আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ● ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৪ অক্টোবর ২০২৫
ক্ষুধা নয়, অস্ত্রের পেছনে টাকা খরচ করা হচ্ছে বিশ্বে: ড. ইউনূস

ক্ষুধা নয়, অস্ত্রের পেছনে টাকা খরচ করা হচ্ছে বিশ্বে: ড. ইউনূস

স্ত্রী সাবিকুন্নাহারের সঙ্গে বিচ্ছেদ করতে যাচ্ছেন আবু ত্বহা আদনান?

স্ত্রী সাবিকুন্নাহারের সঙ্গে বিচ্ছেদ করতে যাচ্ছেন আবু ত্বহা আদনান?

পুলিশের বর্বরতার ভিডিও দেখে ট্রাইব্যুনালে সবার চোখ টলমল!

কলেজছাত্র হৃদয় খুন
পুলিশের বর্বরতার ভিডিও দেখে ট্রাইব্যুনালে সবার চোখ টলমল!

হর্ন ব্যবহারে বিআরটিএ’র নির্দেশনা, নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা

হর্ন ব্যবহারে বিআরটিএ’র নির্দেশনা, নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা

দেনমোহর পরিশোধ না করলে স্ত্রীর সঙ্গে থাকা জায়েজ?

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, বিকাল ০৭:৪৯

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: শরীয়তসম্মত পন্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর স্বামীর জিম্মায় একটি যৌক্তিক বিনিময় নির্ধারিত হয়, যাকে ফিকহের পরিভাষায় মোহর বলে।

মোহর আদায় করা স্বামীর অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। বিয়েতে নারীর জন্য মোহরের অধিকার নির্ধারণ এবং তাতে নারীর পূর্ণ মালিকানা প্রদান ইসলামের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।

এটা ঠিক যে, একজন নারী মোহর বাবদ যে সম্পদ লাভ করেন তা দাম্পত্য জীবনে তার নিঃস্বার্থ সেবার প্রকৃত বিনিময় হতে পারে না। তবে তা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে হৃদ্যতা ও ভালবাসা সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

মোহরের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। এটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে পুরুষের ইচ্ছা ও সঙ্গতির উপর। তাই সামর্থ্যবান পুরুষ যদি নিজের স্ত্রীকে কয়েক লক্ষ টাকাও মোহর হিসেবে প্রদান করেন তাতে কোনো বাধা নেই।

কুরআন মজীদ থেকে মোহর বাবদ ‘প্রভূত সম্পদ’ দেওয়ার বৈধতা পাওয়া যায়। (সুরা নিসা : ২০)

বিয়ের আকদ ও মোহর নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্মতি অপরিহার্য। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক মুসলমান এই ফরজ আদায়ের বিষয়ে চরম উদাসীন।

বিয়ের সময় বৈধ-অবৈধ উৎসব-আয়োজন ও অপ্রয়োজনীয় ধুমধাম করে লাখ লাখ টাকা অপচয় করলেও মোহর আদায়ে চরম অবহেলা করা হয়!

মোহর কখন আদায় করবে

বিয়ের সঙ্গে সঙ্গেই মোহর আদায় করে দেওয়া উচিত। তবে যদি অনিবার্য কারণে ওই সময় তা আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে কখন আদায় করা হবে তার মেয়াদ নির্ধারিত করে নিতে হবে।

কিন্তু এভাবে পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ না করে শুধু মৌখিকভাবে বা কাগজে-কলমে মোহর নির্ধারণ করে সারা জীবন আদায় না করা, বা স্ত্রীর কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেওয়া, কিংবা আদায় না করে স্ত্রীর দেনা কাঁধে নিয়ে মৃত্যুবরণ করা শুধু যে ইসলামের বিধানে কঠিন অন্যায় তা-ই নয়; নিতান্ত হীন ও কাপুরুষোচিত কাজও বটে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাসম্ভব আকদের সময়ই মোহর পরিশোধ করার, অন্তত কিছু অংশ আদায় করার তাকিদ করেছেন। এক সাহাবি বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে নবীজী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মোহর আদায় করার জন্য তোমার কাছে কী আছে?’ তিনি কিছুই নেই জানালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যাও একটি লোহার আংটি হলেও জোগাড় কর!’ (বুখারি )

