আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫ ● ৪ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫

সৈয়দপুর বিমানবন্দর হচ্ছে আঞ্চলিক হাব

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩, সকাল ০৭:০০

Advertisement Advertisement

ডেস্ক:  নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার জটিলতা কেটেছে। নতুন করে জমি অধিগ্রহণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেয়েছে সৈয়দপুর ও সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর। গত ২ অক্টোবর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। এই জরিপ পরিচালনায় দক্ষিণ কোরিয়ান একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয় সিভিল অ্যাভিয়েশন। ইতোমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ একটি মাস্টারপ্ল্যান করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আশপাশের ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলায় জমির পরিমাণ প্রায় ৫০০ একর। অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। ওই বছরই কয়েক হাজার মালিককে নোটিশ দেওয়া হয়। তৈরি করা হয় বিমানবন্দরের নকশাও। কথা ছিল ভূমি উন্নয়ন কার্যক্রমের পর চার বছর সময়সীমার মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ করা হবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ায় আদতে আটকে যায় পুরো কার্যক্রম।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ জানান, রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমান, ও বেসরকারি অপারেটর ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও নভোএয়ার এখান থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের পঞ্চম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

জানা গেছে, আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে কক্সবাজারের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর সৈয়দপুর। দেশের সবচেয়ে উত্তরের এই বিমানবন্দরটি ১৩৬ দশমিক ৫৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। রাজধানী ঢাকা থেকে ২৬০ কিলোমিটার উড্ডয়ন দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ৪৮ মিনিট। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর যাত্রী পরিবহন ছাড়াও নেপাল, ভুটান ও ভারতের সেভেন সিস্টার্সখ্যাত সাত প্রদেশের ভ্রমণকারীদের অন্যতম পছন্দ বাংলাদেশি এ বিমানবন্দর।

সৈয়দপুর পৌঁছে এরপর আশপাশের যে কোনো স্থলবন্দর ব্যবহার করে প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক প্রতিবেশী দেশগুলোয় ভ্রমণ করে। সৈয়দপুর থেকে নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বের সেভেন সিস্টারসখ্যাত ৭ রাজ্যের নিকটতম বিমানবন্দরগুলো আকাশপথে যেতে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট সময় লাগে। ত্রিদেশীয় ভ্রমণকারীরা এখন ভেঙে ভেঙে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করছেন। এটি আন্তর্জাতিক রূপ পেলে ওই তিন দেশের বিদেশযাত্রীরাও ভৌগোলিকভাবে কম দূরত্বের কারণে সৈয়দপুরকে বেছে নেবে। এতে বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টর সম্প্রসারণের পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব পাবে। এখান থেকে কার্গো বিমান চলাচল করলে খুব সহজেই দেশের উৎপাদিত পণ্য, বিশেষ করে কৃষিপণ্য সহজেই, স্বল্পসময়ে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভুটান ও ভারতে পরিবহন করা যাবে। এতে করে কৃষকদের অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।

বেবিচক কর্মকর্তারা বলছেন, এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য নেপাল অনেকাংশে ভারতীয় বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। ভারতের নিজের বাণিজ্য বিশাল পরিসরের হওয়ায় পণ্য পরিবহনে নেপালকে বাড়তি সময় দিতে হয়। সেক্ষেত্রে সৈয়দপুর থেকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ‘চিকেন নেক’সদৃশ স্বল্প দূরত্বের সড়ক ও আকাশপথ উভয় রুটে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সুবিধা পেতে চায় নেপাল। গত বছর নেপালের পোখারায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বৈঠকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে সুতা রপ্তানির প্রস্তাবও দিয়েছে দেশটি।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাইওয়ালি বাংলাদেশ সফরকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করার প্রস্তাব করেন। ভুটানের অর্থনীতিবিষয়ক সেক্রেটারি কারমা শেরিং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিবেশী ভারত-ভুটান ও নেপালের সৈয়দপুর বিমানবন্দর নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। তাই যতদ্রুত সম্ভব এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করতে পারলে তা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক করে গড়ে তুলতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আরও অনেক অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। উল্লেখযোগ্য হলো, রানওয়ে সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, কার্গো টার্মিনাল, কন্ট্রোল টাওয়ার, পাওয়ার হাউস, পাম্প হাউস, ফায়ার স্টেশন, প্রশাসনিক ভবন, অপারেশন ভবন, ভিআইপি ও ভিভিআইপি লাউঞ্জ, আবাসিক কোয়ার্টারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। এর জন্য এখন প্রয়োজন টাকা। নেপাল-ভুটান এই বিমানবন্দরের উন্নয়নের জন্য টাকা বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছে। টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, বিমানবন্দরটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু করে ১৯৭৯ সালে। ৬ হাজার ফুট রানওয়ে সম্পন্ন এই বিমানবন্দরটি দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর একটি। বিমানবন্দরটিতে বর্তমানে প্রতিদিন ৩০টি ফ্লাইট ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করে।

মন্তব্য করুন


Link copied