আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৫ ● ১১ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৫
রংপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় অবকাঠামোসহ এসিগুলো নষ্ট

রংপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় অবকাঠামোসহ এসিগুলো নষ্ট

উগ্রবাদ নিয়ে সতর্ক বিএনপি

উগ্রবাদ নিয়ে সতর্ক বিএনপি

তদন্ত হবে আড়ি পাতার

রাজনৈতিক সরকার এ ব্যবস্থা ধরে রাখতে চায়
তদন্ত হবে আড়ি পাতার

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

নাইকো দুর্নীতিতে খালেদা জিয়া ও ‘হাওয়া ভবন’ সম্পৃক্ততার সাক্ষ্য আসছে

বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, দুপুর ০২:৫৯

Advertisement Advertisement

রিয়াজুল হক

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলা কার্যক্রম আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নতুন পথে হাঁটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নাইকো দুর্নীতি মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এক কর্মকর্তা ও কানাডার রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশের ২ কর্মকর্তাকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে প্রসিকিউশন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর আদালতে এ আবেদন করেন।

সামনে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া এরই মধ্যে একাধিক দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাবন্দি। একই সময়ে বাংলাদেশের আদালতে চলছে ‘নাইকো’ দুর্নীতি মামলার শুনানি। এবার সেটা একধাপ এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

খালেদা জিয়া ছাড়া এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক এমপি ও ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। এরইমধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ কে এম মোশাররফ হোসেনের মৃত্যু হওয়ায় আসামির তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

যেভাবে দুর্নীতি হয়েছিলো

কানাডায় নিবন্ধিত তেল ও গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি ‘নাইকো’বাংলাদেশের কয়েকটি গ্যাস ফিল্ড লিজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো।  পূর্ব ও পশ্চিম ছাতক গ্যাসফিল্ড নিয়েই মূলত বিতর্ক। ২০০২ সাল পর্যন্ত পূর্ব ছাতক গ্যাস ফিল্ড একটি ভার্জিন গ্যাস ফিল্ড অর্থাৎ গ্যাসে পূর্ণ ছিল বলে বাপেক্স এবং বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অভিমত দিয়েছিল। ‘নাইকো’ নানা অসৎ পন্থা অবলম্বন করে আমাদের দেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে এই পূর্ব ছাতক গ্যাস ফিল্ডটি লিজ নেয় এবং একটি পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড হিসেবে এটাকে তখন তাদের হাতে দেওয়া হয়। আসলে এই গ্যাস ফিল্ড কখনো পরিত্যক্ত ছিল না৷ কিন্তু তখন অস্বচ্ছ এক চুক্তিতে নাইকোকে দু’টি গ্যাসফিল্ডই পরিত্যক্ত হিসেবে কম দামে দিয়ে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে তারেক রহমানের হাওয়া ভবন সরাসরি যুক্ত ছিলো।

সেই ‘নাইকো’ দুর্নীতির ঘটনা এখন বিশ্বখ্যাত। কানাডার আদালতে এরইমধ্যে ‘নাইকো’ দুর্নীতি মামলায় কানাডিয়ান অপরাধীদের দণ্ডিত করা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের আদালতে দায়েরকৃত ‘নাইকো’ দুর্নীতি মামলায় বাংলাদেশি অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান।

২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর ‘নাইকো’ দুর্নীতি মামলায় রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সাক্ষ্য নিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়। এবছর ৯ সেপ্টেম্বর আবারও সেই আবেদন সামনে আনা হয়েছে। যদি আবেদনটি বাংলাদেশের আদালত আমলে নেয়, তাহলে এটিই হবে বাংলাদেশের কোনো আদালতে প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক দুর্নীতির মামলায় বিদেশি নাগরিকের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্যগ্রহণের ঘটনা। এবং মামলার কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ আরেকধাপ এগিয়ে যাবে।

কানাডার তদন্ত শুরু ২০০৫ সালেই

পূর্ব ছাতকের গ্যাস ফিল্ড নেওয়ার ব্যাপারে ‘নাইকো’ যে ঘুষ প্রদান করে, তা নিয়ে কানাডার রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশ ২০০৫ সালে তদন্ত শুরু করে এবং তারা তদন্তে প্রমাণ পায়, ‘নাইকো’ কোম্পানি কানাডা থেকে ঘুষের টাকা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দেশ হয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল এবং কয়েকজন ব্যক্তিকে ঘুষ দিয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে। এরপর ২০০৮ সালের ৫ মে চুক্তির সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয় দুদক। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা খারিজ যে কারণে

এই মামলা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উভয়ের বিরুদ্ধেই ছিল, কিন্তু শেখ হাসিনার বিপক্ষে মামলা খারিজ হয়ে গেছে এবং খালেদা জিয়ার বিপক্ষে মামলা চলছে। অনেক সময় নিন্দুকেরা বলার চেষ্টা করেন যে, কেন শেখ হাসিনার মামলাটি খারিজ হলো। কারণটা স্পষ্ট। কখনো খোঁজ নিয়ে দেখলে প্রশ্নটা উত্থাপন করতো না কেউ। শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬-২০০১ সালে ‘নাইকো’ কোম্পানির সঙ্গে দরকষাকষি করেছে, শেষ পর্যন্ত তারা চুক্তি করেনি। কারণ ‘নাইকো’র একটি শর্ত বাংলাদেশের স্বার্থের বিপক্ষে যাচ্ছিল।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই নাইকোর সঙ্গে তাদের সব শর্ত মেনে চুক্তি সই করে ফেলে। ২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর নাইকো-বাপেক্স জেভিএ সই হয়। পরবর্তী সময়ে কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয় যে নাইকো বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার আমলে ঘুষ দিয়ে কাজ পায়। হাওয়া ভবনের গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ঘুষ নেন এবং খালেদা জিয়ার তৎকালীন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনকে ১ লাখ ৯০ হাজার কানাডীয় ডলার দামের একটি গাড়ি ও বিদেশ সফরের জন্য পাঁচ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নাইকোর বিরুদ্ধে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

মন্তব্য করুন


Link copied