নিউজ ডেস্ক: ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়, এক দগদগে ক্ষতচিহ্ন। সেদিন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নামা তরুণ শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসে নির্মম হামলা। বুলেটের আঘাতে ঝরে যায় তাজা প্রাণ, আর সেই রক্তাক্ত পথে জন্ম নেয় এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ ছিলেন সেই দিনের সবচেয়ে মর্মান্তিক শিকার। তার বুক পেতে দেওয়া আত্মদান যেন পুরো দেশের ছাত্র-জনতার হৃদয়ে ক্ষোভের এমন এক বিস্ফোরণ ঘটায়, যা চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে অপ্রতিরোধ্য গণঅভ্যুত্থানের দিকে ঠেলে দেয়।
সেদিন পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় যে, সরকার দ্রুত ছয় জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করে। দেশের সব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ আসে। এমনকি, ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। কিন্তু কোনো দমন-পীড়নই থামাতে পারেনি দ্রোহের আগুন।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। সেদিনও বিক্ষোভকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রলীগ, আর পুলিশ ছিল মারমুখী অবস্থানে। রংপুরের বেরোবি ক্যাম্পাসের সামনেই ঘটে সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ শুরু করে। রংপুরে বেরোবির ১ নম্বর গেইট সংলগ্ন রাস্তায় ছিলেন আবু সাঈদ। সবাই যখন ছত্রভঙ্গ, পুলিশের সামনে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকেন এই তরুণ। রাস্তার উল্টো পাশ থেকে মাত্র ১৫ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে শটগান থেকে সরাসরি তার বুকে গুলি চালায় পুলিশ।