আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ৪ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইউনূসের নেতৃত্বে শুরু হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, হাসিনার পলায়নের সাথে সাথে তিস্তা থেকে বাদ পড়লো ভারত

চীনের চুড়ান্ত পদক্ষেপ
ইউনূসের নেতৃত্বে শুরু হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, হাসিনার পলায়নের সাথে সাথে তিস্তা থেকে বাদ পড়লো ভারত

ছাত্রদের ঝরে কাঁপছে প্রতিবেশীর ঘর ! মোদির সামনে বাংলাদেশের ছায়া!

ছাত্রদের ঝরে কাঁপছে প্রতিবেশীর ঘর ! মোদির সামনে বাংলাদেশের ছায়া!

“ তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ “

বাস্তবায়ন হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা
“ তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ “

ফেলানী হত্যার এক যুগ পর-ছোট ভাইয়ের বিজিবিতে যোগদান

ফেলানী হত্যার এক যুগ পর-ছোট ভাইয়ের বিজিবিতে যোগদান

ছাত্রদের ঝরে কাঁপছে প্রতিবেশীর ঘর ! মোদির সামনে বাংলাদেশের ছায়া!

বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রাত ১০:৪৯

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবনের অন্ধকার কক্ষ দেয়ালে ঝুলছে বিশাল ঘড়ি কাটা যেন থমকে গেছে বাইরে হালকা সাইরেন বাজছে মাঝে মাঝে দূরে কুকুরের হাওমাউ শব্দ ভেসে আসছে ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে আছে অস্বস্থির নিস্তব্ধতা মোদি একা বসে আছেন চেয়ারে চোখে অস্থিরতা টেবিলের উপর ছড়ানো নথি আর টিভি পর্দায় ভেসে উঠছে কাঠমুন্ডুর আগুনের ছবি নেপালের প্রধানমন্ত্রী অলির হেলিকপ্টারে করে পালানোর দৃশ্য দেখেই তার বুক কেঁপে উঠলো। মনে পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের সেই রাত যখন শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। ইতিহাসের সেই পাতাগুলো যেন আবার উল্টে যাচ্ছে সামনে। মোদি জানেন শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল তিন প্রতিবেশীরই শাসক পতন ঘটেছে ছাত্রজনতার আগুনে। আর এখন সেই আগুনের প্রতিচ্ছবি দিল্লির জানালায়। অজানা এক আতঙ্ক চেপে বসছে তার বুকে। ঘরের ভেতরে নিস্তব্ধতা। কিন্তু মনে হচ্ছে বাইরের রাস্তায় ফিসফিস করছে হাজার কন্ঠ। পরবর্তী গন্তব্য ইন্ডিয়া।

এই মুহূর্তে যেন এক নতুন বাস্তবতার শুরু। প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে নিজের ঘর নিরাপদ থাকে না। এবার সেই আগুনের শিখা ছুঁয়ে ফেলছে দিল্লির রাতকেও। মোদির ঘুম ভাঙছে। কারণ ইতিহাসের প্রতিটি বিদ্রোহ এখন তার দরজায় আড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলন কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গভীরভাবে দেখলে স্পষ্ট হয় এক অভিন্ন প্যাটার্ন। অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্নীতি, তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে গণ আন্দোলন, সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার বানিয়ে সংগঠিত বিদ্রোহ, সরকার প্রধানের পতন ছাড়া আন্দোলনের ইতি নয়। রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন দক্ষিণ এশিয়ার এই আন্দোলনগুলো একটি নতুন সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন। মানুষ আর কেবল অর্থনৈতিক সমস্যায় ক্ষুব্ধ নয়। তারা স্বৈরাচারী শাসন, দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান করছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যারা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বড় হয়েছে তারা প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামোকে আর বিশ্বাস করছে না। তারা নিজেরাই নেতৃত্বে আসছে। স্লোগান তৈরি করছে রাস্তায় নামছে। শ্রীলঙ্কায় জনগণের ক্ষোভ শুরু হয়েছিল জ্বালানি ও খাদ্য সংকট থেকে।

