আর্কাইভ  বুধবার ● ৯ জুলাই ২০২৫ ● ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ৯ জুলাই ২০২৫
এখনও শহীদ মীর মুগ্ধকে অজান্তে খুঁজে ফেরে তার পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
এখনও শহীদ মীর মুগ্ধকে অজান্তে খুঁজে ফেরে তার পরিবার

রংপুরের  প্রিয় সহ জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
রংপুরের প্রিয় সহ জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

রংপুরে তিনজন সহ গেজেটে নাম নেই ২৩ জুলাই শহীদের, অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষায় পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
রংপুরে তিনজন সহ গেজেটে নাম নেই ২৩ জুলাই শহীদের, অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষায় পরিবার

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস পালনের আহ্বান

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস পালনের আহ্বান

তিস্তার চরে আয়ের পথ খুলেছে অনেক নারী পুরুষের

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩, দুপুর ১০:০৫

Advertisement

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর পাড় এখন শুধুই বালু চর। যেখানে মাস দুইয়েক আগেও ছিল অথৈই পানি। এখন সেই পানি শুকিয়ে যাবার ফলে জেগে উঠেছে চর। এ চর পলি বালু দিয়ে ভরাট হয়ে চাষাবাদ উপোযুগী হয়ে উঠেছে। তাই  স্থানীয় কৃষকরা আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও মিষ্টিকুমড়া রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যাপক পরিসরে তিস্তার চরে চাষাবাদ হওয়ার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে ওই এলাকার  অনেক পুরুষ ও নারী শ্রমিক। রবি মৌসুমে ছাড়া তেমন কোন কাজের সুযোগ নেই এ অঞ্চলে।

চরের কৃষকরা বলেন, এ বছর বন্যায় ভারত থেকে পানির সাথে কাঁদা পানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, তিস্তা নদীটি ভারতের গজলডোবা হয়ে নীলফামারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ১১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ নদীটি কুড়িগ্রাম অংশে পড়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার।

উপজেলা কৃষি অফিস জানান, চর বিদ্যানন্দ, চর তৈয়বখাঁ, চর পাড়ামৌলা, চর চতুরা, চর মনশ্বর, চর বড়দরগা, বুড়িরহাট, চির খিতাব খাঁ, চর গতিয়াসামসহ প্রায় ১৫টি চরাঞ্চলের ১২৫৬হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার আবাদ করা হয়ে থাকে। এ বছর উপজেলায় ২৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ, ১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, ৫০ হেক্টর জমিতে রসুন,১০হেক্চর জমিতে বাদাম, ৩৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মিষ্টি কুমড়া, ধনিয়া, পালং শাকের চাষাবাদ কম হওয়ায় সঠিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। 

সোমবার(১৩নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা গ্রামের কৃষক নজুরুল ইসলাম(৫২) সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তিস্তার চরে আমার ৫একর জমি আছে। এখানে বছরের অর্ধেকেরও বেশীসময় পানি জমে থাকলেও (এসময়) রবি মৌসুমে জেগে উঠে।  এখানে এবার ৪একর জমিতে আলু চাষ করছি। বাকী জমিতে পিঁয়াজ ও রসুন রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত করছি। এজন্য প্রতিদিন ১২/১৫জন নারী-পুরুষ কামলা(শ্রমিক) নেয়া হয়েছে। 

একই ইউনিয়নের কৃষক জসমত(৪০), রফিকুল ইসলাম(৩২) বলেন, ২একর জমি লিজ নিয়ে এবং নিজের কিছু জমিতে আলুর আবাদ করছি। সেখানে পিঁয়াজের আবাদ করবো। ঘড়িয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িরহাট এলাকার কৃষক কালামসহ কয়েকজন জানান, প্রতিবছর চর খিতার খাঁ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে আলুর আবাদ হয়। এবার বাজারে দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা আলুর পাশাপাশি পিঁয়াজ , রসুন, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, কালিজিরা, মুলা ধনিয়া,মেতি মসলা, আগাম ভূট্টা ও পালং শাক চাষ করছে। এজন্য জমি প্রস্তুতি চলছে। আগামী দশদিনের মধ্যে পুরো দমে চাষবাদ শুরু হবে। 

চর খিতাবখাঁয় কাজ করতে বুড়িরহাট বড়দরগা থেকে আসা মর্জিনা বেগম (৫০), শাহেনুর বেগম নামের দুজন নারী বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করলে মজুরি পাই ৩০০ টাকা। একই কাজ করে পুরুষরা পায় ৪০০ টাকা। মজুরিটা আর একটু বেশি হলে ভালো হতো। তার পরেও এসময়ে নিয়মিত কাজ থাকার কারণে পরিবার নিয়ে ভাল আছি। এইরকম কাজ সারা বছর থাকলে, আমার মত পরিবারগুলোর অনেক ভালো হতো।

জিয়ারুল মিয়া নামের এক শ্রমিক বলেন, কার্তিক-অগ্রায়ন মাসে এখন কাজের অভাব কম হয়। তিস্তার পানি শুকিয়ে গিয়ে বিশাল চর জাগে। চরে আলু পিঁয়াজ ছাড়াও অনকে চাষ হয়। অনেক কাজ। যা পাই তাই দিয়ে সংসার ভালো চলে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, রাজারহাট উপজেলার সবজির ঘাটতি তিস্তার চর এবং ছিনাই ইউনিয়নের পাঙ্গা চওড়া এলাকা থেকে পূরণ হয়েও দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। মানসম্মত ফসল ফলানোর জন্য আমাদের উপসহকারিগণ সর্বদাই কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, আমাদের কৃষকরা শীতকালীন আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন ও মিষ্টিকুমড়া রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে আগাম অনেক শাক সবজিও ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। যেহেতু কৃষকরা দাম ভালো পায়, তাই একটু বেশি পরিসরে আবাদে করার জন্য উৎসাহী হচ্ছেন। আমরা তাদেরকে সবসময় পরামর্শ দিয়ে আসছি।

মন্তব্য করুন


Link copied