আর্কাইভ  রবিবার ● ৬ জুলাই ২০২৫ ● ২২ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ৬ জুলাই ২০২৫
এখনও শহীদ মীর মুগ্ধকে অজান্তে খুঁজে ফেরে তার পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
এখনও শহীদ মীর মুগ্ধকে অজান্তে খুঁজে ফেরে তার পরিবার

রংপুরের  প্রিয় সহ জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
রংপুরের প্রিয় সহ জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

রংপুরে তিনজন সহ গেজেটে নাম নেই ২৩ জুলাই শহীদের, অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষায় পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
রংপুরে তিনজন সহ গেজেটে নাম নেই ২৩ জুলাই শহীদের, অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষায় পরিবার

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস পালনের আহ্বান

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস পালনের আহ্বান

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব

এখনো সিআরপির বেডে যশোরের তরুণ আপন

রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, দুপুর ০২:৫২

নিউজ ডেস্ক: আবদুল হাকিম আপন ১৯ বছরের টগবগে তরুণ। বৈষম্য আর আওয়ামী লীগের নারকীয় দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো লাখো তরুণের একজন। তাদের কাছে পরাজিত হাসিনা পালিয়ে যাওয়ায় ৫ আগস্ট আনন্দের জোয়ারে যখন ভাসছে দেশ, তখনই ঘটা একটি ঘটনায় জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায় তার।

যশোর শহরের চাঁচড়ায় মহাসড়কে সেদিন অবস্থান নিয়েছিল হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। আপন ছিলেন তাদেরই একজন। দুপুরের দিকে যখন হাসিনা পালানোর খবর চারদিকে চাউর হয়, এর কিছু সময়ের মধ্যে ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিল ঢুকে পড়ে শহরের কেন্দ্রে। ওই মিছিলে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধ মানুষের কেউ কেউ ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় শহরের সবচেয়ে উঁচু ভবন ‘জাবির হোটেল’-এ, ভবনটির মালিক আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন চাকলাদার।

সেদিন আগুনের কারণে হোটেলে আটকে পড়ে বহু মানুষ। বিপদ আঁচ করতে পেরে ওই মিছিলে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাই ভেতরে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারে নেমে পড়ে। তাদের মধ্যে ছিলেন আপনও। তার বর্ণনায়, পাশের বিদ্যুৎ অফিস থেকে লম্বা মই জোগাড় করে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে থাকি। কয়েকজনকে নামাতেও পারি। কিন্তু মানুষের ভারে একপর্যায়ে মই ভেঙে পড়ে। আমরা মোট ছয়জন ছিটকে পড়ি নিচে। দুইজন স্পটে আর দুইজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায়। আমি আর একজন গুরুতর আহত হই। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করি।

আপনের বাবা শেখ জাহাঙ্গির পেশায় ট্রাকচালক। মা লাবনী বেগম গৃহবধূ। জাহাঙ্গির পরিবার নিয়ে শহরের নাজিরশঙ্করপুর এলাকায় ভাড়া থাকেন। ওই দম্পতির ছোট ছেলে সোহান শহরের একটি মোটর পার্টসের দোকানে কাজ করে।

সম্প্রতি জাহাঙ্গির-লাবনীর সঙ্গে কথা হয় তাদের ভাড়া বাসায়। তাদের ভাষ্য, বড় ছেলে আপন ফরিদপুরে একটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ত। একটি ঝামেলার কারণে কয়েক মাস আগে ফিরে আসে যশোরে। এখানে সে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্টের দুর্ঘটনার পর আপনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়েছিল জনতা। ওপর থেকে পড়ে তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্পাইনাল কর্ড, গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় নিতম্বে। পরদিনই তাকে নেওয়া হয় রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে অজ্ঞাত কারণে তাকে ভর্তি করেনি কর্তৃপক্ষ। যশোরে ফিরিয়ে এনে বেসরকারি পঙ্গু হাসপাতালে ডা. আব্দুর রউফের তত্ত্বাবধানে তার মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু আপন আর দাঁড়াতে-বসতে পারেনি। ছয়-সাত মাস পর জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ফোন করে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে আটদিন চিকিৎসা শেষে কর্তৃপক্ষ তাকে সাভারে ‘সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড’ (সিআরপি) সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়। প্রায় ১০০ দিন হলো আপন সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছে।

আপন  জানান, সিআরপিতে চিকিৎসা নিয়ে তার অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন তিনি একাই হুইলচেয়ারে উঠতে পারেন। হাঁটুতে সাপোর্ট পেলে ধীরে ধীরে হাঁটতেও পারেন। তবে এর চেয়ে উন্নতি হবে কি না চিকিৎসকরা তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

বাবা শেখ জাহাঙ্গির জানান, এখন পর্যন্ত তার ছেলের চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে তাদের এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। যশোর জেলা পরিষদ অনুদান দিয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ছেলের চিকিৎসা খরচ জোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হতে চলা পরিবারটি সরকারি সহায়তার দিকে তাকিয়ে আছে।

মা লাবনী বেগম বলেন, ছেলেটা হয়তো আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। ওর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো আপন সুস্থ জীবনে ফিরতে পারত। কিন্তু আমরা তো গরিব মানুষ। সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগও নেই।

মন্তব্য করুন


Link copied