নিউজ ডেস্ক: অধ্যাদেশ নয়, সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছে ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। আর গণভোটের ব্যালটে দুটি প্রশ্ন রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) বিতর্ক এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
একটি প্রশ্ন থাকবে, যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো জনগণ অনুমোদন করে কিনা আরেকটি প্রশ্ন থাকবে, যেসব সংস্কারে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে, সেগুলো জনগণ চায় কিনা?
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে কমিশনের কার্যালয়ে বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এসব পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা ভার্চুয়ালি অংশ নেন। কমিশন সদস্যরা ছিলেন সশরীরে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, নানা পরামর্শ এলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। বুধবার (আজ) সকালে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বৈঠক হবে। এরপর দুপুরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে। ইতোমধ্যে গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। আজকের সংলাপে ঠিক হবে, গণভোট কীভাবে হবে। আশা করছি, বুধবারই তা নিষ্পত্তি হবে।
গত রোববার সংলাপে বিএনপি গণভোটে একমত হয়। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, দলটি নির্বাচনের দিন গণভোট চায়। জামায়াত সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদ কার্যকরের পর নির্বাচনের আগে গণভোট চায়।
সংস্কারের ৮৪ সিদ্ধান্তের ৭৩টিতে প্রায় সব দল একমত হয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে না থাকা, রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত কমিটির মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগসহ ৯টি সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে, নোট অব ডিসেন্ট জুলাই সনদের অংশ। যে দলের যে সংস্কারে আপত্তি রয়েছে, তারা সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে সেগুলো কার্যকরের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এমন বিধান রেখেই গণভোট হতে হবে।
জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দলের অবস্থান হলো, জুলাই সনদে থাকা ৮৪ প্রস্তাবকে একটি প্যাকেজ বিবেচনা করে গণভোট হতে হবে। জনগণ সনদ অনুমোদন করলে উচ্চকক্ষে পিআরসহ সব সংস্কার কার্যকরে বাধ্য থাকবে পরবর্তী সংসদ।
কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য বলেন, কোথাও নোট অব ডিসেন্টসহ গণভোট হয়নি। তার পরও বিএনপির মতো বড় দল যেহেতু প্রস্তাব করেছে, তাই সমাধান বের করার চেষ্টা করছেন তারা। কমিশনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেসব সাংবিধানিক সংস্কারে সব দলের ঐকমত্য রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ব্যালটে একটি প্রশ্ন থাকবে। যেগুলোতে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আরেকটি প্রশ্ন থাকবে। জনগণ যদি এগুলো অনুমোদন করে, তাহলে নোট অব ডিসেন্ট টিকবে না। যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো যদি অনুমোদন হয় গণভোটে, তবে তা সংবিধানের অংশ হবে। পরবর্তী সংসদ তা অনুমোদন করবে।
বিশেষজ্ঞরা আগে চার পৃষ্ঠার লিখিত মতামতে বিস্তারিত প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা গত ১৭ সেপ্টেম্বরের সংলাপে পেশ করে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে প্রথমে জুলাই সনদ কার্যকর করা হবে। তার পর গণভোট হবে। গণভোটে জুলাই সনদ জনগণের সম্মতি পেলে তা সংবিধান আদেশ জারির দিন থেকেই কার্যকর বলে গণ্য হবে।
বিএনপি এতে আপত্তি তুলে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষমতা নেই। গত রোববার বিএনপি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দেয়।
গতকাল মঙ্গলবারের বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অধ্যাদেশে গণভোট টেকসই হবে না। সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আগামী সংসদ গঠনের ৩০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা অধ্যাদেশগুলো অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করতে হবে। গণভোট অধ্যাদেশ-পরবর্তী সরকার সংসদে উত্থাপন না করলে পুরো সংস্কার ভেস্তে যাবে।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ৯৩ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অধ্যাদেশ দিয়ে সংবিধানের কোনো বিধান রহিত বা পরিবর্তন করা যায়। জুলাই সনদ কার্যকর করতে গেলে সংবিধানের অন্তত ৩৩টি পরিবর্তন আসবে, যা অধ্যাদেশে সম্ভব নয়। এর সাংবিধানিক আদেশ বা সংবিধানের সমতুল্য কোনো আদেশ জারি করতে হবে। বিএনপির আপত্তি থাকলে নাম পরিবর্তন করে 'জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ' করা যেতে পারে।
বৈঠকে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারসহ অন্যরা ছিলেন। ভার্চুয়ালি বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক। খবর- সমকাল