আর্কাইভ  রবিবার ● ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ● ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২৩ নভেম্বর ২০২৫
হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে

হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে

হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রায় ২৭ নভেম্বর

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি
হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রায় ২৭ নভেম্বর

হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের মামলার যুক্তিতর্ক ২৫ নভেম্বর

হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের মামলার যুক্তিতর্ক ২৫ নভেম্বর

রাজনীতি ছেড়ে 'পাপমুক্ত' হতে দুধ দিয়ে গোসল!

রাজনীতি ছেড়ে 'পাপমুক্ত' হতে দুধ দিয়ে গোসল!

তিস্তা মহাপরিকল্পনায় নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত

রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, দুপুর ০২:৩৩

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর উঁকি দিচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা। অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে চীনের উপহারের এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের জন্য তিস্তা অববাহিকার জেলা নীলফামারীকে বেছে নেয়ায় সে আশা আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে এ সরকারের আমলে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরুর দাবি এ জনপদের।

একসময় উত্তরের নদী তিস্তাকে বলা হত এ অঞ্চলের জীবনরেখা। কিন্তু ১৯৯৮ সালে অভিন্ন এ নদীর ভারতের অংশ গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের পর মুমূর্ষু হয়ে আসে তিস্তার জীবন। সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষের জন্য তিস্তা হয়ে উঠে দুর্দশা আর দুর্ভোগের উৎসস্থল।

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পানি আটকে একদিকে ভারত যেমন করেছে তিস্তার শ্বাসরোধ, অন্যদিকে গেলো দেড় দশক ধরে তিস্তা হয়ে উঠেছে এ দেশের জাতীয় রাজনীতির বড় অনুষঙ্গ। তবে, তিস্তা এখন কেবল জাতীয় রাজনীতির হাতিয়ারই নয়, হয়ে উঠেছে চীন-ভারত আর বাংলাদেশের ভৌগোলিক রাজনীতির বড় কেন্দ্রবিন্দু।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা চাই এটি ডিসেম্বরের মধ্যেই বাস্তবায়ন হোক। এটি চীনের প্রকল্প নয় ভারতেরও নয়। এটি বাংলাদেশের নিজস্ব প্রকল্প।’

১৯৮৩ সালে ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। সে চুক্তিতে শুষ্ক মৌসুমে তথা ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য তিস্তা নদীর মোট পানির প্রায় ৩৬ শতাংশ আর ভারতের জন্য প্রায় ৩৯ শতাংশ পানি বরাদ্দ রাখার কথা ছিল। তবে সে চুক্তি ছিল কেবল কাগজে কলমে। এরপর ফের ২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আরেকটি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিল সেখানে শুষ্ক মৌসুমে উভয় দেশের জন্য প্রায় সমান অনুপাতে পানি বরাদ্দের পরিকল্পনা ছিল। সেটিও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে আর বাস্তবায়িত হয়নি। তবুও পরবর্তী সময়ে তিস্তা নদী ঘিরে পরিকল্পনার স্বপ্ন দেখিয়ে পরপর তিনটি নির্বাচনে পাঁচ জেলার মানুষের ভোট নিজের ঘরে টানে পতিত আওয়ামী সরকার।

রিজিওনাল জাস্টিস এন্ড রাইটস (রিজু) ফেলো মো. আব্দুল্লাহ্-আল-মাহবুব বলেন, ‘আমাদের যে পানির হিস্যা সেটি যদি আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়, তাহলে আমাদের রংপুর বা উত্তরাঞ্চলের মানুষদের জীবনে পরিবর্তন আসবে।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘ক্লাইমেট চেঞ্জের ফলে যে সমস্ত ক্ষতি হয়, তা আর্টিফিশিয়ালি তিস্তা নদীর কারণে এই অঞ্চলে হচ্ছে।’

কথিত আছে, চীন কর্তৃক ২০২১ সালে তিস্তা মহাপরিকল্পনার নকশা প্রণয়ন আর ২০২৩ সাল নাগাদ কাজ শুরুর পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে কেবল ভারতের আপত্তির কারণে। প্রতিবেশী দেশকে তুষ্ট করতে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম আর গাইবান্ধার তিস্তা অববাহিকার প্রায় ২ কোটি মানুষের স্বপ্নকে বিগত সরকার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেও ফের সে আশা সঞ্চারিত হচ্ছে তিস্তার খুব কাছাকাছি এলাকায় চীনের হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া সামনে আসার মাধ্যমে। নীলফামারী সদর উপজেলার দারোয়ানী টেক্সটাইল এলাকার এই ২৫ একর জমি চীন সরকারের উপহারের একহাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের জন্য এক প্রকার চূড়ান্তই করেছে সরকার।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ত্বহা হুসাইন বলেন, ‘ভবিষ্যৎে তিস্তা মহাপরিকল্পনা যদি চীন বাস্তবায়ন করতে চায় তাহলে তাদের একটি পজেটিভ ইঙ্গিত দিবে আরকি।’

শিক্ষক ও উন্নয়ন গবেষক উমর ফারুক বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবার পূর্বে এই যে চীনের অর্থায়নে হাসপাতাল নীলফামারীতে হচ্ছে সেই হাসপাতাল হয়তো ভারতের প্রতিক্রিয়া জানবার জন্য। অথবা এ অঞ্চলে চীন কতটা সফলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে সেই বার্তাটি আমরা এবং চীন একই সঙ্গে পাবো এর মাধ্যমে।’

বিগত সরকারের পতন ও পলায়নের পর তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে এ নদীর বাংলাদেশ অংশের ১১৫ জুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করেছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। যে আন্দোলন বিগত বছরজুড়ে আলোচিত হয়েছে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

মন্তব্য করুন


Link copied