আর্কাইভ  শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ ● ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুরে ১২ মামলায় গ্রেপ্তার ১৭৫       আহতরা যেই দলেরই হোক, চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী       ২৭শে জুলাই রংপুর বিভাগের আট জেলায় কারফিউ শিথিল       সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান বেরোবি প্রশাসনের       "শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে"      

 width=
 

ক্ষুদে কবিদের ছিল মিলন মেলা ॥ নীলফামারীতে ভিশন ২০৪১ ছড়া কবিতা লিখন প্রতিযোগতার পুরস্কার বিতরণ

রবিবার, ৩ মার্চ ২০২৪, সকাল ০৯:৪০

স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর পরিনত হয়েছে এক মিলন মেলায়। সেটিও ছিল হাজার হাজার বেশি ক্ষুদ্রে কবিদের। হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে সামনের সারিতে বসে আছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। 
শনিবার(২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এ মিলন মেলা উদ্বোধন করেন দেশ বরেণ্য কথা সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। 
“ভিশন ২০৪১, নীলফামারী” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।
এঅনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য সাহিত্যিক আখতার হুসাইন, অভিনেতা ও সঙ্গীত শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু, কবি ও শিশু সাহিত্যিক সুজন বড়–য়া। 
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুজার রহমান, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মসফিকুর ইসলাম রিন্টু প্রমুখ। 
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিল ক্ষুদে আবৃত্তিকার আনিকা কাশফিয়া ও বহাইরা তানজিম সিলভীয়া। 
আয়োজকরা জানান, ২০১৫ সাল থেকে ষষ্ঠ ধাপ পর্যন্ত সংগঠনটি তৈরী করেছে একলাখ ১৪ হাজার ক্ষুদে কবি। তারা প্রতিনিয়ত লিখছে ছড়া, কবিতা। হয়েছে এসব কবি। এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চম ধাপে আজ অতিথিরা ২৪ হাজার ক্ষুদে কবির অংশগ্রহনে তাদের লেখা কবিতা, ছড়ার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। 

ক্ষুদে কবিদের কবিতা নিয়ে প্রকাশিত দুটি বইয়ের মধ্যে একটি “আমাদের জাতির পিতা- আমাদের শ্রেষ্ঠ মিতা” সংকলনের পাতা উল্টে দেখা যায় আনন্দ নিকেতন মডেল স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী হিতৈষী ইসলাম আলভী ‘মুজিব তোমায় ভুলিনি মোরা’ শিরোনামের ছড়ায় লিখেছেন “সেই ছেলেটা এই ছেলেটা নাম হলো তার খোকা, দেশের জন্য করল লড়াই দিল স্বাধীনতা।------” তরণী বাড়ী কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আল মামুন ইসলাম লিখেছেন ‘শেখ মুজিবুর রহমান’-“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মহান মুজিবুর, তুমি মানে পুব আকাশে নতুন আলোর ভোর।--------” চড়চড়া বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ফেরদৌসি আক্তার মিমতি লিখেছেন ‘টুঙ্গিপাড়ার ছেলে’-“একটি ছেলে জন্মেছিল টুঙ্গিপাড়া গ্রামে, সেই ছেলেকে চিনত সবাই শেখ মুজিবুর নামে।-----”

“ভোর হলো দোর খোলো” শিরোনামে সংকলনের পাতা উল্টে দেখা যায় সুবনখুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী লাবনী রায় লিখেছেন ‘ধন্য মেয়ে’-“নয় বছরের মেয়ে আমি একটা শিশু হই, বাবা আমি স্কুলে যাব দাও খাতা-বই।----” প্রোণ কমিউনিটি প্রাইমারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী ববিতা রায় লিখেছেন ‘কণ্যা’- জাতীর পিতার যোগ্য কণ্যা নামটি যে তার শেখ হাসিনা, ছোটো থেকে স্বপ্ন দেখতে বাসত খুবই ভাল-বড় হয়ে আনলো সে যে দেশের জন্য আলো। ----” আদর্শ কিন্ডার গার্টেনের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আফশিন ইবনে (রাফি) সরকার লিখেছেন ‘স্বাধীনতা’- “বাংলা ভাষা মুখের ভাষা মুখের ছোঁয়া লাগে, এই ভাষাতে জীবনটাতে কত স্বপ্ন জাগে। -----” 

অনুষ্ঠানের শুরুতে গলা ফাটিয়ে খুঁদে কবিরা শ্লোগান তোলে “জয় বাংলা”। শুধু শহীদ মিনার চত্বর নয়, মুখোরিত হয়ে উঠে পুরো নীলফামারী জেলা শহর। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এরপর শিশুরা গেয়ে উঠেছিল “আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি-সাথী মোদের ফুলপরি”- আবার গেয়ে উঠে জয় বাংলা বাংলার জয়---
তাদের সেই সুরের ছন্দে ছন্দে গেয়ে উঠেছিল ছড়া “আমি হব সকাল বেলার পাখি, হাট্টিমাটিম টিম, ওই দেখা যায় তাল গাছ, আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই, নোটন নোটন পায়রা”। 
অতিমারী করোনার কারনে এতোদিন তারা থমকে গিয়েছিল। দীর্ঘ কয়েক বছর পর ফিরে এসেই খুঁদে কবিরা আগামীর নতুন এক বাংলাদেশের কথা বলেছে। লিখেছে “আমাদের জাতির পিতা- আমাদের শ্রেষ্ঠ মিতা” সেখানে তারা কবিতায় তুলে ধরেছে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার কথা। আবার তারা নিজেদের তুলে ধরেছে ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের “ভোর হলো দোর খোলোর” আদলে নিজের মতো করে  ছড়া কবিতা। সেই শিশু-কিশোররাই এ জেলার খুঁদে কবি। স্বপ্ন তাদের দেখাচ্ছেন স্মার্ট বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আর বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বপ্নের বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে নিরলশভাবে কাজ করছেন নীলফামারী-(২) সদর আসনের টানা ৫ বারের সংসদ সদস্য এবারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দেশ বরেণ্য আসাদুজ্জামান নূর। নূরের পৃষ্ঠপোষকতায় সহায়তা করছেন সেচ্ছাসেবী সংগঠন “ভিশন-২০৪১ নীলফামারী”। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ছড়া ও কবিতা লিখন প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল। জেলার ৪৪৫টি বিদ্যালয়ের ১ম থেকে ১০ম শ্রেণীর ২৪ হাজার শিক্ষার্থী জমা দিয়েছিল তাদের স্বরচিত ছড়া-কবিতা। 

অনুষ্ঠানের সভাপতি সেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিশন-২০৪১ এর প্রধান সমস্বয়কারী ওয়াদুদ রহমানের স্বাগত বক্তব্য পাঠ করেন খুদে কবি ও আবৃত্তিকার মাশরাফি রহমান আপন। স্বাগত বক্তব্যে জানানো হয়, নীলফামারীর শিল্প সাহিত্য, ও সংস্কৃতি চর্চাকে বেগবান করতে ভিশন সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় স্কুল শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধা ও প্রতিভা বিকাশে ছড়া ও কবিতা প্রতিযোগীতার আয়োজন শুরু করে ২০১৫ সালে। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত নীলফামারীর খুদে কবিদের লিখা নিয়ে চারটি সংকলন প্রকাশ করা হয়। প্রথম বার ১৬ হাজার খুদে কবিদের লিখা নিয়ে প্রথম সংকলনটি ছিল “আমার দেশ আমার মাটি”। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় সংকলনটির নাম করা হয়“ ছন্দে ছন্দে দুল আনন্দে”। এতে অংশ নেন ১৮ হাজার খুদে কবি। তৃতীয় সংকলনের নাম ছিল “আমার সোনার বাংলা”। এতে অংশ নেয় ২২ হাজার খুদে কবি। চতুর্থ সংকলনটির নাম দেয়া হয়েছিল “আমরা করবো জয়” । এতে অংশ নিয়েছিল ৩২ হাজার খুদে কবি অংশ। ওয়াদুদ রহমান বলেন, অতিমারী করোনার কারনে এই উদ্যোগ থামিয়ে রাখা হয়েছিল। যা এবার পুনরায় উজ্জবিত করা হলো। ফলে পঞ্চমবার খুদে কবিদের নিয়ে দুটি সংকলন বের করা হয়েছে। একটি “আমাদের জাতির পিতা- আমাদের শ্রেষ্ঠ মিতা” ও দ্বিতীয়টি ভোর হলো দোর খোলো। 
        বলতে গেলে নীলফামারীর খুদে কবিরা দেশ মাটি মায়ের কথা বলছে। গৌরব করতে শিখছে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। আর ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে মৌলবাদ জঙ্গীবাদ। এই খুদে কবিদের লেখাগুলো শেষতক কবিতা বা ছড়া হয়ে উঠেছে কিনা তা  খতিয়ে দেখার ব্যবস্থাও রাখা ছিল। যে সে বিচারক নয়, রাজধানী ঢাকার বড় বড় কবি ছড়াকার ও সাহিত্য স¤পাদকরা এসব কবিতা পড়েছেন। যাচাই-বাছাই করেছেন। প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ওঠে আসা এই খুদে কবিদের প্রত্যেককে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল আবৃত্তি গান ,নৃত্য সহ নানা আয়োজন।
        বলতে গেলে খুদে কবিদের ছড়া ও কবিতা ঘিরে এত কৌতূহল, এমন উৎসব সত্যি অবিশ্বাস্য! আসাদুজ্জামান নূর। নীলফামারী সদর তাঁর নির্বাচনী এলাকা তার। এখানে মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে অহর্নিশ লড়তে হচ্ছে তাঁকে। আর এ লড়াইয়ে তিনি হাতিয়ার করেছেন সংস্কৃতিকেই। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সামনে থেকে তারা কাজ করলেও, নেপথ্যে ছায়া হয়ে আছেন আসাদুজ্জামান নূর। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটি তার সচেতন প্রয়াস। 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আসাদুজ্জামান নূর অল্প কথায় হাজার হাজার খুদে কবিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ছড়া কবিতা লিখে সবাই কবি হবে না। তবে নিজেকে গড়ে নেয়া জরুরী। এজন্য সুকুমার বৃত্তির চর্চা করতে হবে। এটা আসলে মুভমেন্টের মতো। আন্দোলনের মতো। নুর বলেন ভিশন ২০২১ দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম এখন তার অগ্রযাত্রা সম্প্রসারিত করা হলো ভিশন ২০৪১।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কথা সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি কবিতা বলতে পারিনা- পারিনা গান গাইতে। তবে নীলফামারী দেখতে এসেছি নুর ভাইয়ের আমন্ত্রনে। আমি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী কথা বলবো। নীলফামারীর খুদে কবিদের এই আসর একদিন গ্রীনিস বুকে নাম লিখাবে এটি আমি বলতে পারি। নীলফামারী এগিয়ে যাবে এগিয়ে যাবে এখানকার শিশুরা অনেক দুর। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে চাই। মানুষের মতো মানুষ। দেশপ্রেমিক মানুষ, যে মানুষের আলোয় আলোকিত হবে বাংলাদেশ। প্রাচীন গ্রিস সভ্যতায় আঠারো বছর বয়স হলে প্রতিজ্ঞা করানো হতো, জন্মের সময় যে গ্রিস তুমি দেখেছ, মৃত্যুর সময় তুমি যেন তারচেয়ে অনেক বড় গ্রিস রেখে যেতে পারো। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্য দিয়ে একটি অনেক বড় বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই, যে বাংলাদেশ মেধার বাংলাদেশ, আতœমর্যাদাশীল বাংলাদেশ, গৌরবের বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে কবিতা বাছাইয়ের সঙ্গে যুক্ত কবি আখতার হুসেন বলেন, কবিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুব কড়াকড়ি করেছি আমরা। এর পরও এত কবিতা পাওয়া হয়েছে যে বিস্মিত না হয়ে পারিনি। তাদের কবিতা পড়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। আজ তাদের সঙ্গে দেখা হলো। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিশুরা অকৃত্তিম মানুষ। নিজের মনের কথা লেখে। তাদের সুযোগ করে দিন। উৎসব জমিয়ে রাখেন ঢাকার জনপ্রিয় ছড়াকাররা। শ্রোতারা দারুণ মুগ্ধ হয়ে ছড়া উপভোগ করেন। এদিন স্বরচিত ছড়া শোনান সুজন বড়–য়া। তার ছড়ায় উৎসবেরই কথা ছিল। এই যেমন, আজকে যেন নীলফামারী/ কবিতা আর ছড়ার বাড়ি/এক হয়েছে ছেলে উড়ো/ পিতা-মাতা শিষ্য-গুরু।

অভিনয় ও সংগীত শিল্পী ফজরুর রহমান বাবু অনুষ্ঠানে দুটি গান পরিবেশ করে মাত করে দেন। তার গানের সাথে শিশুরাও মঙ্গে নেচে উঠে। বাবুর গান দুটি ছিল -  নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে ধর বন্ধু আমার কেহ নাই- অপর গানটি ছিল ইন্দুবালা গো.ও.ও.ও তুমি কোন আকাশে থাকো জোৎ¯œা কারে মাখোকার উঠোনে পড়ো ঝড়িয়া ডুবিয়া মরিলাম, মরিয়া ডুবিলামডুবিয়া মরিলাম, মরিয়া ডুবিলাম তোমারি প্রেমে পড়িয়া ইন্দুবালা গো.....। বিপুল করতালির মধ্যে গান শেষ করেন তিনি। 

মন্তব্য করুন


 

Link copied