আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫ ● ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

► এক চুক্তি, চার সমঝোতা স্মারক ও এক কর্মসূচি সই
একাত্তর ইস্যু দুবার মীমাংসিত, বললেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী
বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

উল্টো বাড়ছে দিনদিন, চলছে শুধুই আলোচনায়
রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা

‘রিসোর্ট দ্বীপ’ হিসাবে সন্দ্বীপকে গড়তে চাই

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, দুপুর ০৪:৩৪

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  সমতলের সঙ্গে সন্দ্বীপের যাতায়াত সহজ করতে বঙ্গোপসাগরে চালু হয়েছে ফেরি সার্ভিস। এর মাধ্যমে দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলার সঙ্গে ফেরি যুগের সূচনা হলো। এই ফেরি সার্ভিস নিয়ে সন্দ্বীপবাসীর মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা তৈরি হয়। এ উপলক্ষ্যে সোমবার সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠে বেলা ১১টায় বর্ণাঢ্য সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে সকালে উপদেষ্টাদের নিয়ে নির্ধারিত ফেরি ‘কপোতাক্ষ’ বঙ্গোপসাগরের আরেক প্রান্ত সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া প্রান্তে যায়। সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে পৌঁছার পর ফেরি সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহণ উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় আরও ৫ উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

 

সন্দ্বীপে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করতে সুধী সমাবেশে যোগ দেন ৬ উপদেষ্টা। এম সাখাওয়াত হোসেন ছাড়া অপর ৫ উপদেষ্টা হলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং সড়ক পরিবহণ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এছাড়া অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, সন্দ্বীপ শুধু দ্বীপবাসীর জন্য নয়, এটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। আমরা সন্দ্বীপকে একটি ‘রিসোর্ট দ্বীপ’ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই, যেখানে পর্যটন, অর্থনীতি এবং শিক্ষার নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। অনুষ্ঠানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই ফেরিঘাটের নামকরণ করা হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ হওয়া সন্দ্বীপের দুই বীরসন্তান সৈকত ও মাহিনের নামে। এই ঘাট হবে আমাদের গর্বের প্রতীক।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পর্যটন উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা যেন কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয়। সন্দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করে টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার তার বক্তব্যে বলেন, সন্দ্বীপের মানুষ সারা বছর মাছ, মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ফেরি সার্ভিস চালুর ফলে দ্বীপের কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত আরও সমৃদ্ধ হবে। সন্দ্বীপের পণ্য এখন দ্রুত মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে পারবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।

সন্দ্বীপের সন্তান এবং সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, সন্দ্বীপের মানুষ বহু বছর ধরে এই স্বপ্ন দেখেছে। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এই প্রকল্পের নেপথ্যে যারা ছিলেন, তাদের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন ও ফরিদা আখতারকে, যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। সন্দ্বীপবাসীর প্রতি আমার আহ্বান, এই নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সবাই একসঙ্গে কাজ করুন। সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসাবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা এবং সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।

শহিদপরিবারকে সম্মাননা : উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক সমাবেশে শহিদ সৈকত ও মাহিনের পরিবারের হাতে ১০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন এবং আরও ২০ লাখ টাকার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় শহিদপরিবারের সদস্যরা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সন্দ্বীপের ইতিহাসে আজকের দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জানা যায়, ২০১২ সালে সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপে দুপ্রান্তে জেটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দশ বছর ধরে জেটিগুলো অব্যবহৃত থাকার পর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ফেরি সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কিন্তু অবকাঠামো জটিলতায় সেই সিদ্ধান্ত আটকে ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পান সন্দ্বীপের সন্তান মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। উপদেষ্টা ফাওজুলের তদারকিতে অবকাঠামো নির্মাণ ও ফেরি সার্ভিস চালুর কার্যক্রমে গতি আসে। ১৯ মার্চ দুপুরে নির্ধারিত ফেরি ‘কপোতাক্ষ’ পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া প্রান্ত থেকে যাত্রা করে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাটে। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবার সন্দ্বীপের যাতায়াতব্যবস্থায় নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে সন্দ্বীপে কয়েক লাখ মানুষ যুগের পর যুগ শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় দ্বীপ অঞ্চলের মানুষের মাঝে নতুন করে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

মন্তব্য করুন


Link copied