নজরুল মৃধা
দেখতে দেখতে কালের গহব্বরে হারিয়ে গেল একটি বছর। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ছয় বছর পূর্ণ করল আজ। প্রবাহমান সময়ের স্রোতে এক সময় আমাদের কাছে থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। বর্তমান হয়ে যায় অতীত। অতীত এক সময় ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়। এটাই কালের অমোঘ নিয়ম। এ নিয়মের বাইরে রংপুরও নয়। রঙ্গপুর অর্থাৎ রংপুর একটি ইতিহাস বিশ্রুত জনপদ। এ জনপদের রয়েছে অসংখ্য শৌর্যবীর্য বীরত্ব গাঁথা ইতিহাস। এর কোনটি রয়েছে ইতিহাস চর্চার অনিহার কারণে লুপ্ত অবস্থায় আবার কোনটি সুপ্ত ইতিহাস। এর কোনটি রয়েছে ইতিহাস চর্চার অনিহার কারণে লুপ্ত অবস্থায় আবার কোনটি সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে রোক চক্ষুর অন্তরালে। তেমনি রংপুর আগে প্রদেশ ছিল এ কথাটি অনেকের কাছেই অজানা। অনেক পথ মাড়িয়ে রংপুর বিভাগ হয়েছে। সিটি করপোরেশন পেয়েছি আমরা। সেই সাথে পেয়েছি মেট্রোপলিটন পুলিশ। ছয়বছরে মেট্রোপলিটন পুলিশের সফলতা অনেক।
উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলা নিয়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সপ্তম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০১২ সালের ২৮ জুলাই রংপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত করা হয়। তখন থেকেই রংপুরের জন্য আলাদা মহানগর পুলিশের দাবি উঠে । ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর আরপিএমপি আইনের খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর চূড়ান্ত অনুমোদিত পায়। ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রংপুর মহানগর পুলিশ বিল-২০১৮ উত্থাপন করা হলে তা কণ্ঠভোটে পাশ হয়। সবশেষে ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর মহানগর পুলিশের আনুষ্ঠানিক যাত্রার ঘোষণা করেন।
রংপুর সিটি করপোরেশনের আয়তন ২০৩ বর্গ কিলোমিটার হলেও ২৩৯.৭২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আরপিএমপি’র কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মূলত মাহিগঞ্জ থানা ও হারাগাছ থানার অধীনে কয়েকটি ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রংপুরের বুড়িরহাট রোডে বাড়ি ভাড়া নিয়ে আরপিএমপি পুলিশ লাইন্স চালু করা হয়। রংপুর মহানগর পুলিশ ৬টি থানা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। থানাগুলো হচ্ছে কোতয়ালি ,পরশুরাম ,তাজহাট ,মাহিগঞ্জ, হারাগাছ ও হাজীরহাট ।
রংপুর মহানগর পুলিশে প্রথম অবস্তায় একজন কমিশনার, একজন অতিরিক্ত কমিশনার, দুইজন উপকমিশনার, ছয় জন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার, বারো জন সহকারী কমিশনার, ২০ জন ইস্পেক্টর, ১২০ জন এসআই ও ৭৫০ জন কনস্টেবলসহ ১১৮৫টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
পুলিশের যাত্রা কিভাবে শুরু হল সে বিষয়ে একটু ধারণা নেয়া যেতে পারে। কারণ পুলিশের একটি অংশ হচ্ছে মেট্রোপলিটন অর্থৎ মহানগর পুলিশ।
পুলিশের ইতিহাস অনেক পুরনো। গবেষকদের মতে পুলিশ ছিল পুরাতন সভ্যতার যুগেও। রোম শহরে পুলিশ ছিল। সম্রাট অগাস্টাস সময়েও পুলিশ ছিল। খ্রিস্টপূর্বাব্দে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল যাদের কাজ ছিল পুলিশের। মানুসংগীতা, চিত্রলিপিতে সম্রাট অশোক, এবং প্রখ্যাত ভ্রমণকারীদের ইতিহাসে পুলিশের অস্তিত্ব রয়েছে। মধ্যযুগীয় সময়েও পুলিশি কার্যক্রম ছিল। সুলতান আমলে একটি সরকারী পুলিশি স্থর বিন্যাস ছিল। শহর অঞ্চলে কোতোয়াল পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন। মোঘল আমলের পুলিশি ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে এ তথ্য পেয়েছে ইতিহাসবিদরা। মধ্যযুগের পুলিশি ব্যবস্থা শেরশাহ শুরী দ্বারা প্রবর্তিত, সম্রাট আকবরের সময়কালে এই ব্যবস্থা আরও সংগঠিত হয়। সম্রাট তার ফৌজদারী প্রশাসনিক কাঠামো (সম্রাটের প্রধান প্রতিনিধি) মীর আদাল এবং কাজী (বিচার বিভাগ প্রধান) এবং কোতোয়াল (প্রধান বড় শহরে পুলিশ কর্মকর্তা) এই তিন ভাগে ভাগ করেন। এই ব্যবস্থা শহরের আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে খুব কার্যকর হিসাবে পরিগনিত হয়। কোতোয়ালী পুলিশ ব্যবস্থা ঢাকা শহরের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। জেলা সদর পুলিশ স্টেশনকে এখনও বলা হয় কোতোয়ালী থানা। মুঘল আমল কোতোয়াল একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে আবির্ভূত হয়।
শিল্প বিপ্লবের কারণে ইংল্যান্ডের সামাজিক ব্যবস্থায় অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্যার রবার্ট পিল একটি নিয়মতান্ত্রিক পুলিশ বাহিনীর অভাব অনুভব করেন। ১৮২৯ সালে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে পুলিশ গঠনের বিল আনেন। এর প্রেক্ষিতে গঠিত হয় লন্ডন মেট্রো পুলিশ। অপরাধ দমনে বা প্রতিরোধে এর সাফল্য শুধু ইউরোপ নয় সাড়া ফেলে আমেরিকাতেও। ১৮৩৩ সালে লন্ডন মেট্রো পুলিশের অনুকরনে গঠিত হয় নিউ্ইয়র্ক সিটি পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
১৮৫৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিকট হতে ভারত শাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় বৃটিশ সরকার । পিলস অ্যাক্ট ১৮২৯ এর অধীনে গঠিত লন্ডন পুলিশের সাফল্য ভারতে স্বতন্ত্র পুলিশ ফোস গঠনে বৃটিশ সরকারকে অনুপ্রানিত করে। ১৮৬১ সালে বৃটিশ পার্লামেন্টে পাশ হয় পুলিশ আইন। এই আইনের অধীনে ভারতের প্রতিটি প্রদেশে একটি করে পুলিশ বাহিনী গঠিত হয়। প্রদেশ পুলিশ প্রধান হিসাবে একজন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এবং জেলা পুলিশ প্রধান হিসাবে সুপারিটেনটেন্ড অব পুলিশ পদ সৃষ্টি করা হয়। ব্রিটিশদের ওই ব্যবস্থা এখনও বাংলাদেশ পুলিশে রয়ে গেছে।
১৯৪৭ সালে ভারতভাগের পর বাংলাদেশের পুলিশের নাম প্রথমে ইষ্ট বেঙ্গল পুলিশ রাখা হয়। পরবর্তীতে এটি পরিবর্তিত হয়ে ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ নাম ধারণ করে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত এই নামে পুলিশের কার্যক্রম অব্যহত থাকে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন ডিপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপি সহ প্রায় সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্য বাঙ্গালীর মুক্তির সংগ্রামে জীবনদান করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস হতেই প্রদেশের পুলিশ বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব হারিয়েছিল পাকিস্তাানের প্রাদেশিক সরকার। পুলিশের বীর সদস্যরা ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে ঢাকার রাজারবাগের পুলিশ লাইন্সে ২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বাতিল .৩০৩ রাইফেল দিয়ে পাকিস্তনী সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। ১২৬২ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের তালিকা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রে উল্লেখ রয়েছে বলে জানাগেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ পুলিশ গঠন করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর মতো আইন শৃঙ্খলা রক্ষা,সন্ত্রাস দমন, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভুমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ সাংগঠনিক রীতি অনুসারে ১০টি শাখায় বিভক্ত। প্রত্যেকটি শাখায় কার্যপ্রণালী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পালিত হচ্ছে। ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও এ শাখাগুলো বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসার কর্তৃক অনেকটা স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশ সংগঠনগুলো হলো: জেলা পুলিশ, সিআইডি পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, রেলওযে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, রিভার পুলিশ, মহানগর পুলিশ, অশ্বারোহী পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়াান, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স ইত্যাদি। রংপুর নগরীর মানুষের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে রংপুর মহানগর পুলিশ। রংপুর মহানগর পুলিশের পথ চলার আগে কিছু কথা না বললেই নয়। তা হল,১৮৬৯ সালে ২৩ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে রংপুর পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তা ৫৪ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করা হয়। পৌরসভার পুরনো এলাকাসহ ১২টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করে২ ০৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রংপুরকে দেশের দশম সিটি করপোরেশন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরুহয়। পৌরসভার সঙ্গে নতুন সংযুক্ত ইউনিয়নগুলো হলো-রংপুর সদরের রাজেন্দ্রপুর, সাতগাড়া, হরিদেবপুর, উত্তম, দর্শনা, তামপাট, তপোধন, সদ্যপুষ্করনী, পরশুরাম ও চন্দনপাট ইউনিয়ন। এছাড়াও এর সঙ্গে কাউনিয়া উপজেলার সারাই এবং পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নও সংযুক্ত করে সিটি করপোরেশনের আওতায় আনা হয়। এর পর দাবি উঠে মহানগর পুলিশের।
