স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারীতে কালবৈশাখীর ঝড়ে সহস্রাধিক আধা পাকা ঘরবাড়ী ভেঙ্গে পড়েছে। এসময় ছোট-বড় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাঠে থাকা বোরো ধান, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের। বিদ্যুতের তারে গাছ উপরে ও ডাল ভেঙেপড়ে প্রায় ১৬ ঘন্টা ব্যাহত হয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা।
শুক্রবার(২৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলা সদর, কিশোরীগঞ্জ, জলঢাকা ও সৈয়দপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ওই ঝড় বয়ে যায়। প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী ঝড়ে এসব উপজেলার অন্তত সহস্রাধিক কাচা ঘরবাড়ির টিনের চালা উড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে ও ভেঙ্গে পড়ে। মাঠে থাকা ৮১৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলা সদর, কিশোরীগঞ্জ, জলঢাকা ও সৈয়দপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ওই ঝড় বয়ে যায়। কোথাও কোখাও ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এমন ঝড়ে ৮১৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ওই ৮১৬ হেক্টরের মধ্যে ভুট্টা ৫০০ হেক্টর, বোরো ধান ২৫০ হেক্টর এবং মরিচসহ অন্যান্য শাক-সবজি ৬৬ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপনের কাজ চলছে।
জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের দোগাছী গ্রামের সাদ্দাম আলী বলেন, হঠাৎ করে ঝড় শুরু হওয়ায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এসময় গ্রামের প্রায় শতাধিক কাচা ঘরের টিনের চাল বাতাসে উড়ে যায়। ভেঙে ও উপড়ে পড়ে বেশকিছু গাছপালা। পূর্ব কোন লক্ষণ না থাকায় মানুষের প্রস্তুতি ছিল না। এতে করে ক্ষতির পরিমান বেড়েছে।
জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের পূর্ব চৌধুরীপাড়া গ্রামের কৃষি শ্রমিক ইউনুস আলী (৫০) বলেন, রাইত সাড়ে ১২টার দিকো হঠাৎকরি বাতাস শুরু হইল। ওই বাতাসোত হুরমুরকরি মোর কাচা ঘরের ওপর গাছ পড়ি ঘরটা ভাঙ্গি পড়িল। মুই গরিব মানষি এলা ঘর কেমন করি ভালো করিম ভাবিবার পারেছ না। ঘর ঠিক করির যায়া মোর আর ঈদ হয়না।’
ওই গ্রামের রিক্সাচলক আমিনুর রহমান (২৫) বলেন, রাইতোত বউ-ছাওয়া নিয়া ঘুমাইছি। হঠাঃ করি বাতাসের ধাক্কাত কাঁঠাল গাছ ভাঙ্গি পড়ি ঘরটা নষ্ট হইল। কোন মতন করি বউ-ছাওয়া ধরি ঘর থাকি বেরে আসি বাঁচিছি।
নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, কাল বৈশাখীর তান্ডবে জেলা সদরের ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য গাছপালা ওপড়ে পড়েছে। কি পরিমানের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও বলা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিগণ ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ করছেন। তাদের কাছ থেকে তালিকা পাওয়ার পর ক্ষতির পরিমান জানা সম্ভব হবে।
নীলফামারী বিদ্যুৎ সরবরাহ ও পিনন বিভাগ নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নওশাদ আলম বলেন, শুক্রবার রাতের ঝড়ে সরবরাহ লাইনের ১৩টি খুটি ভেঙে পড়েছে। বড় বড় গাছ পড়ে সরবরাহ লাইনের তার ছিড়েছে। এ কারণে রাত সাড়ে ১২টা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। শনিবার আংশিক কিছু লাইন চালু করা গেলেও বিকাল ৪টা পর্যন্ত শহরের সকল লাইন চালু করা সম্ভব হয়নি। বন্ধ থাকা লাইনগুলো চালু করতে আরও কিছু সময় লাগবে।