নিউজ ডেস্ক: ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই তারিখটি কোনোদিনও ভুলবে না শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের পরিবার। মুগ্ধ নেই বছর হতে চললো। কিন্তু পরিবারের কাছে সে আজও জীবিত। মুগ্ধের মৃত্যুর আগের দিন তার পরিবার গিয়েছিলো উখিয়ায়। পরিবারের লোকজনকে মুগ্ধ পৌঁছে দিয়েছিলো বাস স্টেশনে।
সেটাই ছিলো পরিবারের সাথে তার শেষ দেখা। ছেলের মৃত্যুর খবরটিও তখন তার বাবা-মাকে জানানো হয়নি। সেই স্মৃতির কথা একাত্তরকে জানালো মুগ্ধর পরিবার।
১৮ জুলাই, ২০২৪। সময় বিকেল ৫টা বেজে ২২ মিনিট। আজমপুরের এই রাস্তাতেই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে পানি দিয়ে সাহায্য করছিলো মীর মুগ্ধ। এর ঠিক ২৮ মিনিট পর ৫ টা ৫০ মিনিটে অজ্ঞাত কোন স্থান থেকে এটি গুলি। আর সেখানেই লুটিয়ে পড়ে মুগ্ধ।
মৃত্যুর ৯ মিনিট আগে নিজের মোবাইলে মুগ্ধ ধারণ করেছিলো এই ভিডিও। যেখানে সে উপস্থিত সবাইকে গুলি ছোড়া হচ্ছে বলে সতর্ক করছিলো। সে সবই এখন স্মৃতি। মুগ্ধর আরও অনেক স্মৃতি নিয়ে দাড়িয়ে আছে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের এই বাড়িটি। যেখানে তার বাবা-মা সবাই আছেন, শুধু মুগ্ধই নেই।
যমজ দুই ভাই মুগ্ধ-স্নিগ্ধ। বাবা দেখাচ্ছিলেন মুগ্ধের চোখের নীচের তিল, যা দেখে বোঝা যেতো দুই ভাইয়ের পরিচয়। ছোটবেলার এই ছবিগুলোই আজ এই বৃদ্ধ বাবার একমাত্র সম্বল।
শেষবার ছেলেকে বাস স্টেশন থেকে বিদায় দেয়ার স্মৃতিটা তার আজও চোখে ভাসে। কানে বাজে যাবার আগে মুগ্ধর মাকে বলে যাওয়া দুটি শব্দ ‘আম্মু যাই’।
ছেলের পরনের জামা, ঘর, বিছানা, টেবিলগুলো এখনও আগের মতো। শুধু মুগ্ধর রুমে এলেই তার বাবা বুঝতে পারেন ছেলে নেই। মৃত্যুর তিনদিন আগে বাবা-মায়ের কাছ থেকে আন্দোলনে যাবার সম্মতি নিয়েছিলো মুগ্ধ।
মুগ্ধর বড় মীর মাহবুবুর রহমান দীপ্ত। দুজন ছিলেন বন্ধুর মতো। ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটি উখিয়ায় থাকা অবস্থাতেই তাকেই প্রথম জানিয়েছিলো আরেক ভাই স্নিগ্ধ।
মুগ্ধর মায়ের প্রথম সমুদ্র দর্শন; আর তখনই আসে ছেলের মৃত্যুর খবর। মুগ্ধকে তার পরিবার দাফন করতে চেয়েছিলো উত্তরায় দাদা দাদীর কবরের পাশে, কিন্তু নানা বাধায় সেটি আর তখন হয়নি।
টেবিলে রাখা একের পর এক মুগ্ধর ক্রেস্ট। জীবনে একটাই অপূর্ণতা ছিলো মুগ্ধর। আর তা হলো বিমান বাহিনীতে চাকরির চেষ্টা। উত্তরায় তার বাসার গলিটির নাম এখন মীর মুগ্ধ সড়ক। সেই গলিতে আর মুগ্ধর পা পড়ে না। তবে সবাই জানেন মুগ্ধ নামে এক বীর তরুণের কথা। অন্যায়ের প্রতিবাদে যে তরুণ তার জীবনটাই বাজি রেখেছিলো।