রংপুর অর্থাৎ রংপুরের নামকরণ সম্পর্কে একটু ধারণা নিতে পারি। হিন্দু শাস্ত্র মহাভারতে বিবৃত হয়েছে, পৌরাণিক যুগে প্রাগজ্যোতিষপুর রাজ্যের পরাক্রমশালী ক্ষত্রিয় রাজা ভগদত্তের প্রমোদ উদ্যান এখানো ছিল বলে এ স্থানটির নাম হয়েছে রঙ্গপুর। রঙ্গ অর্থ আনন্দ, পুর অর্থ আবাস। এটি ছিল আনন্দের আবাস। রাজা ভগদত্তের প্রাগজ্যোতিষপুর রাজ্যের সীমা ছিল পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ, আসাম ও ব্রহ্মদেশ, পশ্চিমে করতোয়া নদী, উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ এবং দক্ষিণে বগুড়া ও ঘোড়াঘাট। নামকরণ সম্পর্কে আরেকটি অভিমত হরো, কামরূপ রাজবংশের মহি রঙ্গ নামে একজন প্রভাবশালী রাজা ছিলেন। এই মহি রঙ্গের নামানুষারে এ জেলাটির নামকরণ হয়েছিল রঙ্গপুর। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে লেপচা ও ভুটিয়া ভাষায় তিস্তা নদীর নাম তিস্তাং। তিস্তাং শব্দের অর্থ বিস্তৃত। তাদের ভাষায় রঙ্গপুর অর্থ বিস্তৃৃত। অনেকের মতে সম্ভবত তিস্তার তীরবর্তী বিস্তৃত অঞ্চলকে তারা রঙ্গপুর নামে আখ্যায়িত করেছে। নামকরণ নিয়ে যত মতভেদই থাক না কেন রঙ্গপুর অঞ্চল যে প্রাচীন জনপদ এই বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে রংপুর শহরের গোড়াপত্তন সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের প্রাপ্ত সূত্রে যেটুকু জানা যায় তাহলো, দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে পাল রাজবংশের রাজারা কামতা বিহার রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন্ যে সময় রঙ্গপুর রত্নপীঠ নামে সুপরিচিত ছিল। এর পরে পালবংশেরশাবেশের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় সেন বংশ। এ বংশের অন্যতম রাজা কান্তেশ্বর ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কামতাবিহার রাজ্য নিজের করতলগত করেন। ঐতিহাসিকদের মতে এ রাজার শাসনামলে বখতিয়ার খলজি উত্তরবঙ্গে আসেন এবং ১১০৩ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম বঙ্গ বিজয়ী মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি বর্তমান রঙ্গপুর শহরের গোড়াপত্তন করেন। তিনি সর্বপ্রথম বর্তমান ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার দেবকোটায় তার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। কিন্তু সেখান থেকে কামরূপ বা সংলগ্ন পার্বত্য এলাকাগুলো নিজ কর্তৃত্বাধীন আনা দুঃসাধ্য ব্যাপার মনে করে তিনি এ অঞ্চলের কোথাও নতুন রাজধানী স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, এ কারণেই রঙ্গপুর শহরেই তার নবপ্রতিষ্ঠিত সম্রাজ্যের রাজধানী প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা তিনি গ্রহণ করেন। রংপুর তার রাজধানীর ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে যে সব ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ঐতিহাসিক ফিরিশতা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। দর সরহদে বাঙ্গালাহ দর এও ওসে শহরে নওদিয়া শাহরে মওসুম বে-রঙ্গপুর বেনা বারদা দারুলমূলক খুদ সাদত ৪ অর্থাৎ (বাঙ্গালার সীমান্তে নওদিয়া শহরের বদলে খলজী) রঙ্গপুর নামক একটি নতুন শহর বানালেন। এটিই ছিল তার খোদ রাজধানী (দারুলমূলক)।
যা হউক এ সময় রঙ্গপুর শহর সংলগ্ন মাহিগঞ্জ অঞ্চলে বড় রংপুর, ছোট রঙ্গপুর, খোর্দ্দ রংপুর ও হাট রংপুর নামে ৪টি গ্রাম ছিল। এ গ্রামগুলো আজো রাজধানী রংপুরের স্মৃতি বহন করছে। এ গ্রামগুলোর পাশেই বখতিয়ারপুর নামে একটি গ্রাম রয়েছে। সেই গ্রামটিই প্রথম বঙ্গদেশ বিজয়ী বখতিয়ার খলজীর এ অঞ্চলে আগমন ও অবস্থানের সাক্ষ দিচ্ছে। ঐতিহাসিকদের মতে সেনাপতি বখতিয়ার খলজী বখতিয়ারপুর ও দমদমা হয়েই তার দুঃসাহসিক কামরূপ অভিযান পরিচালিত করেছিলেন। ঐতিহাসিক গোলাম হুসাইন সলিম তার রচিত ‘রিয়ায আল-সালতিন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছে মুঘল আমলে রংপুর ঘোড়াঘাট সরকারের অধীনে ছিল। অষ্টাদশ শতকের বিখ্যাত ইংরেজ মানচিত্র বিশারদ মিঃ রেনেল মানচিত্রে রংপুরকে প্রদেশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, বখতিয়ার লক্ষন সেনের রাজ্য দখলের কিছুদিন পর কামরূপ বিজয়ের লক্ষ্যে বখতিয়ার পশ্চিম দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে সোজা উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে করতোয়া নদী অতিক্রম করে বর্ধনকোট রাজ্যের ওপর দিয়ে (বর্তমান গোবিন্দগঞ্জ) অগ্রসর হন। এরপর পায়রাবন্দ পরগণা হয়ে তিনি ঘাঘট নদী অতিক্রম করে বর্তমান মাহিগঞ্জ এলাকায় শিবির স্থাপন করেন। যা তার অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে পরিণত হয়েছিল। তিনি এখান থেকে শুধু যে কামরূপ বিজয়ের জন্য অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তা নয়। তার উদ্দেশ্য ছিল কামরূপসহ এ অঞ্চলের সমগ্র পার্বত্যরাজ্যগুলো দখল করা। সুদূর দেবকোট থেকে কামরূপসহ সমগ্র পার্বত্য রাজ্যগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলেই তিনি রংপুরে তার অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। তিনি যদি কামরূপ বিজয়ে সফল হতেন তাহলে রংপুরই পূর্ণাঙ্গ রাজধানীতে পরিণত হত। কিন্তু কামরূপ অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় তার অস্থায়ী রাজধানী তুলে নিয়ে পুনঃরায় তিনি দেবকোর্টে প্রত্যাবর্তন করেন। ফলে এক সময় খলজির প্রতিষ্ঠিত রংপুর শহরটি ইতিহাসের পাতা থেকে বিস্তৃত হয়ে পড়ার উপক্রম হয়।
ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজীর রাজধানী রংপুর পরবর্তীকালে প্রদেশে পরিণত হয় তা অষ্টাদশ শতকের মানচিত্রবিদ মিঃ রেনেল তার মানচিত্রে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। এ সম্পর্কে যাবার আগে একটু পিছন ফিরে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাই, সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে মুঘলরা যখন কোচ বিহার রাজ্য আক্রমণ করেন তখন ৬টি পরগণার সমন্বয়ে কোচ রাজ্য ছিল। আইন ই আকববীর মতে সরকার ঘোড়াঘাটের পরগণা পাতিলাদহ, কুন্তি ছাড়াও ৮টি পরগণা ছিল। তাহলো, কাজিরহাট, কাকিনা, ফতেপুর, পূর্বভাগ, পাটগ্রাম, বোদা, বাহারবন্দ ও ভিতরবন্দ। এসব রংপুর এলাকাধীন অঞ্চল ছিল। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রংপুর জেলার সমগ্র অঞ্চল সাবেক ৫টি মহকুমা; সদর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট ছাড়াও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, জলপাইগুড়ির তিস্তা পশ্চিমাংশ এলাকা, আসামের গোয়ালপাড়া এবং বর্তমান জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ এলাকা রংপুর জেলাধীন অঞ্চল ছিল।
