আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২০ জুন ২০২৫ ● ৬ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২০ জুন ২০২৫
ইরানকে ঘিরে ফেলছে একের পর এক মার্কিন রণতরি ও যুদ্ধবিমান

ইরানকে ঘিরে ফেলছে একের পর এক মার্কিন রণতরি ও যুদ্ধবিমান

ইরান বলছে তারা হোয়াইট হাউজের ‘পা চাটবে না’

ইরান বলছে তারা হোয়াইট হাউজের ‘পা চাটবে না’

ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দফতরে বিমান হামলার দাবি ইসরায়েলের

ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দফতরে বিমান হামলার দাবি ইসরায়েলের

পরমাণু স্থাপনার কিছুই করতে পারেনি ইসরায়েল, দাবি ইরানের

পরমাণু স্থাপনার কিছুই করতে পারেনি ইসরায়েল, দাবি ইরানের

রোজার সময় তুষার আমাকে আপত্তিকর কথাটি বলে : নীলা ইসরাফিল

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, রাত ০৯:১৩

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারোয়ার তুষারের সঙ্গে এক নারীর কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই অডিওতে নারী কণ্ঠটি এনসিপির এক নেত্রীর বলে দাবি করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর পর থেকে এনসিপির একাধিক নেত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে তুষারের সঙ্গে ওই কথোপকথনটি নিজের বলে স্বীকার করেছেন এনসিপি নেত্রী ও অভিনয়শিল্পী নীলা ইসরাফিল।

নীলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ। পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। 

তিনি আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘ এক পোস্টে এ কথা স্বীকার করেন। ওই পোস্টে তিনি জানান, নেপালে যাওয়ার পর থেকে তুষার প্রায়ই ফোন করত ও তার আলাপের ধরন পাল্টাতে থাকে।

সে আমাকে বিভিন্নভাবে অ্যাপ্রোচ করতে থাকে—‘তোমার ছবি দাও’, ‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘তোমার স্লোগান, তোমার প্রতিবাদী কণ্ঠ আমাকে আকৃষ্ট করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি তুষারকে এই ধরনের আলাপে সব সময়েই বিব্রত বোধ করেছি এবং তাকে আমাদের সম্পর্ক সাংগঠনিক ও ফর্মাল রাখতে অনুরোধ রেখেছি।’

যেহেতু বাংলাদেশের নতুন রাজনীতি, এনসিপি আমার জীবনের প্রধান অবলম্বন, আমি তুষারকে তার আগ্রাসী আচরণ সংযত রেখে, ফর্মালভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখি। বাংলাদেশের অসংখ্য নারীকে ক্ষমতাবান পুরুষের সাথে এই ধরনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়।

নীলা ইসলাফিল ভাইরাল কথোপকথনের বিষয়ে বলেন, ‘রোজার সময় একদিন তুষার আমাকে অত্যন্ত আপত্তিকর একটি কথা বলে। ইতিপূর্বে সব আলাপের সীমা ছাড়ানো এই আলাপে আমি বিব্রত বোধ করি এবং ওকে জানাই যে আমি আর কথা বলতে চাই না।’

কিন্তু তুষার আমাকে আলাপের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তুষার আমাকে জানায় ডিটেকটিভ পুলিশ বা ডিবি ওর সাথে কথা বলেছে, সেই বিষয়ে সে আমার সাথে আলাপ করতে চায়।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু আমি তখন উপদেষ্টা হাসান আরিফের মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এবং তুষার আমাকে ডিবির কথা বলেছে, তাই আমার কাছে মনে হয়েছে বিষয়টি নিশ্চয়ই আইনি, ডিবি ও পুলিশসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হতে পারে এবং আমার নিরাপত্তার জন্য হুমকির কোনো বিষয় থাকতে পারে—এই বিবেচনায় আমি আলাপটি রেকর্ড করি।

প্রায় দেড় ঘণ্টার আলাপে ৪৭ মিনিট আমি রেকর্ড রাখি। তুষার আমাকে জানায়, ডিবি তাকে নীলা ইসরাফিল সম্পর্কে জানতে চেয়েছে এবং সে ডিবিকে জানিয়েছে যে নীলা তার গার্লফ্রেন্ড—যা নিয়ে আমি তুষারকে প্রশ্ন করি। তাছাড়া আমরা তুষারের খারাপ প্রস্তাব নিয়েও আলাপ করি।

