আর্কাইভ  রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫ ● ৯ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫
জয়ের জটিল সমীকরণ

জয়ের জটিল সমীকরণ

হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ
সীমাহীন বর্বরতা
হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

হাসিনার পলায়ন উদযাপনের জনস্রোতে কেন এত গুলি, কেন এতো আক্রোশ

হাসিনার পলায়ন উদযাপনের জনস্রোতে কেন এত গুলি, কেন এতো আক্রোশ

রংপুরের নির্বাচন যে বার্তা দিয়ে গেল

শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, সকাল ০৯:৩৯

Advertisement Advertisement

এহ্‌সান মাহমুদ

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এই পদে বিজয়ী হলেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া ৯ প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হয়েছেন। ২২৯ কেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির মোস্তফা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল (হাতপাখা) পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন (হাতি) পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট। নৌকা প্রতীক নিয়ে ডালিয়া পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট। তিনি জামানত রক্ষা করতে পারেননি।

৪ লাখ ২৬ হাজার ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ৭৯ হাজারের কিছু বেশি লোক। ভোট পড়েছে ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

রংপুর শহরকে জাতীয় পার্টির নিজের ঘর হিসেবে ধরা হয়। সেখানে জাতীয় পার্টি জয় লাভ করবে- এটি অনুমেয়ই ছিল। তারপরও সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এতটা শোচনীয় অবস্থা হবে- এটি আগে অনুমান করা যায়নি। এটি সত্য, আওয়ামী লীগের ভোট দু'ভাগে ভাগ হয়েছে। এক ভাগ হাতি মার্কার লতিফুর রহমান মিলন (হাতি) পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট। অন্য ভাগে নৌকা প্রতীক নিয়ে ডালিয়া পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট। কিন্তু এ দু'জনের ভোট যোগ করলে যে অঙ্কটা পাওয়া যায়, সেটিও তো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তির হতে পারে না। বিশেষ করে যখন এই নির্বাচনে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এবং সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর জামানত বাতিল হওয়ায় কয়েকটি বিষয়ে ধারণা পরিস্কার হতে পারে। জামানত বাতিলে কার লাভ হয়, এমন প্রশ্নের সোজা উত্তর হতে পারে- নির্বাচন কমিশনের। কারণ নির্বাচনী ব্যয় বহনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পাশাপাশি প্রার্থীদের জামানত থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণও নেহায়েত কম নয়। জামানতের অর্থ থেকে আয়ের একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে- গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামানত বাতিলের ফলে সাড়ে ৩ কোটি টাকা আয় হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের। সেই নির্বাচনে ১ হাজার ৮৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সংসদ নির্বাচনের আইন অনুযায়ী, কোনো আসনের নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম ভোট পেলে সংশ্নিষ্ট প্রার্থীর জামানত বাতিলের বিধান রয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৪৪০ জনের মতো প্রার্থী তাঁর আসনের প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোটও পাননি। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীকে ২৫ হাজার টাকা করে জামানত দিতে হয়। সেই অনুযায়ী ১ হাজার ৪৪০ প্রার্থীর জামানত ছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আইন অনুযায়ী, এ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থ আয়ের সুযোগও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। যদিও রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর জন্য এই জামানত হারানোর ঘটনাকে অযোগ্যতা হিসেবেই দেখানো হয়। তবে এবার সরকারদলীয় এই প্রার্থীর জামানত বাতিলের কারণ খুঁজতে গিয়ে নানা সমীকরণ সামনে চলে এসেছে। এই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যরা ভোটে অংশগ্রহণ না করলেও নৌকার পরাজয়ের পেছনে তাদের একটি ভূমিকা ছিল। তারাই জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিয়ে নৌকা প্রতীককে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেওয়ার পেছনে কাজ করেছে। আবার কেউ বলছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন, তাই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে গুরুত্ব না দিয়ে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যাই ঘটুক না কেন, এই নির্বাচনে অন্তত দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে- প্রথমত, ইভিএম ব্যবহারে আরও ভাবতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভোট নিয়ে সবচেয়ে উচ্চারিত অভিযোগের একটি হলো- একজনের ভোট আরেকজনের দিয়ে দেওয়া। রসিক নির্বাচনে তা দেখা যায়নি। 

রংপুর সিটি নির্বাচনে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সামনে ভ্যাসলিনের ছোট কৌটা রাখা হয়েছিল। ইভিএম মেশিনে আঙুলের ছাপ মেলাতে ভোটারের হাতে ভ্যাসলিন ঘষেছেন কর্মকর্তারা। অনেকটা সময় ঘষাঘষির পরও অনেক ভোটারের আঙুলের ছাপ মেলেনি। সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্র এবং রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্রে ভোটারদের কাউকে হাত ধুয়ে আসতে বলা হয়েছে আবার কাউকে লেবু ঘষে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ইভিএম ত্রুটির কারণে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান প্রথমে ভোট দিতে পারেননি। ভোটকক্ষে ১৫ মিনিট অবস্থান করেও ভোট দিতে না পেরে ইভিএম নিয়ে হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। পরে আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পরে দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় ভোট দিতে পেরেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন স্বীকার করেছেন, কোনো কোনো কেন্দ্রে আঙুলের ছাপজনিত সমস্যায় ভোটাররা ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাঁদের একটি ভোট দিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লেগেছে। এত সমস্যা নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবে কেন?

লেখক : সহ-সম্পাদক, সমকাল

মন্তব্য করুন


Link copied