা তো আছিই তার মধ্যে। কাজেই আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি। সবাই যার যার জায়গা থেকে নিজে নিজে পরিবর্তন হই এবং সরকারকে সহায়তা করি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জিম্মা হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুর রহমান মোহসিন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সাইদুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহবায়ক মীর সেলিম ফারুক, সদস্য সচিব এ.এইচ.এম সাইফুল্লাহ রুবেল, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম ও জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল মজিদ প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানান, সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের আরাজী চড়াইখোলা ও দারোয়ানী মৌজায় ২৪.৮৯ একর জমিতে চীন সরকারের উপহারের এক হাজার শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির আহবায়ক মীর সেলিম ফারুক বলেন, এই এলাকার মানুষ অধীর অপেক্ষায় রয়েছে হাসপাতালটির কার্যক্রম দেখার জন্য। আমরা চাই দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু হোক। হাসপাতালটি হলে স্বাস্থ্য সেবায় বিরাট পরিবর্তন ঘটবে নীলফামারী জেলাসহ আশপাশ এলাকার।