আর্কাইভ  শনিবার ● ২৬ জুলাই ২০২৫ ● ১১ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৬ জুলাই ২০২৫
মাইলস্টোন ট্রাজেডি: বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনো ভর্তি ৪০ জন, সঙ্কটাপন্ন ৫

মাইলস্টোন ট্রাজেডি: বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনো ভর্তি ৪০ জন, সঙ্কটাপন্ন ৫

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩

বিয়ে করেননি, শিক্ষার্থীরাই ছিল মাসুকার সন্তান

বিয়ে করেননি, শিক্ষার্থীরাই ছিল মাসুকার সন্তান

মাইলস্টোন ট্রাজেডি: আহত-নিহতের সর্বশেষ তালিকা দিলো সরকার

মাইলস্টোন ট্রাজেডি: আহত-নিহতের সর্বশেষ তালিকা দিলো সরকার

বিয়ে করেননি, শিক্ষার্থীরাই ছিল মাসুকার সন্তান

শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, বিকাল ০৬:০৭

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বিয়ে করেননি শিক্ষক মাসুকা বেগম। স্কুলই ছিল তার বাড়ি। শিক্ষার্থীরা ছিল আপন সন্তানতুল্য। 

সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুর্ঘটনাকবলিত যুদ্ধবিমান যখন স্কুলের ওপর আছড়ে পড়ে, তখনো তিনি ক্লাসে। ইংরেজি পড়াচ্ছিলেন। চারদিকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমরা ভয় পেও না। আমি আছি।’ এরপর তিনি একে একে শিক্ষার্থীদের বের করে আনতে থাকেন। একপর্যায়ে মাসুকা নিজেও আগুনে গুরুতর দগ্ধ হন। তার শরীরের ৮৫ শতাংশের বেশি পুড়ে যায়। পরে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই বীর শিক্ষক।

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিষ্পাপ শিশুদের জীবন বাঁচিয়ে সবার মাথার তাজ হয়ে উঠেছেন শিক্ষক মাসুকা বেগম। তিনি জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে আটকে পড়া শিশুদের একের পর এক তুলে আনেন পরম মমতায়। নিষ্পাপ ফুলগুলো বাঁচানোর তাগিদে মৃত্যুকে দুহাতে আলিঙ্গন করেন তারা। এই দুই মহান শিক্ষকের কাছে জাতি ঋণী হয়ে গেল। মহৎ হৃদয়ের অধিকারী না হলে পরের তরে জীবন উৎসর্গ করা যায়!

মাসুকার বাবা সিদ্দিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, মাসুকা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। ১৫ বছর আগে তার মা মারা যায়। শিক্ষকতা করেই সে আমাদের সবার দেখভাল করত। প্রতিমাসেই নিয়ম করে টাকা পাঠাত। সংসারের অন্যদের কথা ভেবে সে আর বিয়ে করতে চায়নি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, মেয়ের সঙ্গে তার শেষ কথা হয় ১০-১৫ দিন আগে। তখন বুঝতে পারিনি তার সঙ্গে আমার এটাই হবে শেষ কথা।

মাসুকার বোনের স্বামী খলিলুর রহমান বলেন, সোমবার বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই মাসুকার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তার মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও কেউ ফোন ধরছিল না। ঘণ্টাখানেক পর একজন ফোন ধরে। সে শুধু বলে মাসুকা আগুনে আহত হয়েছে। এরপর লাইন কেটে যায়। পরে তাকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া যায়। চিকিৎসকরা আগেই বলেছিলেন তার কণ্ঠনালিসহ শরীরের ৮৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। বাঁচার সম্ভাবনা কম। সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় আমাদেরকে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মাসুকার লাশ মঙ্গলবার তার বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি আশুগঞ্জের সোহাগপুরে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টায় সেখানেই তার লাশ দাফন করা হয়। তাকে শেষবার একনজর দেখতে স্বজনরা জড়ো হন। এ সময় গ্রামজুড়ে এক শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়।

দুর্ঘটনার সময় বীরোচিত ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে এ দুই শিক্ষককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।

মন্তব্য করুন


Link copied