ডেস্ক: মিরপুর টেস্ট অনেক কিছুরই সাক্ষী হয়ে রইল। যে টেস্টে বলতে গেলে তিন দিন রাজত্ব করেছে বৃষ্টি। খেলা হয়েছে হাতেগোনা মাত্র দুই দিন। এমন টেস্টে রেজাল্ট আসাটাই হতো বিরল ঘটনা। কিন্তু ম্যাড়ম্যাড়ে এই টেস্টেও বাংলাদেশের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় জমে উঠল। বৃষ্টিকে অভিসম্পাত দেওয়া পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনাও বাড়ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অভিজ্ঞ তিন ব্যাটার লিটন, মুশফিক আর সাকিবের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে একসময় নিশ্চিত হারের দিকে যাওয়া ম্যাচটি ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছিল।
তবে শেষ পর্যন্ত সেই আফসোসই সঙ্গী। পড়ন্ত বিকেলে ড্রয়ের আশা জাগিয়েও হলো না। কানপুরে ভারত-নিউজিল্যান্ড প্রথম টেস্টের শেষ দিন দুই কিউই বোলার রাচিন রবিন্দ্র আর এজাজ প্যাটেলের অবিচ্ছিন্ন দশম উইকেট জুটিতে ভর করে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয়েছিল ভারতের। মিরপুরেও পাকিস্তানকে এমন কিছুরই সাক্ষী বানাতে চেয়েছিল টিম টাইগার্স। কিন্তু হতাশা ছাড়া আর পেল কী। পাকিস্তান ইনিংস এবং ৮ রানের ব্যবধানে ম্যাচ জিতেছে। এ নিয়ে টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট সিরিজও নিজেদের করে নিল তারা।
এর আগে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাড়মেড়ে ঢাকা টেস্টটি জমে উঠে চতুর্থ দিন মঙ্গলবার মাঠে খেলা গড়াতেই। ৪ উইকেটে ৩০০ ছুঁয়ে পাকিস্তানের ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমেই বিপর্যয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ফলোঅন এড়াতে পারেনি।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ঢাকা টেস্টের পঞ্চম দিনে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৫ রান। হাতে ছিল তিনটি উইকেট। ক্রিজে ছিলেন বিশ্বসেরা সাকিব আল হাসানও। কিন্তু তবুও লজ্জা এড়াতে পারলেন না।
৭ উইকেট হারিয়ে ৭৬ রান করে চতুর্থ দিন শেষ করার পর আজ শিশিরভেজা সকালে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ তাদের সবকটি উইকেট হারিয়ে করেছে মাত্র ৮৭ রান। ফলোঅন এড়াতে হলে করতে হতো ১০১ রান। অর্থাৎ ১৪ রান পিছিয়ে ছিল।
এদিকে ফলোঅনে ফেলার পর বাংলাদেশকে আবারও ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আরও হতশ্রী দশা লাল-সবুজ বাহিনীর। স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৫ রান তুলতেই চার চারটি উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগার বাহিনী। একে একে ফিরে গেছেন মাহমুদুল জয়, সাদমান, মুমিনুল এবং শান্ত।
প্রথম টেস্টে ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় টেস্টে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী মাহমুদুল হাসান জয়কে। কিন্তু অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেই খালি হাতে ফেরেন তিনি। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও করতে পেরেছেন মাত্র ছয় রান। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ ওভারে হাসান আলীর বলে বোল্ড হয়ে ফিরলেন এ ওপেনার।
জয় আউট হওয়ার চার বল পরই শাহিন আফ্রিদির বলে এলবিডব্লু হন সাদমান হোসেন। তিনি যোগ করেছেন কেবল ২ রান। সাদমান আউট হওয়ার সাত বল পর অধিনায়ক মুমিনুল হকও ফিরে গেলেন। হাসান আলীর ভেতরে ঢোকানো বল ব্যাটে খেলতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। এলবিডব্লুর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। মুমিনুল রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারলেন না। ৭ রান করে আউট হলেন মুমিনুল।
এরপর ফেরার মিছিল আরও দীর্ঘ করেন নাজমুল হাসান শান্ত। নবম ওভারে শাহিন আফ্রিদির করা প্রথম বলেই শাহিন আফ্রিদির গালিতে দাঁড়ানো ফাওয়াদ আলমের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হন নাজমুল। দেখে মনে হয়েছে যেন ক্যাচ শেখাচ্ছেন পাক ফিল্ডারদের।
তবে প্রথম চার ব্যাটার হতাশ করার পরই দলের হাল ধরেন অভিজ্ঞ দুই কান্ডারি লিটন আর মুশফিক। যেন ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে মেরামতের চেষ্টা করছেন তারা। তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে হারের শঙ্কা কিছুটা হলেও কমে আসে। তবে ব্যক্তিগত ৪৫ রানের মাথায় কাটা পড়েন লিটন দাস। ৩৪তম ওভারে সাজিদ খানের খাটো লেংথের বল টেনে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ফাওয়াদ আলমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। অথচ, শটটি আরামে নিচে খেলা যেত। এর মধ্য দিয়ে লিটন–মুশফিকের ১৫০ বলে ৭৩ রানের জুটি ভেঙে যায়। ২৫ রানে ৪ উইকেটের পর ৫ উইকেটে ৯৮ রান তোলে বাংলাদেশ।
লিটনের পর সাকিব ব্যাট করতে নেমে মিরপুরকে যেন নিজের করে নিলেন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে একের পর এক মাইলফলক স্পর্শ করেন। তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে চার হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করাসহ টেস্টে ন্যূনতম ৪ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ক্লাবে ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে নাম লেখালেন সাকিব।
মিস্টার সেভেন্টিফাইভের আগে গ্যারি সোবার্স, ইয়ান বোথাম, কপিল দেব, জ্যাক ক্যালিস ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরিদের মতো অলরাউন্ডার খেলোয়াড়রা এই ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন।
এদিকে, চা বিরতির ঠিক আগে আগে আফসোস বাড়ালেন মুশফিক। ব্যক্তিগত ৪৮ রানের মাথায় রানআউট হয়ে ফিরে যান তিনি। তবে মুশি ফিরলেও দারুণ ছন্দে ছিলেন সাকিব। তুলে নিয়েছেন ফিফটিও। এছাড়া তার সঙ্গে মেহেদী মিরাজও দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন। কিন্তু পাক অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান বাবর আজমের ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট হয়ে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। এ কারণেই হয়তবা মিরাজকে অনেকদিন মনে রাখবেন বাবর।
মিরাজের পর সাজিদ খানের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে আউট হন সাকিব আল হাসানও। এরপর ফিরলেন খালেদ।