নিউজ ডেস্ক: আবরার ফাহাদ স্মরণে নির্মিত আগ্রাসনবিরোধী স্মৃতিস্তম্ভের মূলনীতি বাস্তবায়ন করা গেলে এই অঞ্চলের মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদ কায়েমে যারা ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে, তাদের স্মরণ করে স্থাপনা নির্মাণে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।
তখন কাউকে টু শব্দ করতে দেখিনি। অথচ আমরা যখন আবরার ফাহাদের স্তম্ভ করতে গেলাম, তখন অনেকের গাত্রদাহ এবং সমালোচনা দেখলাম।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর পলাশীতে ‘আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসিফ মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ কায়েমের পেছনে যারা ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে, তাদের স্মরণ করার জন্য বিভিন্ন স্থাপনা হয়েছে। সেখানে শত শত, হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সে সময় অনেককেই আমরা টু শব্দ করতে দেখিনি। সেগুলো উন্নয়ন হিসেবে দেখা হয়েছে।
‘অথচ এটি (আবরার ফাহাদকে নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ) নির্মাণ করতে মাত্র ৩৯ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে এবং রাস্তা মেরামতসহ পারিপার্শ্বিক সংস্কার কাজ নিয়ে মোট খরচ দাঁড়াবে ৮৫ লক্ষ টাকা। আমরা যখন আবরার ফাহাদকে স্তম্ভ করতে গেলাম, তখন এই ব্যয় নিয়ে অনেকের অনেক গাত্রদাহ এবং সমালোচনা দেখেছি। এর পেছনে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। ’
আসিফ বলেন, আমরা যখন জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিস্তম্ভ বা ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই স্মরণ রাখার জন্য এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাই, তখন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ফ্যাসিবাদী স্ট্যাবলিশমেন্ট এবং সুশীল সমাজের রিপোর্ট ও সমালোচনার মুখে পড়ি।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে যে যাদুঘর হচ্ছে, সেটার খরচ নিয়ে নানা ধরনের রিপোর্ট ও সমালোচনা আমরা দেখছি। কিন্তু বিগত সময়ে ভাস্কর্য করতে গিয়ে হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। দুর্নীতি করা হয়েছে, সেটি নিয়ে সুবিধাভোগী স্ট্যাবলিশমেন্টের কোনো সাড়া শব্দ আমরা দেখি না। ফলে এটাকে কোনোভাবেই অন্য কোনো লেন্সে দেখার সুযোগ নেই। এটা গণঅভ্যুত্থান এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের নায়কদের এক ধরনের আড়াল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। এই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় থাকব।
এসময় তিনি আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, যেদিন আবরার ফাহাদ শহীদ হন, সেদিন ভোরে আমরা তার শহীদ হওয়ার খবর জানতে পারি। তখন আমরা কয়েকজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছিলাম। আমরা যোগাযোগ শুরু করি যে এর একটি প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। তখন একটি গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। অনেকেই সন্দিহান ছিলেন এই ঘটনার প্রতিবাদ করবেন কি না, অনেকের মন থেকে এই প্রশ্নও এসেছিল যে, আবরার ফাহাদ শিবির কি না, যেন শিবির হলে প্রতিবাদ করা যায় না।
তিনি বলেন, সেসময় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থিরা। সিসিটিভি ফুটেজ যেন গায়েব করা না যায় এবং এই ঘটনা যেন ধামাচাপা দেওয়া না যায়, সেজন্য তারা তুমুল প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করার জন্য বুয়েটের প্রশাসনিক রুমগুলো অবরোধ করেন তারা। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজুভাস্কর্য থেকে প্রথম মিছিল নিয়ে বের হই। তারপর অব্যাহতভাবে আবরার ফাহাদের বিচার চেয়ে আন্দোলন চলমান রেখেছি।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে পলাশী মোড়ে প্রথম আট স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। আগ্রাসনবিরোধী স্তম্ভ নির্মাণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা ভেঙে ফেলা হয়। ভেঙে ফেলা হলেও আবরার ফাহাদের স্মরণে নির্মিত আট স্তম্ভ বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে ছিল বিগত ছয় বছর। সেই স্তম্ভকে আমরা একই জায়গায় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছি এবং আজ বাস্তবায়ন হয়েছে।
আসিফ বলেন, এই আট স্তম্ভের কাঠামোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এর মূলনীতি। যদি এখানকার সবগুলো মূলনীতি বাস্তবায়নের লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন বা সফল হতে পারেন, তাহলে এই ব-দ্বীপের মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে। জুলাইয়ের প্রত্যেক শহীদের শহীদ হওয়ার যে অনুপ্রেরণা, তা এনেছে আবরার ফাহাদের আগ্রাসনবিরোধী লড়াই।