উল্লেখ্য যে, সমগ্র রংপুর জেলাধীন অঞ্চল কোচ শাসন থেকে মুঘল শাসনে অন্তর্ভুক্ত হতে ১৫৯৬ সাল হতে ১৭১১ সাল অর্থাৎ ১১৫ বছর সময় লেগেছিল। এরপর বৃটিশদের দেওয়ানী লাভের আগ পর্যন্ত উক্ত পরগণাগুলোর তিনটি ছাড়া অর্থাৎ (পাটগ্রাম, বোদা ও পূর্বভাগ) সমগ্র রংপুর জেলা মুঘল শাসনাধীন ছিল। ১৭৭৩ সাল বৃটিশদের কোচবিহার সন্ধির পর রংপুর জেলা একটি স্বকীয় প্রশাসনিক ইউনিট এবং বিচার বিভাগীয় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। সে সময় রংপুরের পরিধি এত ব্যাপক এবং বিস্তৃত ছিল যে, ভূটান, আসাম, জলপাইগুড়ি প্রভৃতি অঞ্চল এর অধীনে ছিল এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আগ পর্যন্ত রংপুরের এত বিশাল ও বিস্তৃত আয়তনের জন্য বৃটিশ সরকারের নিকট এটা সুবা রংপুর বা রংপুর প্রদেশ হিসেবে খ্যাত ছিল। তৎকালীন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সার্ভেয়ার জেনারেল মেজর রেনেল রংপুর প্রদেশের (১৭৬৫-১৭৭৩) পর্যন্ত যে মানচিত্র অঙ্কন করেছিলেন তাতে এ প্রদেশের উত্তরে উত্তরে লাসরিকোট, ডালিমকোর্ট ও বজ্রদুয়ার এবং ভুটানের পাহাড়িয়া অঞ্চল এ প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত ছিল। এর দক্ষিণে দিনাজপুর, ঘোড়াঘাট, বগুড়া এবং ময়মনসিংহের দেওয়ানগঞ্জ অঞ্চল, পূর্বে আসামের গোয়ালপাড়া ও ধুবড়ী এবং গারো পাহাড়, পশ্চিমে দিনাজপুর ও পুনিয়ার অঞ্চল যা মহানন্দা নদীর উৎস পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
সূত্র মতে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক দেয়ানী লাভের পর বৃটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু হয় রংপুরে। বিপ্লবগুলো ১৭৭৮ থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত দাবানলের মত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বহুকষ্টে বৃটিশ সরকার বিপ্লব দমনে সমর্থ হলে বাংলার উত্তরাঞ্চলের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। ১৭৭৮ সাল বৃটিশ সরকার আইন শৃঙ্খলা পুনঃ প্রতিষ্ঠাও বিপ্লবীদের দমনের জন্য জেলাগুলোকে থানায় বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর কোম্পানী কর্তৃপক্ষ ১৮২৯ সারে মহকুমা গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
১৮৫৭ সারে রংপুর জেলার দক্ষিণাংশ নিয়ে গঠিত হয় ভবানীগঞ্জ মহকুমা। ভবানীগঞ্জ মহকুমাটি ছিল বোনারপাড়া ও বাদিয়খালির মাঝামাঝি সাল। ১৮৭৩ সালে ভবানীগঞ্জ মহকুমা সদর যমুনার ভয়াল স্রোতে নিশ্চিহ্ন হলে মহকুমার সদর দপ্তর গাইবান্ধায় স্থানান্তর করা হয়। ১৮৭৩ সালের মার্চ পর্যন্ত রংপুর সদর ও ভবানিগঞ্জ নামে দুটি মহকুমা ছিল। রংপুর সদর মহকুমার অধীনে ছিল ১২টি থানা। থানাগুলো হচ্ছে মাহিগঞ্জ, নিসবেতগঞ্জ, দরওয়ানী, জলঢাকা, ডিমলা, ফুরুনবাড়ি, বড়বাড়ি, নাগেশ্বরী, আবেপুর, কয়েরগঞ্জ, মলুংগা ও