ডেস্ক: দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এজন্য এগুলোকে কেপিআইভুক্ত (দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) করা হয়েছে। কিন্তু নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর বিমানবন্দরসহ কয়েকটি সরকারি স্থাপনা কেপিআইভুক্ত হলেও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় এগুলোতে দেখা দিয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। বিমানবন্দর ছাড়াও নীলফামারী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি, সৈয়দপুরের বাংলাদেশ লোকোমোটিভ অ্যান্ড ওয়াগন ওয়ার্কশপ, নেয়ামতপুরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ রয়েছে কেপিআইভুক্ত স্থাপনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সরকারি বিধিনিষেধ প্রতিপালন না হওয়ায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এসব বিষয় আমলে নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নানা নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ। গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
চলতি মাসের শুরুতে গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদনটি দিয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুসারে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বেবিচককে চিঠি দিয়েছে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং সুনাম কেপিআইয়ের সুষ্ঠু নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। নীলফামারী জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তদন্ত করে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটিবিচ্যুতি পাওয়া গেছে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
চিঠিতে বলা হয়, সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ভিআইপি গেটে প্রবেশাধিকার দুর্বল, ইভাকুয়েশন প্ল্যান নেই, কর্মরতদের এনএসআই কর্তৃক নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নেই। স্পর্শকাতর এলাকায় প্রবেশের পাস ব্যবস্থা নেই, সীমানা প্রাচীরের চারপাশে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়নি, ষান্মাষিক অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি।
সৈয়দপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র : সবজি বাগান উচ্ছেদ করা হয়নি, স্ক্যানার মেশিন/আর্চওয়ে গেট নেই, এনএসআই কর্তৃক ভেটিং করা হয়নি। গ্যাস ঝুলিয়ে ব্যবহার হয় না। গান রেঞ্জের আওতাধীন স্থাপনার ওপরে নজরদারি নেই, নীতিমালা অনুযায়ী দুর্যোগকালে এসওপি নেই।
নীলফামারী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি : স্থাপনার চারদিকে নীতিমালা অনুযায়ী সীমানা প্রাচীর নেই, আর্চওয়ে গেট নেই, ইভাকুয়েশন প্ল্যান নেই। কর্মরতদের গোয়েন্দা কর্তৃক ভেটিং করা হয়নি, প্রাচীরের ওপর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়নি, বিভাগীয় নিরাপত্তা প্রহরী নেই, কর্মরতদের এনএসআই কর্তৃক নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই, ইভাকুয়েশন প্ল্যান নেই, ষান্মাষিক অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি।
সৈয়দপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ : সীমানা প্রাচীরের উচ্চতা কম, নিরাপত্তা প্রহরী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার কারণে লোকজন ও প্রাণী স্থাপনায় প্রবেশ করে। ইভাকুয়েশন প্ল্যান নেই, দর্শনার্থী রেজিস্টার নেই, নিরাপত্তা প্রহরা চৌকি নেই, কর্মরতদের গোয়ান্দা কর্তৃক ভেটিং করা হয়নি, সীমানা দেয়ালের ওপর ওয়াই আকৃতির কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়নি।
বাংলাদেশ লোকোমোটিভ অ্যান্ড ওয়াগন ওয়ার্কশপ: আর্চওয়ে গেট ও স্ক্যানার নেই, হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করা হয় না, কর্মরতদের ভেটিং করা হয়নি, এনএসআই কর্তৃক নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নেই, সীমানা প্রাচীরের ওপর কাঁটাতারের বেড়া নেই, এসওপি নেই, ভিজিলেন্স টিম কর্তৃক পরিদর্শন হয় না, নিরাপত্তা কমিটির নিয়মিত বৈঠক হয় না, ষান্মাষিক প্রতিবেদন পাঠানো হয় না।
এসব বিষয় দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।
এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দর এলাকা একটি অতি স্পর্শকাতর এলাকা। এজন্য এটাকে কেপিআইভুক্ত করা হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার সঙ্গে দেশের সুনামের বিষয় জড়িত। গোয়েন্দা প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলার পরও তা না নেওয়া অপরাধের শামিল। এছাড়া রাষ্ট্রের অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দ্রুত আমলে নিয়ে বাস্তবায়ন করা জরুরি। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। তবে সৈয়দপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো দুর্বলতা এখানে নেই। কেপিআইভুক্ত এলাকা হিসেবে যা যা করা দরকার সব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ম্যানেজার এ. কে. এম. বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, বর্তমানের সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ভালো। যে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, এগুলো আগের পর্যবেক্ষণ। এগুলো সব বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাদের (গোয়েন্দা) রুটিন মাফিক প্রতিবেদন পাঠাতে হয়, তাই আগের প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছে। এই বিমানবন্দরে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। খবর-দেশ রূপান্তর