এ থেকে মোহরের গুরুত্ব ও নগদ আদায়ের তাগিদ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

দেনমোহর পরিশোধ না করলে স্ত্রীর সঙ্গে থাকা জায়েজ

মোহর নগদ আদায় না করলেও বিবাহ শুদ্ধ হবে ঠিক, তবে পরে আদায়ের মেয়াদ নির্ধারিত করে নিতে হবে। কিন্তু কেউ যদি তাও না করে তাহলে শরীয়ত স্ত্রীকে এ অধিকার দিয়েছে যে, মোহর উসূল না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী নিজেকে স্বামীর হাতে অর্পণ করা থেকে বিরত থাকতে পারবে এবং ওই অবস্থাতেও স্বামীকে স্ত্রীর ব্যয়ভার নিয়মিত বহন করতে হবে।

কারণ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ এবং মোহর সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। স্ত্রী অবাধ্য হলেই কেবল স্বামী তার ভরণ-পোষণ বন্ধ করতে পারে। যে মোহরের মেয়াদ নির্ধারিত হয়নি তা তলব করা তো স্ত্রীর বৈধ অধিকার। একে অবাধ্যতা বিবেচনা করে স্ত্রীর নিয়মিত ব্যয়ভার বন্ধ করার অধিকার স্বামীর নেই।

ফুকাহায়ে কেরাম স্পষ্ট ভাষায় এ মাসআলা বলেছেন যে, স্বামী মোহর আদায় করে স্ত্রীকে নিজের বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে। যদি (মোহর আদায় না করে নিয়ে যেতে চায়, আর) স্ত্রী মোহর দাবি করে নিজ ঘরে অনড় থাকে, তাহলেও স্ত্রী (মোহর তো পাবেই, উপরন্তু) নিয়মিত ভরণ-পোষণ পাওয়ার হকদার থাকবে। কারণ সে তার ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের স্বার্থেই বাড়ি যাচ্ছে না। (নাফাকাত অধ্যায়)

মোহর উসুল না হওয়া পর্যন্ত স্বামীকে যৌনসম্পর্ক স্থাপন, এমনকি চুম্বন-আলিঙ্গন ইত্যাদি থেকে বাধা দেওয়া এবং স্বামীর সঙ্গে সফরে যেতে অস্বীকার করার অধিকারও স্ত্রীর রয়েছে। (দুররে মুখতার)

উপরের বিবরণ থেকে স্পষ্ট হল যে, মোহর একজন স্ত্রীর শরীয়ত কর্তৃক প্রদত্ত অধিকার। কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট ভাষায় তা আদায়ের তাকিদ এসেছে।

এসব তাকিদ উপেক্ষা করে কেউ যদি মোহর আদায়ে টালবাহানা করে কিংবা একেবারে আদায় না করারই নিয়ত করে তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে সে ব্যাভিচারী হিসেবে গণ্য।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মোহর আদায় না করার নিয়তে কেউ যদি কোনো নারীকে বিয়ে করে। আর আল্লাহ তাআলা ভালো করেই জানেন যে, তার মোহর আদায়ের নিয়ত নেই তাহলে সে আল্লাহ তাআলাকে ধোঁকা দেওয়ার স্পর্ধা দেখাল এবং অন্যায়ভাবে নারীর লজ্জাস্থান ভোগ করল। কেয়ামতের দিন সে ব্যভিচারীরূপে উপস্থিত হবে। (আহমদ)

আল্লাহ তাআলার নিকট অত্যন্ত ভয়ানক একটি পাপ এই যে, কোনো নারীকে বিয়ে করে নিজের চাহিদা পূরণের পর তাকে তালাক দিয়ে দেওয়া এবং মোহর আদায় না করা।

হাদিসে আরো বলা হয়েছে, তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন অবশ্যই হকদারের হক পরিশোধ করতে হবে। এমনকি (শিংধারী কোনো ছাগল শিংবিহীন ছাগলকে অন্যায়ভাবে গুঁতা মেরে থাকলে) শিংবিহীন ছাগলের সামনে শিংধারীকে উপস্থিত করে বদলা নিতে দেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন


Link copied