আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১১ অক্টোবর ২০২৪ ● ২৬ আশ্বিন ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১১ অক্টোবর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: সেই উর্মির বিষয়ে যা বললেন বাবা-মা       উইন্ডিজ শিবিরে প্রথম আঘাত মারুফার       প্রেমিককে বিয়ে করছেন শিরিন শিলা       সুন্দরগঞ্জে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জসহ ৪ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের মামলা        নীলফামারীতে আট কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার দুই      

 width=
 

নানা সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষার্থীদের মেসগুলো

রবিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২১, দুপুর ১০:৫৯

মো.  শহিদুল ইসলাম
দেশের অনেক শিক্ষার্থী বিশেষ করে উচ্চস্তরের (অনার্স, মাস্টার্স) অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভাড়া বাসা কিংবা মেসে থেকে পড়ালেখা করে থাকে। তবে মেসে অবস্থান করেই পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির সময়টুকু ব্যতীত শিক্ষার্থীরা মেসেই অবস্থান করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে (টিউশনি, পার্টটাইম চাকরি ইত্যাদি) মেসেই অবস্থান করে থাকে। সার্বিকভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী গড়ে প্রায় নয়/দশমাস মেসেই অবস্থান করে থাকে।
একজন মানুষের জীবন ধারণের জন্য প্রাত্যহিক জীবনে কী কী কতটুকু প্রয়োজন তা সবারই জানা। দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো; বাথরুম, শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদি সম্বলিত মানসম্মত একটি বাসস্থান। কিন্তু  অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, দেশের মেসগুলোতে অবস্থান করা প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী এসব প্রয়োজনীয় উপাদান যথাযথভাবে পায় না। পায় না বলার চেয়ে তারা এসব প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ থেকে মেস/ বাসার মালিকদের দ্বারা বঞ্চিত হয় বললেও ভুল হবে না। অথচ শিক্ষার্থীদেরকে যথেষ্ট পরিমাণে ভাড়া দিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া দিয়ে মেসে/বাসাগুলোতে থাকতে হয়। 
দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় মেসে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত নিম্নমানের জীবনযাপন করে থাকে। মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের তথ্যমতে অধিকাংশ মেসে গড়ে পনেরো /বিশ জনের জন্য একটিমাত্র শৌচাগার, একটি বাথরুম বিদ্যমান যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় এবং বিদ্যমান শৌচাগার, বাথরুমগুলোও মানসম্মত তথা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অধিকাংশ মেসেই নেই বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের বসবাসের কক্ষগুলোও তেমন উপযোগী নয়। অধিকাংশ মেসের কক্ষগুলো খুবই ছোট। কক্ষসমূহে নেই/ থাকে না পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।

মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মেসগুলো আরো বেশি অস্বস্তিকর এবং দুর্বিষহ। মেয়ে শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া ছেলে শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ/ তিনগুন বেশি। তবে মেসগুলোতে থাকে না/ নেই ব্যালকনি। ছাঁদ থাকলেও বিভিন্ন  কারণে তা ব্যবহার করতে দেয়া হয় না অথবা ব্যবহারের উপযোগিতা থাকে না। ফলে কাপড় শুকানোসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয় মেয়েদের। মেয়েদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হয় পিরিয়ডের সময়গুলোতে। একথা সবার জানা যে, পিরিয়ডের দিনগুলোতে মেয়েদের অনেক কিছু দরকার হয় যেমনঃ গরম পানি, বাড়তি পুষ্টিকর খাবার ইত্যাদি। মেয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্যমতে, মেসগুলোতে গরম পানির ব্যবস্থা নেই। মেসে অবস্থানের কারণে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে সিদ্ধ ডিম অনেক সহজলভ্য। কিন্তু পানি গরম করার ব্যবস্থা না থাকায় ডিম সিদ্ধ করে খাওয়াও সম্ভব হয় না। অধিকাংশ মেসে পানি গরম করা কিংবা আলাদা রান্না করার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার কিংবা অন্যকিছু ব্যবহারের অনুমতিও দেয় হয় না। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলোর জন্যেও নেই যথাযথ ব্যবস্থা। ফলে মেয়ে শিক্ষার্থীরা নানারকম স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। 


মেসগুলোতে বিদ্যমান নানা সমস্যা যেন শিক্ষার্থীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি এমন যে, মেসগুলোতে বিদ্যমান এসব সমস্যা যেন খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা যুগ যুগ ধরেই এসব সমস্যাকে সঙ্গী করেই তাদের শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে আসছে। একজন শিক্ষার্থী সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনোপকরণ না পেলে তার দ্বারা পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জন কীভাবে সম্ভব? হয়তো এ কারণেই আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী হওয়া সত্বেও অধিকাংশই মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। খুব সম্ভবত পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশের মেসগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে নিম্নমানের জীবনযাপন করে থাকে। এছাড়াও মেসগুলোর ভাড়া নির্ধারণেও নেই সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা। মালিকেরা যে যেভাবে পারেন ভাড়া নির্ধারণ করে থাকেন। মেস ভাড়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত। 

খুবই দুঃখের বিষয় যে, অধিকাংশ মেস মালিক মেসগুলো ভাড়া দিয়েই কর্তব্য শেষ মনে করেন। মাসে মাসে ভাড়া বাবদ যথেষ্ট পরিমাণ টাকা পেলেও মেসে বিদ্যমান এত এত সমস্যার সমাধানে তারা আগ্রহী হোন না মোটেও বরং নানারকম অযৌক্তিক ও বিধি বহির্ভূত বিধি-নিষেধ আরোপ করে থাকেন এবং এসব নিয়মের সামান্য এদিক-সেদিক হলেই কোন রকম নোটিশ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের মেস/বাসা হতে বের করে দেয়া হয়। সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীবান্ধব মেস/ বাসা খুঁজে পাওয়া খুবই দুঃসাধ্য একটি বিষয় যা মোটেই কাম্য নয়। শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নত না হলে তাদের কাছে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করা কীভাবে সম্ভব?

প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য যথাযথ শিক্ষা অর্জনের বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীরা যথোপযুক্ত জীবনমান না পেলে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন অনেক জটিল হয়ে পড়ে/ পড়বে। মেস বা বাসাগুলোতে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। মেস/বাসাগুলোর যাবতীয় সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ও মেস মালিকদের সমন্বয়ে যথাযথ ও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হব। মেসগুলোর ভাড়া নির্ধারণে সুনিদির্ষ্ট নীতিমালা বাস্তবায়নসহ অন্যান্য বিষয় যেমনঃ বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, আদর্শ কক্ষ, যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। 

শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের অবহেলা করে আদর্শ দেশ ও জাতি গঠন অসম্ভব। শিক্ষার্থীদের বসবাসরত স্থানসমূহের সমস্যা দূরীকরণে আর বিলম্ব করা যাবে না। মনে রাখতে হবে আমরা যদি শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে না পারি, তবে সার্বিকভাবে ক্ষতি আমাদেরই হবে।

লেখক: প্রভাষক (ভূগোল), রংপুর ক্যাডেট কলেজ, রংপুর । 
Email: sahidulislamges@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied