আর্কাইভ  শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ ● ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুরে ১২ মামলায় গ্রেপ্তার ১৭৫       আহতরা যেই দলেরই হোক, চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী       ২৭শে জুলাই রংপুর বিভাগের আট জেলায় কারফিউ শিথিল       সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান বেরোবি প্রশাসনের       "শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে"      

 width=
 

নতুন সরিয়ে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনে লক্কড়ঝক্কড় বগি

সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪, দুপুর ১০:৩১

ডেস্ক: ঈদে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উত্তরের ট্রেনযাত্রীরা। উত্তরাঞ্চলের ট্রেনের নতুন বগি পরিবর্তন করে দক্ষিণাঞ্চলে সংযুক্ত করায় ভোগান্তি বেড়েছে তাদের। দীর্ঘ যাত্রাপথে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বিভিন্ন রুটের পুরোনো বগি দেওয়া হয়েছে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনে। এতে শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে দ্বিগুণের বেশি।

যাত্রীরা বলছেন, আগের রেলপথ মন্ত্রী ছিলেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। সে কারণে এই অঞ্চলের ট্রেনে কিছু সুবিধা ছিল। এ রুটের ট্রেনগুলোতে যাত্রী বেশি। সেবার মান বাড়ায় সড়কপথ বাদ দিয়ে অনেকে ট্রেনে যাতায়াত করতেন। কিন্তু রেলমন্ত্রী পরিবর্তন হওয়ায় তাদের ভাগ্যে যেন শনির দশা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লক্কড়ঝক্কড় বগি গছিয়ে দেওয়া হয়েছে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনে। 

সাধারণত ঈদের ছুটির আগে ও পরে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। ৩ এপ্রিল ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু এর দুই সপ্তাহ আগে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন চলছে বিলম্বে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ১ থেকে ৫ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে। গত ৩০ মার্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস তিন ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে।

ট্রেনের এক যাত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন থেকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে যাওয়ার সময় গাজীপুরের মৌচাক স্টেশনের অদূরে ঝ থেকে ঞ বগির সংযোগস্থলের নাট খুলে যায়। ঘটনাটি দ্রুত বুঝতে পেয়ে ট্রেন থামান চালক। এতে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি। পরে বিকল্প ব্যবস্থা করে মৌচাক স্টেশনের দ্বিতীয় লাইনে ট্রেনটি দাঁড় করানোর পর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে অন্যান্য ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক হয়। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস মেরামত করতে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা বলেন, লক্কড়ঝক্কড় বগির কারণে সংযোগ নাট খুলে যায়। এর পর প্রতিদিনই উত্তরের ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।

এদিকে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় এড়াতে ঢাকাগামী ৯টি ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে দাঁড়াবে না বলে গত বুধবার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর, চিলাহাটি ও বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি নেই।

যাত্রীদের অভিযোগ, উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, লালমনি এক্সপ্রেস, চিলাহাটি ও বুড়িমারী এক্সপ্রেস থেকে নতুন বগি সরিয়ে নিয়ে অন্য রুটের পুরোনো বগি সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে রেলমন্ত্রী ছিলেন পঞ্চগড়-২ আসনের এমপি নূরুল ইসলাম সুজন। নতুন রেলমন্ত্রী হয়েছেন রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি জিল্লুল হাকিম।

উত্তরের যাত্রীরা মনে করছেন, মন্ত্রী পরিবর্তনে সঙ্গে ট্রেনের বগি পরিবর্তনের যোগসূত্র রয়েছে। যেমন– নতুন কোচ দিয়ে ঢাকা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত যে ট্রেনটি চলত, সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ট্রেনটি এখন ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলে। ১ এপ্রিল কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস কমলাপুর ছাড়ে রাত ১১টা ১১ মিনিটে, যদিও ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিল রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। ওই দিন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করে রাজশাহী অভিমুখী পদ্মা এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস।

এর আগের দিন কমলাপুর স্টেশন থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও বেশ দেরিতে ছেড়ে যায়। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেনি। পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা ছাড়েনি।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিলম্বের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। ট্রেনগুলো ঢাকায় বিলম্বে এসেছে। তাই বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে।’ ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ঢাকা থেকে ৬৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের তালিকায় ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের নাম রয়েছে। ঢাকা যাতায়াতে এই দুটি জেলার মানুষের প্রথম পছন্দ ট্রেন। বিশেষ করে ঈদের সময় যাতায়াতে সবার ভরসা ট্রেন। অথচ এখন এই রুটের টেনগুলোর সিট এতটাই সংকীর্ণ, বসার সময় হাঁটু আটকে যায়। এর কারণ, পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও আন্তঃনগর ট্রেনে সংযুক্ত করা হয়েছে পুরোনো ও নড়বড়ে বগি।

ঈদ করতে বাড়িতে ফেরা সাবিহা আক্তার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আগে উত্তরের ট্রেনে সিটগুলো ভালো ছিল। এখন খুবই বাজে অবস্থা, সব সিট চাপা ও পুরোনো। চেয়ার কোচের চাবি কাজ করে না। জানালার লক ভাঙা। হাতল নড়বড়ে। সিটের সামনে জিনিসপত্র রাখার যে নেট, সেটিও ছেঁড়া। সব মিলিয়ে যাত্রীসেবার অবস্থা খুবই খারাপ।’ 

আমিনুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘এখন উত্তরের ট্রেনে নামাজের ঘর নেই। বাথরুমের কল নষ্ট। পানির অভাবে কেউ টয়লেট ব্যবহার করতে পারেন না। এসি কোচে এসি ঠিকমতো চলে না। বগির ভেতরে ময়লা। পরিষ্কার করার লোকও নেই। সিটে বসে মোবাইল চার্জ করার ব্যবস্থা আগে থাকলেও এখন নেই।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম আবদুল আউয়াল ভূঁইয়া বলেন, ‘আগে চীন থেকে আনা কোচ ব্যবহার করতাম। এখন ভারতীয় কোচ ব্যবহার করছি। এগুলোর স্থায়িত্ব বেশি। তবে এখন যে কোচগুলো ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলো প্রায় দেড় যুগ আগের। এ কারণে অনেক সুবিধা নেই।’ এসব অসুবিধা আস্তে আস্তে যাত্রীদের সহনীয় হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আগের কোচগুলো নতুন হলেও হালকা ছিল। এখনকার কোচগুলো বেশ শক্তপোক্ত। যাত্রীরা না বুঝে হইচই করছে। আমরা আশা করছি, এসব কোচ চালিয়ে নিতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবো না।’

উল্লেখ্য, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের চেষ্টায় পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-ঢাকা রুটে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয়। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-ঢাকা রুটে যাত্রা করে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ট্রেনটি মোট ১২টি বগি নিয়ে চলাচল করছিল। তবে কিছুদিন আগে সেসব বগি পরিবর্তন করে ট্রেনটিতে পুরোনো নড়বড়ে বগি সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব দেখে ক্ষোভ ছাড়ছেন উত্তরের যাত্রীরা। খবর-দৈনিক সমকাল

মন্তব্য করুন


 

Link copied