আর্কাইভ  শুক্রবার ● ৬ জুন ২০২৫ ● ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ৬ জুন ২০২৫

উত্তরের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়াচ্ছে বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক

বুধবার, ৪ জুন ২০২৫, রাত ০১:৩০

Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের ভিড়ে রংপুর- বগুড়া মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। এবার ঈদেও সেই যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, মহাসড়কটির উন্নয়নের কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রতি বছর ঈদে এই মহাসড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলার লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। কোরবানির পশু পরিবহন এবং ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতে যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে।

শুধু বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ থেকে পলাশবাড়ী ভায়া সাদুল্লাপুর ৫৭ কিলোমিটার। ঢাকার সঙ্গে উত্তরের আট জেলার সড়ক পথে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এই মহাসড়কটিই। এ কারণে প্রতি বছর ঈদে এই সড়কে যানবাহনের জটলা লাগে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কটির গাইবান্ধা জেলা অংশের ৫৭ কিলোমিটারের অর্ধেক কাজ বাকি রয়েছে। কাজ চলমান থাকলেও ধীরগতি। সড়কের মাঝ দিয়ে বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের দুই পাশ দিয়ে এক লেনে গাড়ি চলাচল করছে। ঈদের আগেই গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী শহরের সড়কের চারমাথায় গাড়ির যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া চলতি পথে হঠাৎ কোনো গাড়ি নষ্ট হলে, অন্য পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচলের কোনো জায়গা নাই। বিশেষ করে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী পৌর শহরে কাজ চলমান থাকায় চরম যানজটের সম্ভবনা রয়েছে।

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফাঁসিতলা থেকে উত্তরে সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট পর্যন্ত ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কের ৩২ কিলোমিটার অংশ গাইবান্ধা জেলার সীমানায় পড়েছে। সরকার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘সাউথ এশিয়ান সাব রিজিওনাল ইকনোমিক করপোরেশন’ (সাসেক)। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।

চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএসসিইসি) কাজের দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানটি গাইবান্ধা জেলার ৩০ কিলোমিটার অংশের কাজের দায়িত্ব পায়। এই অংশের কাজের জন্য ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নির্দিষ্ট সময়ে দুই বছর পার হলেও মহাসড়কটির এই জেলার অংশে অর্ধেক কাজ বাকি রয়েছে।

শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদুল ফিতরে মহাসড়ক স্বাভাবিক ও যানবাহনের চাপ ছিল কম। এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে। এবার মানুষের চাপে যানবাহনের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। পশুবাহী ট্রাকও বৃদ্ধি পাবে। সব মিলেই এবারের ঈদে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গাইবান্ধার যাত্রী সায়মন কবির বলেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষ সব সময় বৈষম্যের শিকার হয়ে উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে থাকে। ঢাকা থেকে রংপুর মহাসড়কের অন্যান্য জায়গায় কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে হলেও গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে সাদুল্ল্যাপুর অংশের কাজ এখনো অর্ধেকও শেষ হয়নি। অথচ এই পথ দিয়ে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।

পলাশবাড়ীর স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় পলাশবাড়ী থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত জ্যাম লাগে। গত বছরও জেলার এই অংশে ঈদে যানজট লেগেছিল। এবার ঈদে ব্যাপক যানজটের আশঙ্কা করছেন তিনি।

গাইবান্ধা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আশরাফুল আলম বাদশা বলেন, মহাসড়কে যেন যানজট না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে। যানজট নিরসনের জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মোটর শ্রমিকরাও কাজ করবে।

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী পিয়াস কুমার সেন বলেন, মহাসড়কের কাজটি আমরা করছি না। এই কাজগুলোর জন্য আলাদা আলাদা সেকশন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ শেষ শুধু আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেবে।

প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিক কাদির বলেন, ২০২৩ সালে ডিসেম্বরের মধ্য কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। আশা করছি কাজ এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে। এবার ঈদুল আজহায় তেমন একটা যানজট হবে না। রাস্তার দুই পাশে ২৫ ফুট করে যাতায়াতের জন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভোগান্তি ছাড়ায় বাড়ি ফিরতে পারবে।

মন্তব্য করুন


Link copied