মমিনুল ইসলাম রিপন: রংপুরে তিন দিনব্যাপী শুরু হওয়া বিভাগীয় ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে গতকাল শুক্রবার একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেছেন কয়েক লাখ মুসল্লি। বৃহৎ জামাতে অংশ নিতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা। নামাজ শেষে দোয়া করেন দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য। জুমআ’র নামাজে অংশ নিতে সকাল থেকেই ইজতেমা ময়দানে মুসল্লির ঢল নামে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) পৌনে দুইটার সময় ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে ইমামতি ও জুমাপূর্ব বয়ান করেন, রংপুরস্থ তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বী মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ইউসুফ। আজ শনিবার আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে ইজতেমা শেষ হবে।
এর আগে, ফজরের নামাজ আদায় পরবর্তী হেদায়েতি বয়ানে ড. মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, দাওয়াতের মেহনত হলো নবুওয়াতি মেহনত। এ মেহনত খুলুসিয়াত ও আজমতের সঙ্গে যারা দ্বীনের কাজ করবে তাদের যে কোনো আমলের ফজিলত বহুগুণ বেড়ে যায়। বয়ানে বলা হয়, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যেককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে জানমাল দিয়ে মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।
পরে সকাল ১০টায় স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষক এবং অন্য পেশাজীবীদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোরে আম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া এ ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের অবস্থান নেয়ার জন্য অসংখ্য পয়েন্ট করা হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে আগে থেকেই উপরে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। রংপুর বিভাগের আট জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা একসাথে সেখানে অবস্থান নিয়ে বয়ান শুনছেন।
প্রতিদিন ফজর, যোহর, আছর ও মাগরিবের নামাজের পর দেশ ও বিদেশের মুরব্বিরা বয়ান পেশ করছেন। ইজতেমায় বেশির ভাগ বয়ান বাংলা ভাষায় করা হচ্ছে। এছাড়াও বিদেশী মুরব্বিরা আরবি ও ইংরেজী ভাষায় বয়ান করছেন। সেগুলো দোভাষীর সাহায্যে বাংলায় অনুবাদ করে মুসল্লিদের শোনানো হচ্ছে।
রংপুর নগরীর ৪ নং আমাশু কুকরুল এলাকায় ৮০ একর জমির বিস্তৃত এলাকা জুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বিভাগীয় ইজতেমা। ২০১০ সাল থেকে রংপুরে ইজতেমা হয়ে আসছে। তবে এবারই প্রথম বিভাগীয় পর্যায়ে এ ইজতেমা হচ্ছে। ইজতেমা সফল করতে আমাশু কুকরুল এলাকার মাঠজুড়ে শামিয়ানা টাঙানো, পানির লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ, সাইকেল গ্যারেজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
রংপুর বিভাগের ৮ জেলাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। লাখো মুসল্লি ও বড় জামাতে জুমার নামাজে অংশ নিতে ভোর থেকে হাজার হাজার মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে ছুটে আসেন। মূল ময়দানে জায়গা না পেয়ে আশপাশের খালি জায়গায় অবস্থান নিয়ে নামাজ আদায় করেন কয়েক হাজার হাজার মুসল্লি। অনেকেই পাটি, পলিথিন, চট ও পত্রিকা বিছিয়ে খোলা জায়গায় জুমার নামাজ আদায় করেন।
রংপুর নগরীর ধাপ এলাকার সাংবাদিক আমানত আলী বলেন, গত বছরও রংপুরের ইজতেমায় জুমার নামাজ পড়েছি। এবার বিভাগীয় ইজতেমা হওয়ায় কয়েকলাখ মানুষের সঙ্গে নামাজ আদায় করলাম। খুব ভালো লাগলো। আল্লাহর অশেষ রহমত এবং আমার সৌভাগ্য যে, এত মানুষের সাথে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেছেন।
হুমায়ুন কবির মানিকও বলেন, সুযোগ পেলেই এরকম বড় জামাতে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি। দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছি, খুব ভালো লাগছে।
সবুজ উদ্দিন নাতি সঙ্গে নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। তিনি জানান, ‘জুমার নামাজ আদায়ের জন্য সকালেই এসেছি। নাতিসহ নামাজ আদায় করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। কাউনিয়া থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি ও তার পরিবার জুমার নামাজ আদায় করেছেন।
রাজনৈতিক কর্মী তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, প্রতিবারেই ইজতেমায় আসি। আজ শুক্রবার রংপুরের স্মরণকালের বড় জামায়াতের সাথে জুমার নামাজ আদায় করলাম। আলহামদুলিল্লাহ। খুবই ভাল লাগলো। কেননা একসঙ্গে অনেক মুসল্লির নামাজ আদায় খুবই তৃপ্তির বিষয়।
ইজতেমা মাঠে তিনদিন অবস্থানরত মুসল্লিরাও রংপুরের সর্ববৃহৎ জামায়াতের সাথে জুমার নামাজ আদায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, বিভাগীয় ইজতেমা উপলক্ষে এবং মাঠে জুমার নামাজ আদায়ের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও রয়েছেন সদস্যরা। প্রশাসন ও ইজতেমা আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী রয়েছেন, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই। তবে, নিরাপত্তা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
শনিবার দুপির ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। যেখানে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত ও শান্তি কামনা করা হবে। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রংপুরের তিন দিনব্যাপী বিভাগীয় ইজতেমা শেষ হবে।