আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫ ● ৪ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫

‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২, দুপুর ১১:৫৮

Advertisement Advertisement

ডেস্ক: ‘ওই যে পূর্ব তোরণ-আগে/দীপ্ত নীলে, শুভ্র রাগে/প্রভাত রবি উঠল জেগে/দিব্য পরশ পেয়ে,/নাই গগনে মেঘের ছায়া/যেন স্বচ্ছ স্বর্গকায়া/ভুবন ভরা মুক্ত মায়া/মুগ্ধ-হৃদয় চেয়ে।’ বাংলার রূপমুগ্ধ কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা নববর্ষকে কবিতার পঙ্ক্তিতে আবাহন করেছিলেন। মহামারি করোনার নাগপাশ থেকে অনেকটা মুক্ত হয়ে আজ বাংলার আকাশে উঠেছে নতুন বছরের নতুন সূর্য। আজ পহেলা বৈশাখ। বঙ্গাব্দ ১৪২৯-এর প্রথম দিন। আজ বাঙালির একান্ত উৎসবের দিন। বাঙালি আজ বিশ্ব বাঙালি হয়ে তাই নব-আনন্দে বরণ করে নেবে নতুন বছরকে।

পুরোনো জরাজীর্ণকে দূরে ঠেলে আজ স্বপ্ন দেখার দিন, নতুন আলোয় অবগাহনের দিন। বাংলার ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আমেজ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। হাজার বছরের ঐতিহ্যের বহমানতায় আজ বাঙালি হারিয়ে যাবে বাঁধাভাঙা উল্লাসে। লাখো মানুষ আজ ঘরের বাইরে ছুটে আসবে বাঁধভাঙা উল্লাসে মাততে।

মহামারিকালের প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ভরে যাবে বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। আজকের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো সব গ্লানিকে মুছে ফেলে সবাই গেয়ে উঠবে নতুন দিনের গান। ১৪২৮-এর আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। জাতিধর্মনির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে একসঙ্গে গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।

বাংলার গ্রাম, শহর, বন্দর, পথঘাট-সব জায়গায় আজ দোলা দেবে পহেলা বৈশাখ। নাচে-গানে, ঢাকে-ঢোলে, শোভাযাত্রায় পুরো জাতি বরণ করবে নতুন বছরকে। খোলা হবে বছরের নতুন হিসাব নিয়ে হালখাতা। চলবে মিষ্টিমুখ।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর রমনার বটমূলে বর্ষবরণের কেনো আয়োজন ছিল না। কিন্তু এবার বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে ছায়ানট। ‘নবীন আশা জাগল যে রে আজ/ নূতন রঙে রাঙা তোদের সাজ’ স্লোগানে রাগালাপের মধ্য দিয়ে আজ সকাল ৬টায় রমনার বটমূলে শুরু হবে ছায়ানটের বাংলা নববর্ষবরণের আয়োজন। এবারের প্রতিপাদ্য ‘নব আনন্দে জাগো’। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় ও স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় রেখে এবারের আয়োজনে শিল্পীসংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে।

গত দুইটি বছরে সে অর্থে বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন ছিল না। গতবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদেই সীমাবদ্ধ ছিল বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন। মঙ্গল শোভাযাত্রা হয় সীমিত পরিসরে। সেখানে ছিল না আমজনতার অংশগ্রহণ। কিন্তু এবার বাঙালি নববর্ষ ১৪২৯-কে বরণ করে নেবে উৎসব আর উদ্দীপনায়। ‘নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’ প্রতিপাদ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে।

আর মেটিভ হিসাবে এবার শোভাযাত্রার সম্মুখে লাল টেপা পুতুলের পরিবর্তে থাকবে সাদা টেপা পুতুল, যা নির্মলতার প্রতীক। এবারের প্রতিপাদ্য-‘নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে শুরু না হয়ে টিএসসির সামনে থেকে শুরু হবে। মেট্রোরেলের কাজ এখনো সমাপ্ত না হওয়ায়ই এমন সিদ্ধান্ত।

পহেলা বৈশাখ মানেই পুরোনো, জরাজীর্ণকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া। জাতির জীবনের নানা পর্যায়ের বিগত ক্লান্তি, ক্ষোভ, দুঃখ, হতাশা ভুলে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে সবাই। অসাম্প্রদায়িকতার দীক্ষা নিয়ে সব আস্ফালনের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার সংকল্প ব্যক্ত করবে। পহেলা বৈশাখ পালনের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এটি সারা দেশে ছড়িয়ে গেলেও এ উৎসব মূলত এসেছে গ্রামবাংলার মাটির কোল থেকে। তবে বাঙালি এখন বিশ্ববাঙালি। বিশ্বের যেখানেই থাকুক বাঙালি, আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠবে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নিতে।

মন্তব্য করুন


Link copied