আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৫ ● ১১ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৫
রংপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় অবকাঠামোসহ এসিগুলো নষ্ট

রংপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় অবকাঠামোসহ এসিগুলো নষ্ট

উগ্রবাদ নিয়ে সতর্ক বিএনপি

উগ্রবাদ নিয়ে সতর্ক বিএনপি

তদন্ত হবে আড়ি পাতার

রাজনৈতিক সরকার এ ব্যবস্থা ধরে রাখতে চায়
তদন্ত হবে আড়ি পাতার

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

জি এম কাদেরের সঙ্গে চাপে জাতীয় পার্টিও

মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০২২, বিকাল ০৬:৫৫

Advertisement Advertisement

ডেস্ক: দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ আদালতে যাওয়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) ওপর চাপ আরও বেড়েছে। রওশন এরশাদপন্থিদের মামলায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় নিষ্ফ্ক্রিয় জি এম কাদের। সরকারের সমালোচনায় এবং চলতি ঘটনা নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতিতে সরব থাকা জাপা চেয়ারম্যান গত ১ নভেম্বর থেকে নীরব।
বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের ওই দিনের পর দলের কোনো কর্মসূচিতে যোগ দেননি। কার্যালয়েও যান না তিনি। গত শনিবার জাপার অঙ্গ সংগঠন জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সম্মেলনে যাননি। পূর্বনির্ধারিত সূচিতে তাঁর নাম থাকলেও সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

গত রোববার সংসদে গেলেও ৮ নভেম্বর পর্যন্ত (আজ) জি এম কাদেরের রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। তবে গতকাল সোমবার উত্তরায় নিজ বাসভবনে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জি এম কাদের। কিন্তু ১ নভেম্বরের পর তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আদালতের আদেশ মেনে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত হয়েছেন জি এম কাদের। যে আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, ঢাকার সেই যুগ্ম জজ আদালতে আজ মঙ্গলবার জি এম কাদেরের আবেদনের শুনানি হবে। জাপা মহাসচিব আশাবাদী, আজই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।

সংসদীয় দলের সংখ্যাগরিষ্টের সমর্থনেও বিরোধীদলীয় নেতা ও চিফ হুইপের পদ নিয়ে নিজের পক্ষে সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় আগে থেকেই চাপে ছিলেন জি এম কাদের। জাপা সূত্রের ভাষ্য, আজ আদালতের সিদ্ধান্তে বোঝা যাবে প্রকৃত অবস্থা। তবে জাপা মহাসচিব বলেছেন, মামলায় উদ্বিগ্ন নন। গতকাল সোমবার জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে একটি মামলার আবেদন খারিজ হয়েছে। বাকিগুলোতেও পক্ষে রায় আসবে।

২০১৯ সালে জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এরশাদের মৃত্যুর পর বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের বিরোধে ভাঙনের মুখে পড়ে জাপা। নেতাদের মধ্যস্থতায় চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা পদে পরস্পরকে মেনে নেন তাঁরা। তিন বছরের স্থিতাবস্থা ভাঙে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদ গত ৩১ আগস্ট চিঠি দিয়ে নিজেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করে 'কাউন্সিল' ডাকলে। জি এম কাদের সরকারের বিরোধিতা করছেন- এ কারণ দেখিয়েই তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে কাউন্সিল ডাকা হয়েছিল। কাউন্সিল বাতিলে রাজি না হলে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় জাপার সংসদীয় দল।

জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করে পরের দিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিনকে চিঠি দেওয়া হয়। জাপার ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থন থাকলেও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্পিকারের স্বীকৃতি পাননি জি এম কাদের। গত ৩০ অক্টোবরের সন্ধ্যায় জাপা মহাসচিবসহ কয়েকজন এমপি দেখা করলে স্পিকার আভাস দেন, বিরোধীদলীয় নেতার পদে রওশন এরশাদকেই চায় সরকার। এর প্রতিক্রিয়ায় সংসদ বর্জনের ঘোষণা দেয় জাপা। সেই রাতেই সরকারের 'বিশেষ নির্দেশনায়' রওশন ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিল স্থগিত করলে সংসদে যায় জাপা।

সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য ছিল, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়া রওশনের প্রতি আওয়ামী লীগের সহানুভূতি থাকলেও সরকারের সর্বাত্মক সমর্থন নেই। রওশন কাউন্সিল করলে জাপায় ভাঙন অবধারিত। সে ক্ষেত্রে বিএনপি বলয়ের দিকে যাওয়া ছাড়া পথ নেই জি এম কাদেরের। তাই ভাঙন ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে রওশনের কাউন্সিল স্থগিত হওয়ায় ভাবা হচ্ছিল, বিরোধীদলীয় নেতা হতে না পারলেও জি এম কাদেরের পাল্লা ভারী। কিন্তু পরের দিন থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। ১ নভেম্বর জানা যায়, আগের দিন আদালত জাপা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগে জি এম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তা জানিয়ে স্পিকারকে চিঠি দেন রওশনের পক্ষ নিয়ে দলীয় পদ হারানো মসিউর রহমান রাঙ্গা। তাঁকে সরিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদে কাজী ফিরোজ রশিদকে মনোনীত করে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন জি এম কাদের।

চিফ হুইপ বদলে স্পিকারের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন জাপা মহাসচিব। তাহলে কেন মসিউর রহমান রাঙ্গার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চিফ হুইপের কার্যালয়- প্রশ্নে তিনি বলেছেন, 'সংসদের আগামী অধিবেশনের আগে ঠিক হয়ে যাবে।' স্পিকারের আশ্বাস পাওয়ার দাবি করলেও জি এম কাদের আদৌ বিরোধীদলীয় নেতা হতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি মুজিবুল হক চুন্নু।

রওশনের পক্ষ নেওয়ায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর দলীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টার পদ হারান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাবেক এমপি জিয়াউল মৃধা। ৪ অক্টোবর জি এম কাদেরের জাপা চেয়ারম্যান হওয়া এবং ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের কাউন্সিলে অনুমোদিত গঠনতন্ত্রের বৈধতা প্রশ্নে মামলা করেন। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে আবেদন করেন। ওই স্থগিতাদেশের নথি অনুযায়ী, আদালতের নোটিশের জবাব না দেওয়ায় একতরফা আদেশ পান জিয়াউল হক মৃধা।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, মামলাটি হাস্যকর। জিয়াউল হক মৃধা কাউন্সিলে অংশ নিয়েছিলেন। কাউন্সিলে অনুমোদিত গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে তিনি জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টার পদ পেয়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। অব্যাহতি পেয়ে বলছেন, কাউন্সিল ও গঠনতন্ত্র অবৈধ!

জিয়াউল হক মৃধা বলেছেন, এরশাদের মৃত্যুর পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাপার চেয়ারম্যান হওয়ার কথা ছিল ওই সময়কার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের। জি এম কাদের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে চেয়ারম্যান হন। আদালত তা আমলে নিয়েছেন।

জাপা নেতারা ধারণা করছেন, নিষেধাজ্ঞা না উঠলে সরকারের সমালোচনায় মুখর জি এম কাদেরের ওপর চাপ আরও বাড়বে। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, কে নেতা, তা ঠিক করা দলের কাজ। তা আদালতে টেনে নেওয়া উচিত নয়। নয়তো আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো বড় দলের নেতৃত্ব নিয়েও মামলা মোকদ্দমার পথ খুলবে। শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব পালনেও নিষেধাজ্ঞা আসার শঙ্কা তৈরি হবে। খবর-দৈনিক সমকাল

মন্তব্য করুন


Link copied