স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ চীন সরকারের উপহার হিসেবে এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতাল অবশেষে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলায় হতে যাচ্ছে। জেলার সদর উপজেলার দারোয়ানী টেক্সটাইল এলাকার পতিত মাঠের সারে ২৫ একর জায়গার উপর নির্মিত হবে এই হাসপাতাল। স্থাপনে ইতোমধ্যে মাষ্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও বিভিন্ন স্থাপনার ব্যয়ে প্রাক্কলন তৈরির জন্য নোটিশ জারী করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়।
গত ৩০ অক্টোবর মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারী করা নোটিশে স্বাক্ষর করেন উপ-সচিব ফাতিমা তুজ জোহরা ঠাকুর। অতীব জরুরী হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে নোটিশটি।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকালে নীলফামারী গণপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাকিউজ্জামান বলেন, চিঠিটি আমরা পেয়েছি। চীন সরকারের উপহার এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন বিষয়ে আমরা ডিজিটাল সার্ভে শুরু করেছি।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, দারোয়ানী টেক্সটাইল এলাকায় ৬০ একরেরও বেশি সরকারী জায়গা রয়েছে। চীন সরকারের এক হাজার হাসপাতাল স্থাপনে ২৫একর জায়গা প্রয়োজন। ২৫একর জায়গা হাসপাতালের জন্য দিয়ে মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নির্দেশ মোতাবেক মন্ত্রনালয় থেকে হাসপাতাল স্থাপনে ব্যয় এবং ডিজাইনের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায় নীলফামারীতে হচ্ছে হাসপাতালটি।
চীন সরকারের হাসপাতাল স্থাপনে নীলফামারীকে নির্বাচন করায় অন্তবর্তী সরকার ও চীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও নীলফামারী-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেল বলেন, হাসপাতালটির ফলে এলাকার স্বাস্থ্য সেবার মান যেমন বাড়বে তেমনি অর্থনৈতিক ভাবে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবে। উন্নত চিকিৎসা নিতে এখন আর দেশের বাহিরে যেতে হবে না।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী ও নীলফামারী-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতিফ বলেন, নীলফামারীর মানুষ আজ গর্ববোধ করছে। এতবড় একটি হাসপাতাল বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে এই জেলার। হাসপাতালটির ফলে নীলফামারীতে বিভিন্ন এলাকার মানুষরা চিকিৎসা নিতে আসবেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর নীলফামারী জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা আজ অনেক গর্বিত, সকল জল্পনা-কল্পনা পর চীন সরকারের বিশেষায়িত হাসপাতালটি নীলফামারী জেলায় হচ্ছে। আগে জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষদের ভারত-চীন-সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া যেতে হতো। এখন তাদের আর কোথাও যেতে হবে না। সকল রোগের জটিল চিকিৎসা এখন চীনের উপহার বিশেষায়িত হাসপাতালে পাবে।
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সাবেক সভাপতি সোহেল পারভেজ বলেন, চীন সরকারের হাসপাতাল স্থাপন নিয়ে সরকারের সিলেকশ যথাযথ। টেক্সটাইল মাঠ সবদিক থেকে এগিয়ে অন্যান্য জায়গাগুলোর চেয়ে। সকল সুযোগ সুবিধা পাবে হাসপাতালটি স্থাপনের ক্ষেত্রে। এছাড়া ব্যবসায়ী ভাবে আরো সমৃদ্ধ হলো আমাদের জেলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চীনের উপহার এক হাজার শষ্যা বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মানে স্থান নির্ধারণে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রাধাণ্য দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে হাসপাতালটি তিস্তা অববাহিকা অঞ্চল। যা চীনের বেধে দেয়া কিছু সর্তকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। বিশেষ সুবিধা হলো সৈয়দপুরে বিমানবন্দর রয়েছে। চীন এটাই দেখছেন। পাশাপাশি নীলফামারীর দারোয়ানী থেকে উত্তরা ইপিজেডের দুরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার। এই ইপিজেডে রয়েছে প্রায় ছয়শত চীনা নাগরিক। যা ইপিজেডে কর্মরত। যেহেতু সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। পাশাপাশি উত্তরা ইপিজেড সংলগ্ন ভাষা সৈনিক খয়রাত নগর রেলস্টেশন রয়েছে। রেলমন্ত্রণালয়ের একটি পরিকল্পনায় স্টেশনটিকে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মানের সীধান্ত নেয়া হয়েছে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি বান্যিজিক ও পর্যটন যাতায়াতসহ বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ তথা নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সাথে চীনের একটি নতুন গেটওয়ে খুলে যাবে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সুত্রটি আরো জানায়, নীলফামারীতে চীনা হাসপাতাল নির্মিত হলে অনেক রোগী এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে আনা যাবে সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে। সড়ক পথে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সাথে নীলফামারীর মহাসড়ক সংযুক্ত রয়েছে। আন্তজার্তিক পর্যায়ে নেপাল, ভুটানের রোগীরা সড়ক পথে এবং এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে সহজে বিশেষায়িত হাসপাতালের নিকটতম সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে। এছাড়া তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীন যেহেতু বাস্তবায়ন করবে সেহেতু তিস্তা নদীপথে রাখা হবে স্পিটবোড এ্যাম্বুলেন্স। যেহেতু তিস্তা ব্যারেজের পাশে দুইটি হেলিপ্যাড নির্মিত রয়েছে, তাই ঘাটে তীরে রোগীকে হেলিকপ্টার এ্যাম্বুলেন্স করে বিশেষায়িত হাসপাতালের অবতরন করতে পারবে কম দুরত্বের মধ্যেই। এছাড়া রেলপথ ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতাল ঘিরে। ফলে হাসপাতালটির স্থান হিসাবে নীলফামারীর দারোয়ানীর এলাকার জমিটি একদম উত্তম।
নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, চীনের বিশেষায়িত হাসপাতালে যে সুবিধা থাকবে তা হলো, এটা একটা আন্তজার্তিক পর্যায়ের বেইজড হসপিটাল হবে। যেখানে বাংলাদেশসহ নেপাল-ভুটান-ভারতের লোকজন চিকিৎসা করতে আসবে। যাকে টারশিয়ারি হাসপাতাল বলা হয়। বিষয়টি হলো এমন যে সমস্ত জটিল রোগের জন্য রোগীদের বাহিরের দেশে যেতে বলা হয়, সেই সমস্ত অত্যাধুনিক টার্মিনাল কেয়ার বেইজড উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে এই বিশেষায়িত হাসপাতালে। যেমন নিউরো সার্জারি, নিউরোলজি, কিডনি বা নেফ্রলজি, ক্যান্সার, ব্রেস্ট ইনফারলিটি, ইউরোলজি হ্যাঁ কার্ডিলজি ডিপার্টমেন্টসহ লিভার কিডনি বনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন ও হার্টের সমস্ত বড় বড় অপারশন ট্রান্সপ্লান্টেশন এই সমস্ত রোগের জন্য এইসব হাসপাতাল।
সুত্রমতে, চীন বাংলাদেশে তিনটি হাসপাতাল নির্মান করতে চেয়েছেন। সর্বপ্রথমটা হবে উত্তরবঙ্গেই। আরেকটি চট্রগ্রামে ও ঢাকায় একটি। এই তিনটি হসপিটাল হবে সুপার স্পেশালিস্ট হসপিটাল।