আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ● ৯ পৌষ ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
তারেক রহমানের দেশে ফেরা: ১০ রুটে বিশেষ ট্রেন

তারেক রহমানের দেশে ফেরা: ১০ রুটে বিশেষ ট্রেন

টার্গেট কিলিংয়ের আতঙ্ক

টার্গেট কিলিংয়ের আতঙ্ক

চোরাই ফোন ব্যবসার এপার-ওপার নেটওয়ার্ক সিলেট

আইএমআই নম্বর পরিবর্তনে শক্তিশালী চক্র
চোরাই ফোন ব্যবসার এপার-ওপার নেটওয়ার্ক সিলেট

পুরুষও যখন গর্ভবতী দুর্নীতিতে অসুস্থ চিকিৎসা খাত

পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট
পুরুষও যখন গর্ভবতী দুর্নীতিতে অসুস্থ চিকিৎসা খাত

নিরাপত্তায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩ ব্যক্তির তালিকা তৈরি

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, দুপুর ১০:৩৭

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অতি ঝুঁকিতে থাকা ৪৩ রাজনীতিবিদ, ছাত্রনেতা, সাংবাদিক, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী এবং জুলাই যোদ্ধার একটি তালিকা তৈরি করেছে সরকার। এদের মধ্যে ২০ জনকে এরই মধ্যে তাঁদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় গানম্যান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কারও কারও বাসভবনের নিরাপত্তায় ইউনিফর্মধারী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা যেসব ব্যক্তির ব্যক্তিগত গাড়ি নেই, তাঁদের নিরাপত্তা কীভাবে দেওয়া হবে- এ নিয়ে ভাবনায় পড়েছে পুলিশ। তাঁদের নিরাপত্তায় বিকল্প ভাবনা মাথায় নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা।

পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু যেসব ব্যক্তির ব্যক্তিগত গাড়ি নেই, তাঁরা রিকশা বা অন্য কোনো ভাড়া করা বাহনে চলাফেরা করে থাকেন। গাড়ি ছাড়া এভাবে পুলিশের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা দুরূহ ব্যাপার। আবার পুলিশেরও গাড়ি সংকট রয়েছে। যে কারণে তাঁদের গাড়ি সরবরাহ করা কঠিন। এমন প্রেক্ষাপটে ওই সব ব্যক্তির সার্বক্ষণিক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কীভাবে চলমান রাখা হবে, এ বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, গাড়ি ছাড়া নিরাপত্তা দেওয়াটা পুলিশের নিরাপত্তার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ১৩ জনের একটি তালিকা পেয়েছি, যাঁদের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। তাঁদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ ১৩ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনের নিরাপত্তায় গানম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। ৯ জনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কারণ, তাঁদের বেশিরভাগেরই ব্যক্তিগত গাড়ি নেই।

সূত্র জানায়, পুলিশের বিশেষ শাখা ৩০ জনকে গানম্যান দেওয়ার জন্য তালিকা করেছে। এরই মধ্যে ১৭ জনকে সাদা পোশাকে গানম্যান নিয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকিতে থাকা ২০ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে গানম্যান। এ তালিকায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক রয়েছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির ছয় নেতা এবং প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সম্পাদকসহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা ২০ জনকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ডিজিএফআই, এনএসআই ও এসবিসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যাঁরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের একটি তালিকা করেছে। তাঁদের মধ্যে অনেককে গানম্যান দেওয়া হয়েছে, তবে অনেকে গানম্যান নিতে চাননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে। শহীদ শরিফ ওসমান হাদির পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তা। তাঁদের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন আমাদের সময়কে বলেন, তাঁর দলের সভাপতি নুরুল হক নূর এবং তাঁর নিরাপত্তায় গানম্যান দেওয়া হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ গত রাতে আমাদের সময়কে বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ

মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের নিরাপত্তার জন্য আবেদন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। গতকাল পর্যন্ত ১৭ জনের আবেদন পেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। ২৫ জনের মতো সরকারি কর্মকর্তাও অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। তারাও নিজেদের অনিরাপদ ভাবছেন। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন ঢাকা-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থী তানভীর আহমেদ (রবিন) ও পাবনা-৩ আসনের হাসান জাফির তুহিন।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ চাওয়া হয়েছে। তাঁর পাশাপাশি জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপি মনোনীত মেহেরপুর-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাসুদ অরুণ, গোপালগঞ্জ-১ আসনের সেলিমুজ্জামান সেলিম ও গোপালগঞ্জ-৩ আসনের এসএম জিলানী, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ শাখাওয়াত হোসাইন হিরু নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, যাঁরা অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের আবেদন প্রথমে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করে দেখবে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর তাঁদের অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে অস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় একজন করে বেসরকারি সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়োগ দিতে পারবেন। পাশাপাশি তাঁরা সীমিত সময়ের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিতে পারবেন। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগ নীতিমালা, ২০২৫ জারি করেছে।

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি ও প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়োগ চান এবং আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিতে চান, তাঁদের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তা ঝুঁকির মাত্রা এবং ব্যক্তি সম্পর্কে তদন্তের পর আবেদন অনুমোদন করা হবে।

মন্তব্য করুন


Link copied