তিনি বলেন, কোরবানির দিন রাতে একটি অনুষ্ঠানে নাহিদের সাথে দেখা হয় এবং নাহিদকে বিষয়টি জানাই। নাহিদ আমাকে বিষয়টি দলীয় শৃঙ্খলার দিক থেকে ডিল করতে ও মহানগরে দায়িত্বে থাকা শাহরিয়ার ও নিজামকে বিষয়টি অবগত করতে বলে। যে দিন সন্ধ্যায় শাহরিয়ার ও নিজামকে আমি জানাই, তার পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারি যে, অডিওটি কেটে সামাজিক মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে এবং ভাইরাল হয়েছে। এরপর আমাকে নিয়ে যে মিডিয়া ট্রায়াল হয়, তাতে আমি দেখতে পেয়েছি, আমার নারী সহকর্মীরাও আমার পক্ষে দাঁড়ায় নাই।

নীলা লেখার শুরুতেই বলেন,  আমার নাম নীলা ইসরাফিল। আমি এনসিপির সদস্যা হই বা না হই - আমি একজন যোদ্ধা।  আমি আমার শ্বশুরবাড়িতে লেক্সাসে চড়তাম। ২৬ জন কাজের লোক ছিল। আরাম আয়েশের কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু খারাপ প্রস্তাব পাওয়ার পর আমার শ্বশুর  প্রয়াত  উপদেষ্টা  সুফি চেহারার আড়ালে বিভৎস হাসান আরিফকেও আমি ছাড় দেই নাই।

এই অভিনয়শিল্পী বলেন, আমার এথিক্সের সাথে যায় না বলে আমি পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ করে  বাংলাদেশের সব চেয়ে ক্ষমতাশালী  মানুষটির অন্যায়কে প্রতিবাদ করেছি। আমি জানি আমি যা বলেছি তা কেউ বিশ্বাস করবে না। এটা অবিশ্বাস্য। আমি জানতাম, এত সুদর্শন, এত অভিজাত, এত সম্মানিত একটা মানুষকে অসম্মান করার অপরাধে সমাজে আমাকে রাস্তায়  ছুঁড়ে ফেলে দেবে। 

নীলা বলেন, কিন্তু সেটা জেনেও আমি আমার প্রতি করা অবিচারের প্রতিকার চেয়ে গিয়েছি—অসংখ্য প্রলোভন দেওয়া সত্ত্বেও আপোষ করিনি। এর পরিণতিতে আমার নামে ১৯টি মামলা দেওয়া হয়, কোনো উকিল ওয়ান ইলেভেনের উপদেষ্টা, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের বিপক্ষে দাঁড়ায় নাই। আমার ছোট মেয়ের জন্ম হয়েছে কারাগারে, আমি এখন পর্যন্ত আমার দুই মেয়েকে নিয়ে একসাথে ঘুমাতে পারিনি। ২০২০ সালে আমার পেটের বাচ্চাকে লাথি দিয়ে মেরে ফেলা হয়।
আমি তাও এখনো প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফ, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ, পুলিশ ও ডিবির সাথে লড়াই করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে আপনারা কীভাবে আশা করেন যে, তুষারের আমার সাথে এই আচরণের আমি প্রতিবাদ করব না? গণ-অভ্যুত্থানে আমি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। গণ-অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনে রাস্তায় নামার কারণে, হাসান আরিফ আমার  বাচ্চা দুইটাকে রেখে আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। তিনি আমাকে বলেন যে, আমার কারণে আওয়ামী লীগ বাসায় পৌঁছে যাবে।

এনসিপি নেত্রী বলেন, এই সময়ে গণ-অভ্যুত্থানের সাথে গড়ে ওঠা, বৈষম্য  বিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারা আমার প্রতি করা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়ায়।  আমি সপ্রতিভ, কর্মোদ্যম ও সৃজনশীল মানুষ। ফলে আগস্টের পর থেকে আন্দোলনের বিভিন্ন নেতা ও কর্মীর সাথে আমার আলাপ হত। তুষারের সাথে তখনই পরিচয় এবং  এনসিপির জন্মের পূর্বেই তার সাথে  সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক আলাপ হতো। বিগত ডিসেম্বরে আমার প্রাক্তন স্বামী মুয়াজ আমাকে ঢাকা ক্লাবে সবার সামনে স্টেক নাইফ দিয়ে হত্যা চেষ্টার পর শহিদুল ভাই, সারা আপা, ফজিয়া করিম আন্টি সহ বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা আমাকে নিরাপত্তার নিয়ে বিচলিত হয়ে যায়। সেজন্য মানবাধিকার কর্মী লেনিনআমাকে নেপালে পাঠিয়ে দেয়।

মন্তব্য করুন


Link copied