পীরগঞ্জ। বর্তমানে মাহিগঞ্জ ও নিসবেতগঞ্জ থানা দুটির অস্তিত্ব নেই। এ থানা দুটি এখন রংপুর সদরের সাথে অন্তর্ভূক্ত। ফুরুনবাড়ি থানাটি বিভক্ত হয়ে কালিগঞ্জ ও হাতিবান্ধায় পরিণত হয়েছে। ১৯১৪ সালে বড়বাড়ি থানা ও লালমনিরহাট থানায় পরিণত হয়েছে। অবশ্য ১৮৮৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত বড়বাড়ি থানা কুলাঘাট থানা নামে পরিচিত ছিল। উক্ত সালে বড়বাড়ি থানা দু’ভাগে বিভক্ত হয়। ধরলার পূবাংশ ফুলবাড়ি ও পশ্চিমাংশে লালমনিরহাট নাম ধারণ করে। আবেপুর উলিপুরের প্রাচীন নাম। কয়েরগঞ্জ কুড়িগ্রাম জেলার আগের নাম। তবে কুড়িগ্রাম থানার প্রাচনি কাগজপত্রে কুড়িগ্রাম জেলার আগের নাম। তবে কুড়িগ্রাম থানার প্রাচীর কাগজপত্রে কুড়িগ্রাম নামেও খ্যাত ছিল। মলুংগা মিঠাপুকুরের আগের নামকরণ। বহু আগে মিঠাপুকুর থানাটি মলুংগারহাট নামক স্থানে ছিল। এ সময় রংপুর জেলার মোট আয়তন ছিল ৩ হাজার ৪৭৬ বর্গমাইল এবং সদর মহকুমার আয়তন ছিল ২ হাজার ৬৮৭ বর্গমাইল। লোকসংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১৮ হাজার ২২৬ জন। অপরদিকে ভবানীগঞ্জ মহকুমায় থানা ছিল ৪টি। এগুলো হচ্ছে ভবানীগঞ্জ, চিলমারী, সাদুল্যাপুর ও গোবিন্দগঞ্জ। এ মহকুমার আয়তন ছিল ৭৮৯ বর্গমাইল এবং লোকসংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৪৬ জন।
এরপর ১৮৮৫ সালে রংপুর জেলার অন্তর্ভূক্ত এলাকাগুলোতে নতুনভাবে বিন্যাস করে সমগ্র জেলাকে ৪টি মহকুমায় বিভক্ত করা হয়। নতুন দুটি মহকুমা হচ্ছে নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম। এ সময়ে আদমশুমারী অনুযায়ী ৪টি মহকুমার অধীনে ১৬টি থানা ছিল। সেগুলো হচ্ছে, রংপুর সদর, মাহিগঞ্জ, কালিগঞ্জ, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ। গাইবান্ধায় গাইবান্ধা সদর, গোবিন্দগঞ্জ ও সুন্দরগঞ্জ। নীলফামারী সদর জলঢাকা ও ডিমলা। কুড়িগ্রাম, বড়বাড়ি, নাগেশ্বরী ও আলীপুর বর্তমান উলিপুর।
সে সময় রংপুর জেলার আয়তন ছির ৩ হাজার ৫৯৫ বর্গমাইল এবং মোট জনসংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৫৪ হাজার ১৮১ জন। ১৯১১ সালের আদমশুমারী আগ পর্যন্ত ৪টি মহকুমার থানাগুলোর এলাকা ও আয়তন ঠিক রেখে অধিকতর দক্ষ শাসন ব্যবস্থার জন্য প্রতিটি থানার অধীনে এক বা একাধিক পুলিশ চৌকি স্থাপন করা হয়। সেগুলো হচ্ছে রংপুর সদরের কোতয়ালী থানা ১৮৩ বর্গমাইল, পীরগঞ্জ ১৫৮ বর্গমাইল, বদরগঞ্জ ১৬৭ বর্গমাইল, কালিগঞ্জ ৩৬৭ বর্গমাইল। গাইবান্ধা মহকুমায় গাইবান্ধা থানা সাদুল্যাপুর পুলিশ চৌকিসহ ২৮২ বর্গমাইল, গোবিন্দগঞ্জ থানার পলাশবাড়ি ও সাঘাটা পুলিশ চৌকিসহ ৩৫১ বর্গমাইল ও সুন্দরগঞ্জ ১২৯ বর্গমাইল। নীলফামারী মহকুমার নীলফামারী থানা সৈয়দপুর পুলিশ চৌকিসহ ২১৪ বর্গমাইল। ডিমলা থানার ডোমার পুলিশ চৌকিসহ ১৯২ বর্গমাইল ও জলঢাকা থানা ২৪২ বর্গমাইল। কুড়িগ্রাম মহকুমার কুড়িগ্রাম থানা ৮৫ বর্গমাইল, উলিপুর চিলমারী পুলিশ চৌকিসহ ৩৯১ বর্গমাইল, বড়বাড়ি (বর্তমান লালমনিরহাট) ১৮৪ বর্গমাইল, নাগেশ্বরী থানা ফুলকুমার আউটপোষ্ট সহ ২৮২ বর্গমাইল। এছাড়া ১৯৪৭ সারে ভারত বিভাগ আইনের অধীনে ব্যাডক্লিক রোয়েদাদ অনুযায়ী জলপাইগুড়ি জেলার মুসলিম অধ্যুষিত পাটগ্রাম থানাকে রংপুর জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সমগ্র রংপুর জেলার ৪টি মহকুমার অধীনে ৩১টি থানায় বিভক্ত ছিল। ১৯৮০ সারে পহেলা জানুয়ারী রংপুর মহকুমার তিনটি থানা পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও কালিগঞ্জ এবং কুড়িগ্রাম মহকুমার লালমনিরহাট থানার সমন্বয়ে ৫০৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে লালমনিরহাট মহকুমার গঠিত হয়। ১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর তৎকালিন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এক অধ্যাদেশ বলে থানাগুলোকে উপজেলা করেন এবং ১৯৮৫ সালের পথম দিকে বাংলাদেশের সবকটি মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করা হয়। ফলে বৃহত্তর রংপুর জেলা ৫টি জেলায় বিভক্ত হয়্ জেলাগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় হচ্ছে, রংপুর।
রংপুর জেলার মোট আয়তন ৩ হাজার ৭০১ বর্গমাইল। এর মধ্যে সদর ৮৯৩ বর্গমাইল, কাউনিয়া ১২৩ বর্গমাইল, গংগাচড়া ৮৩ বর্গমাইল, মিঠাপুকুর ২শ বর্গমাইল, পীরগাছা ১০৩ বর্গমাইল, পীরগঞ্জ ১৬০ বর্গমাইল, বদরগঞ্জ ১১৬ বর্গমাইল, তারাগঞ্জ ৫০ বর্গমাইল। নীলফামারী জেলা মোট ৬৩৩ বর্গমাইল। এর মধ্যে নীলফামারী সদর ১৩৪ বর্গমাইল, ডিমলা ১২৬ বর্গমাইল। এর মধ্যে নীলফামারী সদর ১৩৪ বর্গমাইল, ডিমলা ১২৬ বর্গমাইল, জলঢাকা ১২৭ বর্গমাইল, ডোমার ৯৭ বর্গমাইল, কিশোরগঞ্জ ১০২ বর্গমাইল, সৈয়দপুর ৪৭ বর্গমাইল। লালমনিরহাট জেলা মোট ৫০৩ বর্গমাইল। এর মধ্যে লালমনি সদর ১৩১ বর্গমাইল, আদিতমারী ৭৫ বর্গমাইল, হাতিবান্ধা ১১২ বর্গমাইল, কালিগঞ্জ ৯২ বর্গমাইল, পাটগ্রাম ৯৩ বর্গমাইল। কুড়িগ্রাম জেলার মোট আয়তন ৮৩৯ বর্গামাইল। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম সদর ১০৭ বর্গমাইল, ভুরুঙ্গামারী ৮৯ বর্গমাইল, চিলমারী ৯১ বর্গমাইল, উলিপুর ১৭৭ বর্গমাইল, নাগেশ্বরী ১১৭ বর্গমাইল, ফুলবাড়ি ৬৩ বর্গমাইল, রৌমারী ৭৬ বর্গমাইল। চর রাজিবপুর ৪৪ বর্গমাইল, রাজারহাট ৭৫ বর্গমাইল। গাইবান্ধা জেলা মোট ৮৩৩ বর্গমাইল। এর মধ্যে সদর ১২৪ বগৃমাইল, পলাশবাড়ি ৭৪ বর্গমাইল, গোবিন্দগঞ্জ ১৭৬ বর্গমাইল, সাদুল্যাপুর ৯০ বর্গমাইল, সাঘাটা ৮৭ বর্গমাইল, সুন্দরগঞ্জ ১৬১ বর্গমাইল, ফুলছড়ি ১২১ বর্গমাইল।
ইতিহাসের পথ প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করলে দেখা যায় রংপুরের রয়েছে হাজারো সোনালী ঐতিহ্য। এই রংপুর খলজীর আমলে পেয়েছিল রাজধানীর মর্যাদা। মুঘল ও বৃটিশ আমলে পেয়েছি প্রদেশের মর্যাদা। কালের কুটিল চক্রে এসব অতীত ঐতিহ্য যখন এ অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে হারাতে বসেছিল তখনই রংপুরকে বিভাগ করা হয়। এর পর আমারা পেলাম সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের পথ ধরে পেলাম মহানগর পুলিশ। দেখতে দেখতে মহা নগর পুলিশ ছয় বছর পার করল। এখনও এইঅঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা আর্থসামাজিক অবস্থায় উন্নয়নের পাশাপাশি হারানো গৌরবময় অতীত ফিরিয়ে আনতে হবে।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক