আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: নীলফামারীতে গোপন বৈঠক থেকে জামায়াতের ৩ নেতা গ্রেপ্তার       পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ       

 width=
 

রংপুর নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে চাই জরুরি উদ্যোগ

শুক্রবার, ৮ অক্টোবর ২০২১, দুপুর ০৪:৪১

মো. শহিদুল ইসলাম

দেশে নগরসমূহের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। ভারীবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, মুহুর্তের মধ্যেই নগর পরিণত হয় জলাশয়ে। নগরগুলোতে জলাবদ্ধতা যেন মৌসুমি আপদে পরিণত হয়ে পড়েছে। দুঃখের বিষয় হল, এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্থায়ী ও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। দেশের সর্ব উত্তরের মহানগর রংপুরের বাসিন্দাদের তথ্য মতে, নগরে প্রতি বছরেই কিছুদিন জলাবদ্ধতায় কাটানো যেন নিদির্ষ্ট নিয়মে পরিণত হয়েছে। অবস্থা এমন যে, দেশের নগরগুলোতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা যেন কোন সমস্যাই নয়।

কিছুদিন পূর্বে মাত্র একদিনের বৃষ্টিতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থানকৃত মহানগর রংপুরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এলাকাবাসীর তথ্যমতে স্থানভেদে এক থেকে তিন ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল সেসব এলাকা, পানি ঢুকে পড়েছিল বাড়িঘরেও। স্থানীয় সুত্রমতে জানা যায়, নগরের প্রায় একলাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছে। জলাবদ্ধতার ফলে নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

শুধু রংপুর নয় দেশের অন্যান্য বড় নগরগুলোতেও জলাবদ্ধতা দিনদিন স্থায়ী সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। এখন কথা হল, জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের কি কোনো পথ নেই? কেন নগরীগুলো জলাবদ্ধতায় আপতিত হয় বারবার? মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যেই নগরের সূত্রপাত হয়। সুতরাং নগর প্রতিষ্ঠিত হবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী যেখানে বসবাসের জন্য যাবতীয় উপকরণ হবে আদর্শ মানের। অথচ বাংলাদেশের কোন নগরই বসবাসের জন্য আদর্শ নয়। জলাবদ্ধতা কোন নগর সিস্টেমের জন্য বিষফোড়ার মত।

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও কর্তৃপক্ষের অবহেলাই নগরসমূহে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। নগরীতে বিদ্যমান জলাশয়সমূহ নানাভাবে ভরাট হওয়ার ফলে বৃষ্টির বা বন্যার পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ফলে নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির হয়। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় দেখতে পাওয়া যায়, নগরগুলোতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থাও মানুষের নানামুখী কর্মকাণ্ড যেমন বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে দিনেদিনে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। দেশের নদীগুলো নাব্যতা হারানোর ফলেও নগরীয় জলাবদ্ধতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

জলাবদ্ধতা শুধু নগর নয়, যেকোন বসতি এলাকার জন্য খুবই সংকটের বিষয়। নগর অধিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এটির প্রভাব অসহনীয় আকার ধারণ করে থাকে। নানা রোগের প্রাদুর্ভাব, সর্বত্র ক্ষতিকর বর্জ্য ছড়িয়ে দেয়া, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি, পরিবহণ ব্যবস্থায় বিঘ্নতাসহ নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় নানারকম বিপদাপন্নতা ঘটিয়ে থাকে এই জলাবদ্ধতা। সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হয় মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণীসমূহ। এছাড়া নগরগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় জলাবদ্ধতার প্রভাব কেবল নগরেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং উক্ত নগরের প্রতি নির্ভরশীল অঞ্চল বা অঞ্চলসমূহ অত্যন্ত ক্ষতি বা ভোগান্তির কবল পড়ে। সার্বিকভাবে বলা যায়, কোন নগরে জলাবদ্ধতা কার্যত দেশের উন্নয়নকেই বাধাগ্রস্ত করে থাকে।

জলাবদ্ধতা দূরীকরণে দরকার নগর কর্তৃপক্ষের আন্তরিক মনোভাব এবং সঠিক নগর পরিকল্পনা ও সেটির যথাযথ বাস্তবায়ন। নগরসমূহে পর্যাপ্ত পরিমাণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা এবং কোন কারণে ড্রেনেজ সিস্টেম যাতে অকার্যকর হয়ে না পড়ে সে বিষয়ে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে নগরীয় ঘনত্ব ও পরিসর বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরী করতে না পারলে পরবর্তীতে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা খুবই দুঃসাধ্য একটি বিষয়। কাজেই নগর কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে খুবই দূরদর্শী ও কঠোর হতে হবে।

জলাবদ্ধতা নগরের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রেই মারাত্মক ক্ষতির সৃষ্টি করে থাকে। জলাবদ্ধতা সুষ্ঠু ও আদর্শ নগর ব্যবস্থাপনায় অন্যতম অন্তরায়। নগর কর্তৃপক্ষ ও নগরবাসীর সমন্বয়ে সঠিক পরিকল্পনা ও নকশার বাস্তবায়নে দেশের প্রতিটি নগর দ্রুতই জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে এটিই প্রত্যাশা।

লেখক: প্রভাষক (ভূগোল), রংপুর ক্যাডেট কলেজ, রংপুর । Email: sahidulislamges@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied