আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১ মে ২০২৫ ● ১৮ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১ মে ২০২৫
মে দিবস

‘বসে থাকলে খাওয়াবে কে, কাজই তো আমাদের দিবস’

বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫, দুপুর ০১:৩৯

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: ‘কামলাদের আবার কীসের দিবস, একদিন বসে থাকলে সেদিন খাওয়াবে কে?’  কথাগুলো বলে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন শ্রমিক আনিসুল হক। বাড্ডা এলাকার এই ভ্যানচালক জানেন না আজকের তারিখটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন। তিনি জানেন না, আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। যেদিন তার মতো পরিশ্রমী মানুষের অধিকার ও মর্যাদার প্রতীক হওয়ার কথা।

রাজপথে সরকার ও সংগঠনের ব্যানার-ফেস্টুন, ঘটা করে আলোচনার আয়োজন আর সরকারি ছুটি, সবই চলছে যথারীতি। কিন্তু ঢাকার অলিগলি, নির্মাণাধীন ভবন আর বাজারঘাটে আজও হাজারো শ্রমজীবী মানুষ ছুটছেন দৈনন্দিন রুটিনে, একটুও থেমে নেই তাদের হাত।

‘ছুটি মানে পকেট ফাঁকা

রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় দেখা মেলে লোহার রডভর্তি একটি ভ্যান ঠেলে নিয়ে যাওয়া সগির হোসেন নামের আরেক শ্রমজীবীর। চরম রোদ ও ধুলাবালির মধ্যেও কাজ থামেনি তার। ঘামে ভেজা গায়ে পরনে সাধারণ একটি টি-শার্ট, কাঁধে চাপা ভারী মাল। 

জিজ্ঞেস করতেই ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ভাই, ছুটি রাখলে খাইমু কী দিয়া? অফিস-আদালতের ছুটি থাকলেও আমরা থামলে তো সংসার থেমে যায়।

একই এলাকায় কথা হয় রিকশা চালক বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে। নিজেদের দিবসের দিনে কেন রিকশা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই দিবস সাহেবদের। আমরা তো শুধু কাজ করি আর ঘাম ঝরাই। দিবস দিয়া কি বাজারে চাল পাই?

শুধুমাত্র আনিস, সগির, বাচ্চুরাই নন, তাদের মতো অসংখ্য শ্রমিকদের জীবনেই আজকের শ্রমিক দিবসের কোনও বাস্তব প্রভাব নেই। তাদের ভাষায়, যে দিবসে কাজ থামাই, সে দিনই না খেয়ে থাকতে হয়। কাজই তো আমাদের দিবস।

দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু

বেসরকারি সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির (এসআরএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা দেশে ৭১২টি দুর্ঘটনায় মোট ৮৩৯ জন শ্রমিক মারা গেছেন। এরমধ্যে নির্মাণখাতে নিহতের সংখ্যা ১৭৩। 

সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, আগের বছর ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে ৫৪৭টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৭১২ শ্রমিকের। আর ২০২১ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ৫৩৮।

শ্রমিক দিবসের ইতিহাস : একটি রক্তাক্ত শুরু

১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ‘হে মার্কেট স্কয়ার’এ আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে হাজারো শ্রমিক বিক্ষোভে নেমেছিলেন। পুলিশের গুলিতে অনেকেই প্রাণ হারান। সেই ত্যাগের রক্তাক্ত স্মৃতি থেকেই শুরু হয় মে দিবস পালনের ইতিহাস। আজ বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে দিবসটি সরকারি ছুটিসহ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়।

বাংলাদেশেও এ দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হয় ১৯৭২ সাল থেকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- যাদের জন্য এই দিবস, তাদের অনেকেই দিনটির অর্থ জানেন না বা জেনেও উপেক্ষা করেন কারণ- ‘বসে থাকলে খাওয়াবে কে’?

সরকারি উদ্যোগ ও প্রতিশ্রুতি

মে দিবস উপলক্ষ্যে এবার সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ কর্মসূচি। এক আলোচনা সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতে শ্রম আইনকে পাকাপোক্ত করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই আইন পাস করতে চাই। আমার ইচ্ছা, আমি থাকতে থাকতে একটি কার্যকর শ্রম আইন দিয়ে যেতে পারি।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় শ্রমনীতি বাস্তবায়ন, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের নিবন্ধনের কাজ চলমান রয়েছে। 

মন্তব্য করুন


Link copied