আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২২ অক্টোবর ২০২৪ ● ৭ কার্তিক ১৪৩১
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২২ অক্টোবর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: উত্তরবঙ্গে ঘনিয়ে আসছে শীত; তাপমাত্রা ১৭.৮       আড়াই শতাধিক এসআইকে অব্যাহতি       প্রবাসী সরকার: কী বলছে আ.লীগ ও ভারত       রংপুরে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল        ব্যারিস্টার সুমন আটক      

 width=
 

গভীর হচ্ছে জাপার সংকট

বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২, সকাল ০৯:৪৮

ডেস্ক: জাতীয় পার্টির (জাপা) সংকট দিনে দিনে বাড়ছে। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে লড়াইয়ে সংসদের পর আদালতেও ধাক্কা খেয়েছে। দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের আবেদন খারিজ হয়েছে আদালতে। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না তিনি।

নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে গতকাল বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হকের আদালত জি এম কাদেরের আবেদন খারিজ করেন। জি এম কাদেরের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য এবং জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, আদেশে তাঁরা সংক্ষুব্ধ। আজ অথবা আগামী রোববার জেলা জজ আদালতে আপিল করবেন। চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা চলছে। একই বিষয়ে নিম্ন আদালতে মামলা চলতে পারে না।
এর পেছনে জাপাকে চাপে রাখার রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে কিনা- এ প্রশ্ন উঠতেই পারে বলে মনে করেন রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তবে রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদ আদালতের আদেশে সন্তোষ জানিয়েছেন।
এরশাদ ও জি এম কাদের বর্জন করলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনে রওশনের নেতৃত্বে অংশ নেয় জাপার একাংশ। দলীয় সূত্রের খবর, এ কারণে তাঁর প্রতি আওয়ামী লীগের সহানুভূতি ও সমর্থন রয়েছে। তাই জি এম কাদেরের জাপার ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থন নিয়েও রওশনকে আড়াই মাসেও বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে পারেননি। আইনি লড়াইয়েও রওশনপন্থিদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না বছরখানেক ধরে সরকারের সমালোচনায় মুখর থাকা জি এম কাদের।

জি এম কাদেরের এক আইনজীবীর ভাষ্য, জেলা জজ আদালত হয়ে হাইকোর্টে যেতে হবে। জজ আদালতে কবে শুনানি হবে, কবে আদেশ আসবে, তা আগে থেকেই অনুমান করা কঠিন। তবে এ বছর হয়তো জি এম কাদের দায়িত্ব ফিরে পাবেন না। দলটির আরেক নেতা বলেছেন, 'বহু বছর আওয়ামী লীগের জোটে থেকে এবং একসঙ্গে ভোট করার পরও সরকারের সমালোচনা করায় সংকটে পড়েছেন জি এম কাদের।'

আদালতের আদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেননি জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। বিচারক পদ ছেড়ে রাজনীতিতে আসা চুন্নু সমকালকে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা বহালের বিষয়টি বোধগম্য নয়। রাজনৈতিক দলের বিষয়ে রাজনৈতিক সমাধানই ভালো।

নিষেধাজ্ঞায় রাজনীতি থেকে দূরে থাকা জি এম কাদেরের বক্তব্য জানাযায়নি। তিনি ১ নভেম্বরের পর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি। বক্তৃতা-বিবৃতিও দিচ্ছেন না। অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কিনা- প্রশ্নে মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, 'এর প্রয়োজন নেই। আদালত দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, কথা বলতে মানা নেই। জি এম কাদের রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরবেন। কাগজপত্রে সই না করলেই তো হলো।'

আগামী মাসে রংপুর সিটি করপোরেশনের ভোট। নিষেধাজ্ঞার কারণে মেয়র পদে জাপা প্রার্থীর মনোনয়নে সই করতে পারেননি জি এম কাদের। মুজিবুল হক চুন্নু প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করেছে মহাসচিবও প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবেন। কিন্তু যারা জাতীয় পার্টিকে সংকটে ফেলতে চায়, তারা যদি এটা (প্রার্থী মনোনয়ন) খুঁত ধরতে চায়, তাহলে করুক।'

জাপার সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার মামলায় গত ৩১ অক্টোবর আদালত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে জি এম কাদেরকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। আদেশ প্রত্যাহারে তাঁর আবেদনের শুনানি হয় ১০ নভেম্বর। রওশন এরশাদের পক্ষ নেওয়ায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর জিয়াউল হক মৃধাকে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জিয়াউল হক মৃধার মামলায় বলা হয়েছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতার সময় ২০১৯ সালের মে মাসে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন জি এম কাদের। ওই বছরের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান হন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এভাবে চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই। বরং এরশাদের অবর্তমানে চেয়ারম্যান হওয়ার কথা ছিল সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের।

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, গঠনতন্ত্রের ২০ এর ১(ক) উপধারা অনুযায়ী দলীয় চেয়ারম্যান যে কাউকে দলে যে কোনো পদ দিতে পারেন। দল থেকে বহিস্কারও করতে পারেন। ২০১৯ সালের কাউন্সিলে এই গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়েছে। জি এম কাদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। জিয়াউল হক মৃধা ওই কাউন্সিলের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মামলাই ভিত্তিহীন।

বছরখানেক কড়া ভাষায় সরকারের সমালোচনা করছিলেন জি এম কাদের। একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আর জোট নেই। জাপা আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধতে পারে- এমন গুঞ্জনও রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
জি এম কাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের সুরে কথা বলছেন- এমন কারণ দেখিয়ে তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে গত ৩১ আগস্ট থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদ চিঠি দিয়ে জাপার 'কাউন্সিল' ডাকেন। পাল্টা হিসেবে পরের দিন জাপার ২৪ এমপি জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করে স্পিকারকে চিঠি দেন। আড়াই মাসেও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্পিকারের স্বীকৃতি পাননি তিনি।
সূত্রের খবর, ৩১ অক্টোবর মুজিবুল হক চুন্নুসহ জাপার কয়েকজন এমপি স্বীকৃতির বিষয়ে তাগিদ দিতে গেলে স্পিকার জানিয়ে দেন, বিরোধীদলীয় নেতার পদে রওশনকেই চায় সরকার। প্রতিবাদে সংসদ বর্জনের ঘোষণা দেয় জাপা। ওই রাতেই রওশন তাঁর আহূত কাউন্সিল স্থগিত করলে জাপা সংসদে ফেরে। তখন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল রওশনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন জি এম কাদের। কিন্তু নিষেধাজ্ঞাসহ পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট, সংকট ও চাপ বাড়ছে জি এম কাদেরের।

জাপা সূত্রের খবর, দলটির এমপিদের সঙ্গেও সরকারের যোগাযোগ বেড়েছে। জি এম কাদেরের পক্ষে ফের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়া কঠিন। চেয়ারম্যানে পদে দায়িত্ব পালন করতে না পারায় কর্মীদের কাছে বার্তা যাচ্ছে- আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলে দলে নিয়ন্ত্রণ হারাবেন জি এম কাদের। খবর-সমকাল

মন্তব্য করুন


 

Link copied