 

 বাংলাদেশে তা শুরু হয় সীমায়হীন দুর্নীতি ও দমন নীতির বিরুদ্ধে। নেপালের ছাত্ররাসরাসরি সরকারের প্রাসাদে আগুন ধরায়। তিনটি ক্ষেত্রেই আন্দোলন শুরু হয় ছোট ছোট দাবিতে। কিন্তু শেষ হয় শাসকের পতনে। এই ধারা বিশ্লেষকরা আঞ্চলিক বিদ্রোহের চক্র বলে উল্লেখ করছেন। যখন এক দেশে সফল বিদ্রোহ ঘটে তখন প্রতিবেশী দেশের মানুষ ভাবে আমরাও পারব। এই মনস্তাত্বিক সংযোগ আন্দোলনকে সীমান্ত ছাড়িয়ে ছড়িয়ে দেয়। আজ শ্রীলঙ্কা থেকে নেপাল পর্যন্ত যে অগ্নিশিখা ছড়িয়েছে তা ভারতের জন্য সরাসরি সতর্কবার্তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মোদির চারপাশে তৈরি হওয়া অস্থিরতা কেবল রাজনৈতিক বিরোধিতার বিষয় নয় বরং বহুমাত্রিক সংকটের প্রতিফলন। কৃষক আন্দোলন ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সামনে নিয়ে এসেছে। সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। অন্যদিকে শহরের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে।

 

 এই দুই শ্রেণীর ক্ষোভ একসাথে মিলে গেলে তা এক অপ্রতিরোদ্ধ আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। সংখ্যালঘুদের উপর ধারাবাহিক নিপীড়ন শুধু দেশের ভেতরে বিভাজন তৈরি করছে না বরং আন্তর্জাতিক মহলেও ভারতের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফলে মোদি সরকার দ্বিমুখী চাপের মুখে ভেতরে জনরোশ বাইরে কূটনৈতিক চাপ এছাড়া গণমাধ্যম ও বিচার ব্যবস্থার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ জনগণের বিশ্বাসকে আরো ভেঙে দিয়েছে যখন মানুষ দেখে যে তাদের কন্ঠস্বর দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং বিচার ব্যবস্থা পক্ষপাত তুষ্ট তখন বিদ্রোহের আগুন আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন মোদির জনপ্রিয়তা একসময় বিজেপির সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল। কিন্তু এখন সেই জনপ্রিয়তায় পরিণত হচ্ছে দুর্বলতায়। কারণ যখন শাসকের প্রতীক হয়ে ওঠা ব্যক্তির উপর আস্থা ভেঙে যায় তখন বিদ্রোহের লক্ষ্য হয় সরাসরি সেই ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের শেখ হাসিনা কিংবা নেপালের কৌশল শর্মার মতো মোদিও সেই বাস্তবতার বাইরে নন।

 

 শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ ও নেপালের পতন কি কেবল কাকতালীয়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন না তাদের মতে এটা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকে নতুনভাবে সাজানোর এক মাস্টার প্ল্যান। এই পরিকল্পনার কেন্দ্রে আছে তরুণ প্রজন্ম। তারা শুধু প্রতিবাদ করছে না তারারাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে। তারা দেখিয়ে দিচ্ছে যদি সাহস থাকে তবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। বাংলাদেশের বিদ্রোহকে তাই বলা হচ্ছে বাংলাদেশ মডেল। এই মডেল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এর শেষ লক্ষ্য হতে পারে ভারত। এখানে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফেসবুক, Twitter, Instagram ও TikTok এর মত প্ল্যাটফর্মে বিদ্রোহের ছবি, ভিডিও ও স্লোগান দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের ছবি নেপালের তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছে। আবার কাঠমন্ডুর আগুনের ছবি আজ ভারতের ক্যাম্পাসে ঘুরছে। এভাবে আন্দোলনের বার্তা আর সীমান্ত মানছে না।

 

 অনেকে বলছেন, এর পেছনে কোন আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক শক্তির ছায়া থাকতে পারে। ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ এশিয়া সবসময়ই একটি উত্তপ্ত অঞ্চল। তাই ছাত্রযুব আন্দোলনের এই ধারাবাহিকতা হয়তো বড় শক্তিগুলোর কৌশলগত পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত। তবে অন্য অংশ মনে করছে এটি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। ফলাফল যাই হোক বাংলাদেশ মডেল এখন আর কেবল বাংলাদেশের ভেতরে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠছে।  ভারতের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নরেন্দ্র মোদী দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয়তার প্রতীক হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই জনপ্রিয়তা ক্ষয়ে যাচ্ছে। কৃষক আন্দোলনের সময় দিল্লির রাজপথে লক্ষ লক্ষ মানুষ তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। মণিপুরের অশান্তি ও সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ বিজেপি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এসব ইস্যু এখনো সমাধান হয়নি বরং ক্ষোভ জমে আছে। ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি ও দুর্বলতা একসঙ্গে হলো তরুণ প্রজন্ম।

 

 জনসংখ্যার বিশাল অংশ তরুণ। কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। শিক্ষিত বেকারত্ব বাড়ছে। আর এই হতাশায় আন্দোলনের জ্বালানি হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশ ও নেপালের মতো যদি তারা একত্রিত হয় তবে মোদির শাসনকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়া ভারতের ভেতরে ধর্মীয় মেরুকরণ রাজনৈতিক ফাটলকে আরো গভীর করছে। একদিকে হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদ অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের বঞ্চনা। এই বৈপরিক্ত সামাজিকক্ষোভের আগুন জ্বালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্ষোভ যদি সংঘটিত আকার নেয় তবে ভারতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়তে সময় লাগবে না। আন্তর্জাতিক মহলেও ভারতের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি ভারতেও একই ধরনের বিদ্রোহ শুরু হয় তবে তা শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয় পুরো অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ভারসম্য পাল্টে দেবে। তাই প্রশ্ন একটাই ভারত কি প্রতিবেশীদের মতো একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখতে চলেছে? নাকি মোদি পরিস্থিতির সামাল দিতে নতুন কোন পথ খুঁজে পাবেন?  দিল্লির রাত আরো গভীর হচ্ছে। বাইরে চাঁদের আলোয় ছায়া পড়েছে ইন্ডিয়া গেটের গম্বুজে। আর ভেতরে মোদি হাঁটছেন বারবার যেন অস্থির বন্দির মতো। টিভির পর্দায় আবারও ভেসে উঠছে কাঠমন্ডুর আগুন, অলির হেলিকপ্টার উড্ডায়ন করছে।

 

সেই ছবির সাথে মিলে মিশে যাচ্ছে ঢাকার রক্তাক্ত আগস্ট শ্রীলংকার প্রাসাদ দখলের দৃশ্য। মোদি জানেন প্রতিবেশীদের পতন তিনি শুধু সংবাদে পড়েননি চোখে দেখেছেন। আজ তার ভেতরে যে ভয় জন্ম নিচ্ছে তা কোন স্বপ্ন নয় বরং ইতিহাসেরই প্রতিধ্বনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দক্ষিণ এশিয়ার এই বিদ্রোহের ঢেউ থামবে না। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা সীমান্ত ভেঙে ছড়িয়ে পড়বে। প্রশ্ন হলো এর শেষ গন্তব্য কোথায়? ভারত কি এই ধারাবাহিকতার শেষ অধ্যায় হতে চলেছে? যদি প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগে নিজের ঘরকে আর নিরাপদ বলা যায় না। সময়ের অপেক্ষামাত্র। কখন দিল্লির রাতও জ্বলে ওঠে বিদ্রোহের আগুনে। 

মন্তব্য করুন


Link copied